পানীয় জলের অভাব নিয়ে নবদ্বীপের বিভিন্ন ওয়ার্ডের নাগরিকদের ক্ষোভ দীর্ঘ দিনের। সেই সমস্যা সমাধানে নবদ্বীপ পুর এলাকায় কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ভিআইডিএসএসএমটি’ প্রকল্পে ৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্পূর্ণ নতুন এক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। নতুন এই প্রকল্পে ভূগর্ভস্থ জলের বদলে গঙ্গার জলকেই পরিশুদ্ধ করে নাগরিকদের দেওয়া হবে।
সাড়ে তিন বর্গমাইল এলাকার ২২০০ করদাতা নিয়ে ১৮৬৯ সালে গড়ে উঠেছিল নবদ্বীপ পুরসভা। সাড়ে এগারো বর্গ কিলোমিটার আয়তন আর ১ লক্ষ ২৬ হাজার জনসংখ্যা বিশিষ্ট আজকের নবদ্বীপের সঙ্গে সেই নবদ্বীপের কোনও মিল খুঁজে পাওয়া ভার। কিন্তু পুর এলাকার বাসিন্দাদের পানীয় জলের প্রশ্নে আধুনিক নবদ্বীপ আবার অতীতের পথেই হাঁটতে চলেছে। তবে ভিন্ন পদ্ধতিতে।
পানীয় জলের উৎস হিসাবে আধুনিক নবদ্বীপের সঙ্গে প্রায় দেড়শো বছর আগের নবদ্বীপকে এক সুতোয় বেঁধে ফেলেছে গঙ্গাই। পুরসভার নথি বলছে, ১৮৬৯ সালে নবদ্বীপের বেশির ভাগ মানুষ গঙ্গার জলকে পানীয় জল হিসাবে ব্যবহার করতেন। পুরসভার ব্যয়ে ধীরে ধীরে শহরে ইঁদারা খনন শুরু হয়। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় ছিল সামান্য। নদীর জল খাওয়ার কারণে শহরে জলবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ছিল। ‘কালচারাল রিভিউ’ পত্রিকা থেকে জানা যায়, ১৮১৭ সালে নবদ্বীপে কলেরা ছড়িয়েছিল। পুরসভার নথি জানাচ্ছে, ১৮৮৪, ১৮৯৬, ১৯০০ এবং ১৯৪৬ সালে নবদ্বীপে কলেরার আক্রমণ ঘটেছিল। |
১৯২৪ সালে নবদ্বীপ পুরসভার বাজেটে গভীর নলকূপ বসানো এবং জলাধার নির্মাণের জন্য ২৪০ টাকা ধার্য করা হয়। ১৯৩২ সালে তা চালু হয়। এর পর পুরসভা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন সময়ে কয়েকটি ওভারহেড জলাধার তৈরি করেন। গভীর নলকূপের সাহায্যে মাটি থেকে জল তুলে শহরের বিভিন্ন এলাকায় তা সরবরাহ করা হয়। পরবর্তী কালে এই ব্যবস্থার কিছু বদল ঘটে। নলকূপের সাহায্যে ভূগর্ভ থেকে জল তুলে তা সরাসরি পাইপলাইনের সাহায্যে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। যদিও তাতেও মিটছে না চাহিদা। সেই জন্যই কি বদল সরবরাহ ব্যবস্থার?
নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, “ভূগর্ভস্থ জলের ভাঁড়ারে ক্রমশ টান পড়ছে। তাই নদীর জলকে আমরা পরিশোধন করে ব্যবহার করব। নতুন প্রকল্পের জন্য প্রাচীন মায়াপুর বসাকপাড়ায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি হবে।” নবদ্বীপ পুরসভার জল বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পুরপিতা মিহিরকান্তি পাল বলেন, “বর্তমানে ১৩টি পাম্পহাউস রয়েছে। এক-একটি পাম্পহাউস থেকে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার লিটার জল সরবরাহ করা হয়। প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাড়িতে পুরসভা পানীয় জল সরবরাহ করে।”
তবুও শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের সরবরাহ নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। পুরসভার ২৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের গোপালচন্দ্র ঘোষ বলেন, “১৬, ২৩, ২০, ১৮ নং ওয়ার্ডগুলির বহু এলাকায় জল নেই। আমাদের পাম্পহাউসের গল্প শুনে কী লাভ!” নবদ্বীপ পুরসভার জল বিভাগের বাস্তুকার তাপস মণ্ডল বলেন, “গত কয়েক বছরে নতুন এবং সংস্কার মিলিয়ে ১৮ কিলোমিটার পাইপলাইন পাতা হয়েছে। আরও চারটি পাম্পহাউস তৈরি হয়ে আছে। বিদ্যুৎ সংযোগ পেলেই সেগুলি সরবরাহের কাজ শুরু করবে।” নবদ্বীপের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা বলেন, “৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় তিনটি জলাধার হবে। একটি প্রতাপনগরের বঙ্গবাণীতে, একটি কপালিপাড়ায় পুরসভার লেকের ধারে, আর একটি হবে শ্মশানঘাটে। ২৯.৭ মিলিয়ন লিটার জল ধরবে এর প্রতিটিতে। প্রথম পর্বে ৩৩ কোটি টাকা এসেছে। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাটি পরীক্ষার কাজ চলছে।” |