সুতোর উপরে ঝুলছে ফরাক্কার লাগোয়া মালদহ ও মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ এলাকার ভাগ্য। ফরাক্কায় গঙ্গার জলস্তর ফুলেফেঁপে চরম বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলেছে। সেই জলে ওই অঞ্চলের গ্রামগুলি যে-কোনও মুহূর্তে প্লাবিত হতে পারে। বর্ষায় ফরাক্কার জলস্তর বাড়লে এমন বিপদ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই সরাসরি চিঠি লিখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে।
সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার মহাকরণে বলেন, “ফরাক্কার জলস্তর আর ২-৩ মিটার বাড়লেই সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকার বানভাসি হওয়ার বিপদ ঠেকানো যাবে না।” বিহার-উত্তরপ্রদেশের বন্যার জল যে-ভাবে হুহু করে গঙ্গায় পড়ছে এবং মালদহ-মুর্শিদাবাদে পাড় যে-ভাবে ভেঙেই চলছে, তাতে বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। সেচ দফতর সূত্রের খবর, ফরাক্কায় জলের বিপদসীমা ২৫ মিটার ধার্য করা আছে। জল ওই সীমা ছুঁলেই সতর্কতা জারি করা হয়। এখন জলস্তর ২৬ মিটার ছুঁইছুঁই। এটা ‘একস্ট্রিম ডেঞ্জার লেভেল’ বা চরম বিপদসীমা।
এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতেও গঙ্গা-পদ্মার ভাঙন রোধে কেন্দ্রীয় সাহায্য মিলছে না বলে অভিযোগ তুলেছে রাজ্য। ভাঙন রোধে টাকার সংস্থান কী ভাবে হবে, তা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ফের টানাপোড়েনের সূচনা হয়েছে। এই খাতে টাকার জন্য দরবার করতে আগামী সপ্তাহেই রাজীববাবুর দিল্লি যাওয়ার কথা।
ফরাক্কার পরিস্থিতি এতটা ঘোরালো হয়ে উঠল কেন?
সেচমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার অববাহিকা গামলার মতো। মালদহ-মুর্শিদাবাদের ভাঙনের মোকাবিলা করার সঙ্গে সঙ্গে বিহার-উত্তরপ্রদেশের বন্যার চাপ সামলাতে হচ্ছে। এই সঙ্কটে ফরাক্কার ব্যারাজ কার্যত কোনও কাজেই আসছে না। রাজীববাবু জানান, মালদহের মানিকচক থেকে পঞ্চানন্দপুর পর্যন্ত গঙ্গায় ব্যাপক ভাঙন চলছে। পদ্মার ভাঙন হচ্ছে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান ও ঔরঙ্গাবাদে। সেচমন্ত্রীর দাবি, ফরাক্কার ব্যারাজ সংস্কারে কেন্দ্র টাকা না-দেওয়ায় সমস্যা এতটা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। গত দু’বছরে ভাঙন রোধে রাজ্যের তৃণমূল সরকার ২০০ কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু পরিস্থিতি সামলানো যাচ্ছে না। |