আকাশ দেখতে ভালবাসেন নৈহাটি শ্যামসুন্দরীতলার সোমনাথ বসু। আকাশ দেখাতেও ভালবাসেন। ছাত্ররা সোমনাথ স্যারের টেলিস্কোপে চোখ লাগিয়ে মহাকাশের গ্রহ-নক্ষত্রের সঙ্গে পরিচিত হয়। ক্লাসের শেষে তাই স্কুলের ছাদে ভিড় জমায় ছাত্রের দল। শুধু নিজের স্কুলেরই নয়, অন্য স্কুলের মেধাবী, দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদেরও আকাশ চেনাতে টেলিস্কোপ কাঁধে ঘুরে বেড়ান নৈহাটির উত্তর গরিফা পল্লিমঙ্গল হাইস্কুলের পদার্থবিদ্যার এই প্রবীণ শিক্ষক।
রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের মতো সোমনাথবাবুও মনে করেন, এ রাজ্যে ভাল শিক্ষকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ভাল ছাত্রের থেকেও ভাল মানুষ তৈরি করাটাই একজন শিক্ষকের আদর্শ হওয়া উচিত। নিজের দেড়খানা ঘর জুড়ে বেশ কিছু বিজ্ঞানের সরঞ্জাম আর বইপত্র। পেরিস্কোপ আর ক্যালিডোস্কোপের মতো সরঞ্জামগুলো নিজের হাতেই তৈরি করেছিলেন ছাত্রদের জন্য। শিক্ষক দিবসে ছাত্রদের এই যন্ত্রগুলোর ব্যবহার শিখিয়েছেন।
নিজের রোজগারের বেশিরভাগটাই দুঃস্থ শিক্ষার্থীদের জন্য খরচ করেন সোমনাথবাবু। |
বেশ কয়েকটি বিজ্ঞান বিষয়ক ও জনকল্যাণমূলক সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত তিনি। কোনও ছাত্রের অর্থাভাবে লেখাপড়া হচ্ছে না শুনলে মধুসূদন দাদার মতো হাজির হয়ে যান সোমনাথ স্যার। ভাল মানুষ গড়তে হবে বলে তাঁর যত কৃচ্ছ্ব সাধন। সংসারী হননি পাছে আদর্শচ্যূত হন সেই আশঙ্কায়। নিজেই বলেন, “সব ছাত্রের মধ্যেই মেধা আছে। তাকে ঠিক মতো কাজে লাগাতে শেখানোটাই তো শিক্ষকের কাজ। উচ্চশিক্ষিত হওয়ার থেকেও শিখতে হবে এই শিক্ষাটা থাকা যে বেশি জরুরি এটা আর মাস্টারমশাইরা ছাত্রদের শেখান না। সহবত শিক্ষাহীন পণ্ডিত হলে সে দেশ কখনও শিক্ষিত হবে না। গত ২৭ বছর ধরে ছাত্রদের এটাই শেখাতে চেয়েছি।”
গৃহশিক্ষকতা করেন না সোমনাথবাবু। তবে পিছিয়ে পড়া ছাত্রদের নিয়ে মাঝে মাঝে স্কুলের শেষে ক্লাস নেন। অন্য স্কুলের ছাত্রদের প্রয়োজনে বাড়িতে গিয়ে দেখিয়ে আসেন। ২৭ বছরের সঙ্গী একটি সাইকেল। তাতেই বিজ্ঞানের সরঞ্জাম ঝুলিয়ে মাঝে মধ্যে চলে যান ছাত্রদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করতে। শিক্ষক দিবসে সোমনাথবাবুর বড় ইচ্ছে শিক্ষকদের নিয়েও ওয়ার্কশপ হোক। যেখানে প্রথাগত থোড় বড়ি খাড়া পড়ানোর বাইরে বেরিয়ে ছাত্রদের বুঝে শিক্ষকেরা কি ভাবে পড়াবেন তা নিয়ে আলোচনা হবে। সোমনাথবাবু বলেন, “শিক্ষক দিবস শিক্ষকদেরও শপথ নেওয়ার দিন। শুধু পাশ করানোর পড়া পড়ালে প্রতিযোগিতার বাজারে ভাল ছাত্র তৈরি করা যায়। ভাল প্রশিক্ষক হওয়া যায় হয়তো। আদর্শ শিক্ষক হওয়া যায় না।” |