কোনও কলেজের অধ্যক্ষ বা অধ্যক্ষাকে মারধরের অধিকার পড়ুয়াদের নেই বলে মন্তব্য করে নিগ্রহকারীদের লাঠিপেটা করার নিদান দিয়েছেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। এ বার ইটাহারের মেঘনাদ সাহা কলেজের অধ্যক্ষা, অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীকে মারধরের ঘটনায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানাল রাজ্য মানবাধিকার কমিশনও। ওই নিগ্রহের ব্যাপারে জেলাশাসককে দু’সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলেছে তারা। সেই সঙ্গে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে পুলিশ সুপারেরও।
ওই কলেজের অধ্যক্ষা স্বপ্না মুখোপাধ্যায় বুধবার কমিশনের চেয়ারম্যান, প্রাক্তন বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে মারধরের ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ জানান। কমিশন-প্রধান বৃহস্পতিবার বলেন, “ওঁদের অভিযোগ পাওয়ার আগেই সংবাদমাধ্যমের খবরের ভিত্তিতে ওখানকার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তাঁদের রিপোর্ট এলেই তা পর্যালোচনা করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্বপ্নাদেবী বুধবার কমিশনে জানান, ২৭ অগস্ট মারধরের ঘটনার পর থেকে তাঁরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। এফআইআরে যাদের নাম রয়েছে, পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেনি। কমিশনের চেয়ারম্যান এ দিন বলেন, “রিপোর্ট পর্যালোচনার সময় এই বিষয়টিও মাথায় রাখা হবে।”
মেঘনাদ সাহা কলেজে মারধরের ঘটনায় আঙুল উঠেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দিকে। ওখানে হামলার কয়েক দিন পরেই সন্দেশখালির কালীনগর কলেজের অধ্যক্ষ নিগৃহীত হন। তাতে অভিযুক্ত এসএফআই। ইটাহারে কেউ গ্রেফতার না-হলেও কালীনগরে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। ধৃতেরা এখন জেল-হাজতে। দু’টি কলেজে একই ধরনের ছাত্র-দৌরাত্ম্যের ঘটনায় দু’মুখো ভূমিকার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
এসএফআইয়ের অভিযোগ, সে-দিন কিছু বহিরাগত তৃণমূল নেতা ও কালীনগর কলেজের টিএমসিপি-র সদস্যেরা রড, লাঠি, সাইকেলের চেন নিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছিল। তার ভিডিও ফুটেজও দেখায় এসএফআই। সংগঠনের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি প্রিয়াঙ্কা কাঞ্জিলাল বলেন, “আমরা জানতে চাই, অধ্যক্ষকে কারা মেরেছে। কিন্তু পুলিশের উপরে আমাদের আস্থা নেই। তাই বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই।” প্রিয়াঙ্কা আরও জানান, ধৃত এসএফআই-কর্মীদের কয়েক জন প্রথম বর্ষের অনার্স পরীক্ষা দিয়েছেন। জেলে থাকায় তাঁরা পাশের একটি বিষয়ের পরীক্ষা দিতে পারেননি। অন্যান্য পরীক্ষা তাঁরা যাতে জেলেই দিতে পারেন, তার জন্য আদালতে আর্জি জানানো হয়েছে।
এসএফআইয়ের অভিযোগের ব্যাপারে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা বলেন, “আমি ওই ভিডিও ফুটেজ দেখেছি। তাতে কোথাও দেখা যাচ্ছে না যে, আমাদের সংগঠনের সদস্যেরা অধ্যক্ষকে মারছে। এসএফআইয়ের কাছে তেমন কোনও ফুটেজ থাকলে আমাদের দিক। তা হলে আমরা ওদের মতো দোষীদের লুকিয়ে রাখব না। বহিষ্কার করব।” বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য এসএফআই যে-দাবি জানিয়েছে, সেই বিষয়ে শঙ্কুদেবের মন্তব্য, “অপরাধের তদন্ত কী ভাবে হবে, অপরাধীদের কাছ থেকে সেটা শিখব না। তা ছাড়া শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না!”
কলেজে কলেজে শিক্ষক-নিগ্রহের প্রতিবাদে এবং পদোন্নতি, বর্ধিত বেতনের বকেয়া, অবসরের বয়স বাড়ানো ইত্যাদি দাবিতে বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্নায় বসে শিক্ষক সংগঠন আবুটা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তরুণ নস্কর বলেন, “ক্লাস নিয়েই অবস্থানে বসেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।” দাবিদাওয়া নিয়ে এ দিন জমায়েত করে আংশিক সময়ের শিক্ষক সংগঠন কুটাব-ও।
|