সমস্যা মিটবে কি, প্রশ্ন বিড়ি শ্রমিকদের
ভোটে নতুন কিছু নেই। নতুন বা পুরনো মুখের একজন করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। কিন্তু তাতে তাঁদের কষ্ট লাঘব হবে কি না বা দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা মিটবে কি না, জানেন না হাজার পাঁচেকের বেশি বিড়ি শ্রমিক।
বিড়ি শ্রমিকদের বাস সবচেয়ে বেশি দুবরাজপুর পুরসভার ৭, ৮, ১০ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডে। পরিসংখ্যান বলছে, ওই ওয়ার্ডগুলিতে বসবাসকারি মোট ভোটারদের প্রায় ৬০ শতাংশই বিড়ি শ্রমিক। মূলত যাঁদের ভোটের উপরে নির্ভর করছে ওই ওয়ার্ডগুলিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা কাউন্সিলরদের ভাগ্য, তাঁদের জন্য তেমনভাবে ভাবে কখনই কেউ এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ অধিকাংশ বিড়ি শ্রমিকদের। তাঁদের ক্ষোভ, সংসার চলানোর খরচ জোগাড় করতে দিনে ১২ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে করতে হয়। অথচ তাঁদের একটা বড় অংশের সরকার স্বীকৃত পরিচয়পত্র নেই। যেটা না থাকলে যে কোনও ধরনের সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকে যেতে হবে। পুরসভা না সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলররা কেউই এ ব্যাপারে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিড়ি শ্রমিক ওলি মহম্মদ এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ডের জামাল খানরা বললেন, “ওই পরিচয়পত্র আগে দুবরাজপুর ব্লকের ‘লেবার ওয়েলফেয়ার’ আধিকারিকদের মাধ্যমেই পাওয়া যেত। সেই সময় বিভিন্ন ওয়ার্ডের বেশ কিছু বিড়ি শ্রমিক ওই পরিচয়পত্র পেয়েছেন। ২০০৮ সালের পর থেকে সেটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন সরকার স্বীকৃত পরিচয়পত্র পেতে গেলে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান গিয়ে করাতে হয়।” তাঁদের আক্ষেপ, “এই গরিব মানুষগুলোর পক্ষে এত দূরে গিয়ে সেখানে থেকে ওই পরিচয়পত্র সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। ফলে গুরুত্বপূর্ণ সেই পরিচয়পত্র নেই এই পেশায় যুক্ত বহু শ্রমিকের। যাঁদের আবার অধিকাংশই মহিলা শ্রমিক।”

আজও মেলেনি পরিচয়পত্র। দুবরাজপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
একই বক্তব্য বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনের এই শাখার দায়িত্বে থাকা জেলা সহ-সম্পাদক শেখ ইমতিয়াজেরও। তিনি বলেন, “বিড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ শ্রমিক এক সময় হয় শ্বাসকষ্টে বা যক্ষ্মায় ভোগেন। টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় বাসস্থানটুকুও করতে পারেন না। ওই ওয়ার্ডগুলিতে বসবাসকারি অনেকের বাড়িতেই বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। কিন্তু পরিচয়পত্র ছাড়া সেগুলি পাওয়া সম্ভব নয়। অথচ পুরসভার তরফে কোনও সাহায্য নেই।” জেলা শ্রমদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পরিচয়পত্র দেওয়া হয় বিড়ি শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত একটি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অধীনে। কেন্দ্রীয় শ্রমদফতরের মাধ্যমে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রাজ্য সরকারের দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে এই কাজটি করা হলেও সেটা এখন হয় না।
কী কী সরকারি সাহায্য পাওয়া যায় ওই পরিচয়পত্র থাকলে? শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহিলা বিড়ি শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ভাতা থেকে ছেলেমেয়েদের পড়ার বৃত্তি, বাড়ি তৈরির জন্য ৫০,০০০ টাকা অনুদান (রাজ্য দেয় ১০ হাজার টাকা) থেকে চিকিৎসা ভাতা, এমনকী সম্পূর্ণ নিখরচায় বাড়িতে বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে কিছু দিন হল সিউড়ির হাটজন বাজারে কেন্দ্রীয় শ্রম দফতরের একটি কার্যালয়ে এই কাজটি সপ্তাহে একদিন করা হচ্ছে বলে বিড়ি শ্রমিকদের মুর্শিদাবাদ যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বিদায়ী পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে অবশ্য বলেন, “এখন এখান থেকে ওই পরিচয়পত্র দেওয়া হয় না বলে, কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে।” তাঁর আশ্বাস, “ইতিমধ্যেই আইএনটিটিইউসি-র জেলা সম্পাদক বিকাশ রায়চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেছি। ক্ষমতায় এলে সমস্যা মিটবে।”
যদিও এই অশ্বাসবাণীকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে নারাজ বিড়ি শ্রমিক রহিমাবিবি, তাসমিনা বিবি, মমতাজ বিবি, শেখ মুরসেলিমরা। তাঁরা বললেন, “আমরা যেখানে ছিলাম সেখানেই রয়েছি। সামান্য টাকার জন্য সারাদিন খাটতে হয়। তবে ১০০০ বিড়ি বেঁধে মাত্র ৮৩ টাকা পাই। তার উপর পাতা খারাপ হলে মালিককে দেওয়ার আগে নিজের টাকায় পাতা কিনে বিড়ি তৈরি করে দিলে সেটুকুও আয়ও থাকে না। এর সঙ্গে না আছে ভাল মাথা গোঁজার ঠাই। আমাদের বাড়ির ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া সখ কি আর পূরণ হবে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.