ফের জোরদার ঘোষণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার। বললেন, “যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার অবস্থা দেখেশুনেও আমরা তো আর অন্ধ হয়ে থাকতে পারি না।” স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, সিরিয়ার বাশার আল আসাদ-সরকারের বিরুদ্ধে সীমিত-আক্রমণের সিদ্ধান্ত থেকে এক চুলও সরছেন না তাঁরা। তবে সিরিয়া কখনও ইরাক বা আফগানিস্থান হবে না।
যদিও সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে সামনের সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেসে ভোটাভুটির উপর।
গত এক সপ্তাহ ধরে আমেরিকা বারবারই বলে আসছিল, আসাদ যে সিরিয়ার মানুষের উপর রাসায়নিক হানা ঘটিয়েছিলেন, তার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে ওবামা-সরকারের কাছে। ভবিষ্যতে যাতে আসাদ-সরকার আর এ কাজ করতে না পারে, সে দিকে নজর রাখতেই ‘সীমিত-আক্রমণের’ পথে হাঁটবে আমেরিকা। কিন্তু দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-ধন্দ রয়েই গিয়েছিল। এক দিকে ব্রিটেন আমেরিকার পাশ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। সিরিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে রাশিয়ার প্রতিনিয়ত হুমকি। আমেরিকার মানুষও যুদ্ধ চায় না। আবার শোনা যাচ্ছে সিরিয়ার আসাদ-বিরোধী বিদ্রোহীরা আল কায়দা মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী। আজ সেই সিদ্ধান্তহীনতা থেকে বেরিয়ে এসে ওবামা বললেন, “পৃথিবীর অন্য একটা প্রান্তের দেশ হলেও রাসায়নিক হানার মতো ঘটনা উপেক্ষা করা যায় না। তাই সরকার কিংবা বিরোধী, কংগ্রেসের সব সদস্যকে ডেকে পাঠিয়েছি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটা শান্তিপূর্ণ দুনিয়া দিয়ে যেতে চাই আমরা।” সবটাই অবশ্য এখনও নির্ভর করছে সামনের সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেসের ভোটাভুটির উপর। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত সেখানেই নেওয়া হবে। ‘সীমিত-আক্রমণের’ ব্যাখ্যা আগেও দিয়েছিলেন ওবামা। আজ ফের বলেন, “সিরিয়ার মাটিতে পা রাখবে না আমেরিকা। যাই হোক না কেন, সীমিত ভাবেই করা হবে। এবং সেটাও সময়-সুযোগ-পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে। সিরিয়া-সরকার যাতে আর তার দেশের মানুষের উপর রাসায়নিক হানা না ঘটাতে পারে, সেটুকু দেখাই শুধু আমাদের লক্ষ্য।” একই সঙ্গে এ-ও বলেন, “সিরিয়া ইরাক কিংবা আফগানিস্থান হবে না।”
আমেরিকা যুদ্ধের দামামা বাজানোর পর থেকে বারবারই ইরাক-আফগানিস্থানের প্রসঙ্গ উঠে আসছিল আন্তর্জাতিক মহলে। জল্পনা ফের একটা ইরাক-আফগানিস্থান হতে চলেছে। এমনকী মার্কিনরাও আতঙ্কিত আসন্ন ‘সীমিত যুদ্ধের’ কথা ভেবে। আজ ওবামার মুখেও শোনা গেল সে কথা। বললেন, “আমি জানি আমেরিকার মানুষ রণক্লান্ত, যদিও ইরাকের যুদ্ধ দীর্ঘদিন শেষ হয়ে গিয়েছে। আর আফগানিস্থান থেকেও সেনা সরে আসছে। তবু দেশের মানুষের কথা ভেবেই অন্য দেশের গৃহযুদ্ধে আমরা নাক গলাচ্ছি না।” কিন্তু তাঁর কথায়, কিছুই যদি না করা হয় পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। প্রথমত সিরিয়ায় ফের রাসায়নিক হানা ঘটতে পারে। সন্ত্রাসবাদীদের হাতে রাসায়নিক অস্ত্র চলে গেলে আমেরিকাও ফের জঙ্গি-নিশানা হয়ে উঠতে পারে। সে ক্ষেত্রে অন্য দেশগুলো সন্ত্রাসের হাত থেকে বাঁচবে না।
তবে বিশেষজ্ঞ মহলে অন্য হাওয়াও বইছে। সদ্যসমাপ্ত জি-২০ সম্মেলনে সিরিয়ায় সেনা আক্রমণ নিয়ে সে অর্থে সমর্থন পাননি ওবামা। রিপাবলিকানরাই শুধু নয়, ডেমোক্র্যাটরাও অনেকেই ওবামার সমর্থনে নেই। এ অবস্থায় আশার আলো দেখাচ্ছে সেনেট কমিটি। গত ৪ সেপ্টেম্বর ওবামার সিরিয়া প্রস্তাবকে ১০-৭ ভোটে সমর্থন জানায় সেনেট কমিটি। কিন্তু আশঙ্কা, ওবামা যদি মার্কিন কংগ্রেসের ভোটে হেরে যান, তাঁর প্রেসিডেন্টের গদিতেও বড়সড় আঘাত পড়বে। |