সম্পাদকীয় ১...
মরাঠি বিপ্লব
র্ডিন্যান্স পাশ হইবার সাত দিনের মধ্যে ধরপাকড় শুরু হইবার দৃষ্টান্ত এ দেশে অভূতপূর্ব না হইলেও বিশেষ সুলভ নহে। প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক চাপ কিংবা বাধ্যবাধকতা না থাকা সত্ত্বেও এমন প্রশাসনিক দ্রুতমনস্কতা তো ভাবাই যায় না। কিন্তু ইহা ছাড়াও মহারাষ্ট্রে গত সপ্তাহে পাশ হওয়া অর্ডিন্যান্সটি অনুযায়ী যে ভাবে এই সপ্তাহে দুই ব্যক্তি গ্রেফতার হইল, সেই সংবাদটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সদ্যোজাত অন্ধ কুসংস্কার দমন আইন মোতাবেক অভিযুক্ত হইলেন দুই ভণ্ড ‘ধার্মিক’, বিভিন্ন তুকতাক দ্বারা তাঁহারা এড্স ও ক্যানসারের মতো মারণব্যাধি নিরাময়ের লক্ষ্যে মানুষ ঠকাইবার ব্যবসা চালাইতেছিলেন। পঁচিশ বছরের সাইদ খান লিয়াকত খান এবং চল্লিশ বছরের আমিরুদ্দিন আবদুল লতিফ নান্দেদ অঞ্চলে গত কিছু মাস যাবৎ এমনই ‘চিকিৎসাকেন্দ্র’ খুলিয়া বসিয়াছিলেন। দরিদ্র এই অঞ্চলে ইঁহারা তুকতাক জড়িবুটির পরিবর্তে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত ফি হাঁকিতেছিলেন। ভারতীয় দণ্ডবিধির প্রতারণাবিরোধী ৪২০ নম্বর ধারা এবং ১৯৫৪ সালের ড্রাগ ও জাদু-নিরাময় বিরোধী আইনের সঙ্গে নূতন এই কুসংস্কারবিরোধী আইনটি অনুসারেও তাঁহারা অভিযুক্ত হইলেন। ভারতের মতো দেশে যেখানে অন্ধ সংস্কারের রমরমা অপ্রতিরোধ্য, অসৎ ‘সাধু’গিরির প্রতি মানুষের ভক্তি ও বিশ্বাস সতত লেলিহান, জনসমর্থন ও জনভোটের তাগিদে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও ইঁহাদের দহরম মহরম সর্বজনমান্য সত্য, সুতরাং রাজনীতির টিকি তাঁহাদের পীঠস্থানে দরগায় মন্দিরে সেবাস্থলে শক্ত গিঁটে বাঁধা— সেখানে এমন একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপের গুরুত্ব বৈপ্লবিক। মহারাষ্ট্রই ভারতে প্রথম এই ‘বিপ্লব’ সাধন করিতে পারিল।
ইহার পিছনে সবর্বৃহৎ কৃতিত্ব সম্ভবত সদ্যোনিহত সমাজকর্মী নরেন্দ্র দাভলকরের। আঠারো বৎসর ধরিয়া এই সংস্কারবিরোধিতার যুদ্ধ তিনি জারি রাখিয়াছিলেন, কেবল ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্তরে নহে, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্তরেও। অদম্য সংস্কারস্পৃহা তাঁহাকে রক্ষণশীল সমাজ ও সেই সমাজ-চারিত রাজনীতির কাছে কতখানি বিপজ্জনক করিয়া তুলিয়াছিল, আততায়ীর গুলি তাঁহার দেহ ফুঁড়িয়া যাইবার আগে তাহা সম্যক বোঝা যায় নাই। কিন্তু তাঁহার এই অকালনিধনে রাজ্যে যে প্রবল অস্থিরতা তৈরি হইল, তাহাই পরোক্ষে এত গুরুত্বপূর্ণ অর্ডিন্যান্সটির প্রেক্ষিত নির্মাণ করিল। মুম্বই-সহ রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে নাগরিক সমাজ যখন হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল, তখনই এত দিনের বিতর্কিত অধ্যাদেশ পাশ হইল। দাভলকরের প্রতিষ্ঠান মহারাষ্ট্র অন্ধ শ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতি বহু দিন যাবৎ ধর্ম-প্রতারকদের সন্ধান করিয়া ফিরিতেছে, হিন্দু মুসলমান সকল সম্প্রদায়ের মধ্যেই। নান্দেদের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধেও তাহারা প্রশাসনকে সক্রিয় সহায়তা করিতেছে। কোনও ব্যক্তি যে বিশ্বাসে উদ্দেশ্যে উদ্যোগে অটল থাকিয়া একাই এই জগদ্দল সমাজের কতটা পরিবর্তন সাধন করিতে পারেন, তাহার বরেণ্য দৃষ্টান্ত দাভলকর।
মহারাষ্ট্রে এই কাজ সহজসাধ্য ছিল না। সে রাজ্যে যুক্তিবাদী সংস্কারের ধারাটি প্রবল, সত্য। কিন্তু (‘অন্ধ)বিশ্বাসের ঐতিহ্যও সেখানে যথেষ্ট দৃঢ়। অবশ্য একটি সংশয় থাকিয়াই যায়। অভিযুক্তরা মুসলিম না হইয়া হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত হইলেও এই গ্রেফতার একই রকম দ্রুত ও নিষ্কণ্টক হইত তো? এই ঘটনায় শিবসেনার দৃষ্টিকটু উল্লাসের বহর দেখিয়াই সংশয় আরও প্রবল হইয়া উঠে। তবে আইন পাশ করিয়া তাহার প্রয়োগের উদাহরণ যখন ঘটিয়াই গেল, আশা থাকিল শুভবোধসম্পন্ন প্রগতিশীল বিধিটিকে সমদৃষ্টিতে প্রয়োগ করিবে মহারাষ্ট্র রাজ্য প্রশাসন। আর ইত্যবকাশে, পশ্চিমবঙ্গের মতো প্রদেশগুলি না হয় খানিক আত্মানুসন্ধান করুক, কেন কেহ পারে এবং কেহ পারে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.