লেখার শুরুতেই সেই গল্পটা মনে পড়ছে। যেখানে বাড়িতে প্রয়াত বাবার বাৎসরিক কাজ করতে এলে পুরুতমশাইকে ছেলে বলেছিল, “গত বার অনেক করেছি। এ বার এক ঘণ্টার মধ্যে শেষ করুন।”
কলকাতা লিগের অবস্থাও অনেকটা সে রকম! আইএফএ-ও যেন চায়, যেনতেন প্রকারে লিগটা শেষ করলেই চলবে। ভাবার দরকার নেই ছোট দলগুলো নিয়ে। বড় দলের স্বার্থ দেখলেই কাজ শেষ। কলকাতা লিগের জৌলুস কী ছিল আর কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে! রবিবার থেকে নামা শুরু হচ্ছে বড় দলগুলোর। অথচ মাত্র চার দিনের সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত। কেন পুরো সূচি প্রকাশ করা হবে না? কারণ দুটো। চূড়ান্ত অপেশাদারিত্ব। আর বড় ক্লাবের চোখ রাঙানি এড়িয়ে চলার চেষ্টা। বড় ক্লাবের সুবিধে মতো সূচি তৈরি করতে হবে যে!
ফুটবলার জীবনে ছোট দলে খেলার সময় ক্যালেন্ডারে বড় ম্যাচের দিনগুলো লাল কালি দিয়ে দাগ দিয়ে রাখতাম। দেড়-দু’মাস আগে থেকে মনের ভিতর ঢুকিয়ে নিতাম অমুক দিন ভাল খেলতেই হবে। এখনকার ছেলেদের কাছে সে সুযোগ কোথায়? ওরা নিজেদের মোটিভেট করবে কী ভাবে? আইএফএ সচিবের এ সব চিন্তাভাবনার সময় কোথায়? সুব্রত ভট্টাচার্যদের নিয়ে একটা উপদেষ্টা কমিটি হয়েছিল। যত দূর জানি, বাবলুদা একটা সূচিও তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেটা বাতিল হয়েছে। তা হলে কমিটি গড়ে লাভ কী?
জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে এ বারের প্রিমিয়ার লিগ শুরু হয়েছে। যার মূলপর্ব শুরু রবিবার। জুলাই থেকে এক-একটা দলকে ৪৭ দিনের মধ্যে খেলতে হয়েছে ১৫টা ম্যাচ। একটা ম্যাচ খেলার দু’দিন পরেই আর একটা। প্রত্যেক ছোট দলের এ নিয়ে অভিযোগ। কিন্তু কে শুনবে? ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, একটা ম্যাচের পর কমপক্ষে তিন দিন বিশ্রাম প্রয়োজন। ফুটবলাররা সেটা না পেয়ে ক্লান্ত। শারীরবিজ্ঞান বলছে, নব্বই মিনিট খেলার পর একজন ফুটবলারের আড়াই থেকে সাড়ে তিন কিলোগ্রাম ওজন কমে। সেই ‘রিকভারি টাইম’ ফুটবলাররা পাচ্ছে কোথায় এখানে? একটা ম্যাচের দু’দিন পরেই বর্ধমান, পাণ্ডুয়া, ক্যানিংয়ের বাড়ি থেকে তারা ছুটছে গয়েশপুর, শান্তিপুর, কল্যাণী, বারাসত। ক্লান্ত তো হবেই। অথচ ন্যূনতম বিশ্রাম নেই। এ ভাবে ফুটবলের উন্নতি হতে পারে না। বাংলা ফুটবলের সাপ্লাই লাইনটাই নষ্ট হয়ে যাবে। সর্বনাশ হয়ে যাবে ভারতীয় ফুটবলের! আবার ১৫টা ম্যাচ খেলে যারা মূলপর্বে গেল, এ বার তাদের খেলতে হবে আরও ১১টা ম্যাচ। সম্ভাব্য ফল, ক্লান্ত প্রতিপক্ষকে গোলের পর গোল মারবে বড় দলগুলো। হইচই হবে তৃতীয় সারির বিদেশিদের নিয়েও। কিন্তু আই লিগে ডেম্পো, চার্চিলের সামনে জয়ের তরী পার করতে পারবে না। আমাদের সময় ছোট দলগুলোর গাঁট লড়াই করে পেরোতে হত বলেই ময়দানের বড় দলগুলো রাজত্ব করত গোয়া, পঞ্জাব, কেরলের দলগুলোর বিরুদ্ধে। এখন বাংলার তুঘলকি ফুটবল প্রশাসনের জন্য ভিন রাজ্যের ক্লাবগুলোকেই চালকের আসনে দেখতে হচ্ছে।
আগামী বছরের শুরুতে সন্তোষ ট্রফি। সুভাষদা (ভৌমিক) টিডি। শিশির (ঘোষ) কোচ। বাংলার সাফল্য নির্ভর করবে কিন্তু এই ছোট দলগুলোর ফুটবলারদের ওপরই। জানি না, ওদের হাতে কত জন ফিট প্লেয়ার তুলে দিতে পারব আমরা। আইএফএ তো সেই ব্যবস্থাই রাখেনি! |