স্কুল চলাকালীন নিজের ঘরে ডেকে তৃতীয় শ্রেণির দুই আদিবাসী ছাত্রীকে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগে এক প্রধানশিক্ষককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বুধবার রাতে মালদহের বামনগোলা থানার পুলিশ উধইল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই প্রধানশিক্ষক নিত্যানন্দ মণ্ডলকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার ধৃত প্রধানশিক্ষককে মালদহ আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
মালদহের পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এক ছাত্রীর মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই প্রধানশিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।” যদিও এ দিন আদালতে অভিযুক্ত শিক্ষক নিত্যানন্দবাবু দাবি করেছেন, “স্কুলে পড়াশুনা করে না, এমন বহু ছাত্রছাত্রীর অভিভাবকেরা প্রায়ই নানা ধরনের শংসাপত্র দাবি করছিলেন। আমি তাদের কথা মতো ভুয়ো শংসাপত্র দিতে অস্বীকার করায় কিছু অভিভাবক চক্রান্ত করে আমাকে ফাঁসিয়েছে। এক জনকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করানো হয়েছে।”
প্রধানশিক্ষকের অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান স্বপন মিশ্র। এ দিন তিনি বলেন, “পুরো ঘটনার যথাযথ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) তৃপ্তি গুহও বলেন, “বিভিন্ন এলাকা থেকেই আমাদের কাছে খবর আসছে যে, শংসাপত্র দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে প্রধানশিক্ষকদের। এই ঘটনার পিছনেও সেই ধরনের কোনও ঘটনাই রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।”
বামনগোলার উধইল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১৫০। শিক্ষক রয়েছেন তিন জন। গত তিন বছর ধরে নিত্যানন্দবাবু এই স্কুলের প্রধানশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এই অভিযোগের পরে স্কুলের অন্য শিক্ষক-কর্মীদের সঙ্গেও পুলিশ এবং সংসদের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারেরা কথা বলা শুরু করেছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে কেউই প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না।
এ দিন ধৃত প্রধানশিক্ষক নিত্যানন্দ মণ্ডলকে আদালতে তোলার আগে পুলিশ মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য তৃতীয় শ্রেণির দুই ছাত্রীকে মালদহে নিয়ে এসেছিল। ওই ছাত্রীরা তাঁদের জানায়, প্রধানশিক্ষকের আচরণে তারা আপত্তি করলে তিনি স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। সেই ভয়েই তারা প্রথমে কাউকে কিছু জানায়নি। পরে বাধ্য হয়েই পরিবারকে ঘটনাটি জানায় বলে দাবি। অভিযোগকারী এক ছাত্রীর মা এ দিন বলেন, ‘‘মেয়ের মুখে প্রধানশিক্ষক যৌন হেনস্থা করছেন শোনার পরই গ্রামবাসীদের পুরো ঘটনা বলেছিলাম। গত বুধবার দুপুরে স্কুল চলাকালীন তিন-চারশো গ্রামবাসী স্কুলে চড়াও হয়ে প্রধানশিক্ষককে ঘেরাও করেও রাখেন। প্রায় তিন ঘণ্টা পরে বামনগোলা থানার পুলিশ স্কুলে গিয়ে তাঁকে নিয়ে যায়।” ওই ছাত্রীর মায়ের কথায়, “একজন শিক্ষক কি করে এমন কাজ করতে পারেন, তা ভাবতেই পারছি না। রাতেই পুলিশে অভিযোগ করেছিলাম।” |