বন্যা দুর্গত এলাকা থেকে বাড়ির আসবাবপত্র নিয়ে ডিঙিতে চেপে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময় ফুলহারের জলে ভেসে গিয়েছে এক যুবক। মালদহের রতুয়ার জলজালিটোলা এলাকায়। বুধবার সন্ধ্যায় ওই ঘটনার পর বৃহস্পতিবারও নিখোঁজ যুবকের সন্ধান মেলেনি। তাঁর খোঁজে ফুলহারে তল্লাশি চালায় পুলিশ ও বিপর্য়য় মোকাবিলা দল। পুলিশ জানিয়েছে, রতুয়ার ত্রিলোচনটোলার বাসিন্দা নিখোঁজ বেদান্ত মন্ডলের সঙ্গে ছিল পরিবারের ৩ জন। ভরা ফুলহারে স্রোতের টানে ডিঙিটি উল্টানোর পর তিন জন সাঁতার কেটে পারে উঠলেও বেদান্তের খোঁজ মেলেনি। এ দিনও অসংরক্ষিত এলাকায় বিপদসীমার উপর দিয়েই বইছে ফুলহার নদী। জলস্তর না কমায় মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় জলবন্দি হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়ার ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫০ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা। কিন্তু গত দেড়মাস ধরে ওই বাসিন্দারা জলবন্দি হয়ে থাকলেও ত্রাণ মিলছে না বলে অভিযোগ। |
হরিশ্চন্দ্রপুরে ফব বিধায়ক তজমুল হোসেন বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সামান্য কিছু বাসিন্দাকে ত্রিপল দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে বিস্তীর্ণ এলাকা জলবন্দি। ত্রাণ দূরের কথা নৌকার ব্যবস্থাও হয়নি। খাদ্যাভাবে গবাদি পশুদেরও মৃত্যু হচ্ছে।” সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার (মহানন্দা) সুজিত কুমার বসু বলেছেন, “ফুলহারে জল বাড়ছে। আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি।” সেচ দফতর জানিয়েছে, এদিন দুপুরে ফুলহারের উচ্চতা ছিল ২৭.৮৩ সেন্টিমিটার। যা অসংরক্ষিত এলাকায় লাল সীমা ও সংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সীমার থেকে ৪০ সেন্টিমিটার বেশি। ২৪ ঘন্টায় ফুলহারে জল ২৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে।
দেড়মাস আগেই ফুলহারের জলে প্লাবিত হয় হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের ইসলামপুর ও দৌলতনগর ও রতুয়া-১ ব্লকের বিলাইমারি ও মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ন এলাকা। জল সামান্য কমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগেই এলাকাগুলি ফের প্লাবিত হয়ে পড়ে। ত্রাণ এবং নৌকার প্রসঙ্গে মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণকুমার বলেন, “অভিযোগ ঠিক নয়। রতুয়ায় ত্রান বিলি করার কাজ শুরু হয়েছে। নৌকাও দেওয়া হয়েছে। হরিশ্চন্দ্রপুরেও দুর্গতদের দ্রুত ত্রাণ বিলি-সহ নৌকার বন্দোবস্ত হচ্ছে।”
অন্য দিকে, গঙ্গার জল চরম বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। এতে মানিকচক, কালিয়াচক ২-৩ ও রতুয়া ১ নম্বর ব্লকে ৯০ টি গ্রামের বন্যা দুর্গতের সংখ্যা দুই লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এদিন পর্যন্ত বন্যা কবলিত জেলার চারটি ব্লকের ৯০টি গ্রামে ২ লক্ষাধিক মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছে। গঙ্গার জল গত ২৪ ঘন্টার ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫. ৯৪ মিটারে। ২০০৩ সালের পর যা সর্বোচ্চ। জলে মানিকচকের ভূতনির কালুটোনটোলারা চতুর্থ বালির বস্তার বাঁধ বসে গিয়েছে। হাড্ডাটোলায় বাঁধের কিছুটা অংশ ধসে গিয়েছে। সেচ দফতরের নিবার্হী বাস্তুকার (গঙ্গা) অমরেশ কুমার সিংহ বলেন, “ভূতনির বালির বাঁধ যে কোনও সময় ভেঙে যেতে পারে। বালির রিং বাঁধকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বিহারের ভাগলপুর, মুঙ্গের গঙ্গার জল স্থিতাবস্থায় পৌঁছেছে। এতে দুইদিন পর থেকে জল কমার সম্ভাবনা রয়েছে।”
ত্রাণ বিলি নিয়ে সিপিএম, তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেস একে অপরের বিরুদ্ধে দলবাজির অভিযোগ তুলেছে। মানিকচকের বিধায়ক তথা তৃণমূল কংগ্রেসর জেলা সভানেত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “মানিকচকে সিপিএমের গ্রাম পঞ্চায়েতে সবর্দলীয় কমিটি না করেই বেছে বেছে সিপিএম কর্মী সমর্থকদের ত্রাণ বিলি করা হচ্ছে।” মানিকচকের সিপিএমের লোকাল সম্পাদক শ্যামল বসাকের পাল্টা অভিযোগ, “ত্রাণ নিয়ে তৃণমূলই দলবাজি করছে। তৃণমূলই ত্রাণ বিলি নিয়ে সবর্দলীয় কমিটি করতে দেয়নি।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস প্রশাসনকে দিয়ে বন্যার রিপোর্ট তৈরি করছে। সেখানে তৃণমূল নিজেদের এলাকায় বেশি নজর দেওয়ার চেষ্টা শুরু করছে। সব জায়গায় সমান ত্রাণ যাচ্ছে না।” জেলাশাসক ত্রাণ নিয়ে দলবাজির অভিযোগ খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন। |