রঘুনাথগঞ্জ ও সুতি-১
ব্লকে কলেজ নেই, থমকে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন
দুই ব্লকে কোনও কলেজ না থাকায় আতান্তরে পড়েছেন পড়ুয়ারা। স্কুলের গন্ডি টপকে বহু কিলোমিটার পথ ডিঙিয়ে দূরের কলেজে পড়তে যেতে না পেরে অনেকেরই উচ্চ শিক্ষায় ছেদ পড়ছে।
জঙ্গিপুর মহকুমার রঘুনাথগঞ্জ ও সুতি-১ ব্লকে কোনও কলেজের অস্তিত্ব নেই। এলাকাবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও এলাকায় কলেজ তৈরি না হওয়ায় বাধ্য হয়ে অনেককেই উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হচ্ছে। যেমন সুতি-১ ব্লকের বহুতালির নাজিমা খাতুন অথবা নয়াগ্রামের শামিমা রেহমানের কথাই বলা যাক। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর আপাতত বন্ধ দু’জনেরই উচ্চশিক্ষার রাস্তা। ২৭ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে দিনমজুর পরিবারের মেয়ে নাজিমার পক্ষে জঙ্গিপুর কলেজে ভর্তি হওয়া সম্ভব হয়নি। আর শামিমা কলেজে প্রায় পঁচিশ কিলোমিটার দূরের ঔরঙ্গাবাদ কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু লছিমনে চেপে এতটা পথ পেরোতে না পেরে পড়াশুনায় ইতি টেনেছেন। ওই দুই ব্লকের জনসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ। উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা ২৫টি। প্রতি বছর হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েও কলেজে যেতে পারছেন না। বিশেষত মেয়েদের মধ্যে কলেজে যাওয়ার প্রবনতা নিম্নমুখী। বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব অনেকটাই। তার উপর কলেজের যাওয়ার রাস্তা খানাখন্দে ভরপুর। দুর্গম ওই পথ পাড়ি দেওয়ার একমাত্র ভরসা লছিমন।
রাজ্যের মধ্যে সম্ভবত রঘুনাথগঞ্জই একমাত্র মহকুমা সদর শহর, যেখানে কোনও কলেজ নেই। এলাকায় কোনও কলেজ না থাকাই অনেকে পড়শি রাজ্য ঝাড়খন্ড বা পার্শ্ববর্তী জেলা বীরভূমের কলেজে যান। সুতি-১ ব্লকের একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা জঙ্গিপুর কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি ভজন সরকার বলেন, ‘‘সুতি-১ ব্লকে ৯টি স্কুল থেকে প্রতি বছর ১৮০০ ছাত্র-ছাত্রী উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে। কিন্তু তার পরে তাঁদের অন্তত ২৫ শতাংশ কলেজের মুখ দেখতে পান না। রঘুনাথগঞ্জেরও একই অবস্থা। কারণ, এলাকায় কলেজ না থাকায় এবড়ো-খেবড়ো রাস্তা পেরিয়ে বহু কিলোমিটার পথ উজিয়ে অনেকের পক্ষে, বিশেষত মেয়েদের আর উচ্চ শিক্ষা লাভ করা হয় না।”
অবশ্য ওই দুই ব্লকে যে কলেজ তৈরির চেষ্টা কস্মিনকালেও হয়নি তা নয়। তবে প্রকৃত রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে সে প্রচেষ্টা অঙ্কুরেই মাঠে মারা যায়। জঙ্গিপুরের দু’বারের সাংসদ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের এক সময়ের ছায়াসঙ্গী মুক্তিপ্রসাদ ধর এখন তৃণমূলে ভিড়েছেন। তাঁর কথায়, “অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন প্রণববাবুকে রঘুনাথগঞ্জে একটি গার্লস কলেজ গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তিনি রাজিও হন। কিন্তু আটকে যায় জমিজটে। রঘুনাথগঞ্জ হাইস্কুলের একটি পরিত্যক্ত ভবন রয়েছে। কিন্তু তা অত্যন্ত ছোট। তা ছাড়া স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাড়তেও চাননি।”
রঘুনাথগঞ্জ পুরসভার কাউন্সিলর বিকাশ নন্দ অবশ্য জমি জট ছাড়াতে না পারার জন্য নিজেদেরই দুষছেন। তিনি বলেন, ‘‘জমি জোগাড়ের ক্ষেত্রে এলাকায় তেমন কোনও উদ্যোগ তৈরি করতে পারিনি আমরা।”
সুতি-১ ব্লকের একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক রজত দাস বলেন, “বাম আামলে আহিরনে পরিত্যক্ত কৃষি খামারে কলেজ গড়ার জন্য উদ্যোগী হন কিছু মানুষ। কিন্তু কৃষি দফতরের কাছ থেকে সেই খামার দেওয়ার সম্মতি পাওয়া যায়নি।”
রঘুনাথগঞ্জের শ্রীকান্তবাটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উৎপল মণ্ডলের আক্ষেপ, “শহরের আশপাশে কলেজ গড়ার জমির অভাব নেই। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের উদ্যোগের অভাবে কলেজ হচ্ছে না।”
শাসক দল কী বলছে? তৃণমূলের শিক্ষা সেলের নেতা শেখ ফুরকান বলেন, “সুতি ও রঘুনাথগঞ্জে কলেজ গড়ার কথা শিক্ষামন্ত্রীকে বলা হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ছাড়া কোনও কলেজ গড়বে না। উদ্যোগপতিদের কলেজ খুলতে চেয়ে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়েছে।” কিন্তু যতদিন কলেজ তৈরিতে বেসরকারি পুজি না আসবে ততদিন পিছিয়ে পড়া দুই ব্লকের কয়েক হাজার পড়ুয়ার উচ্চ শিক্ষার ভবিষ্যত অনেকাংশেই অনিশ্চিত হয়ে থাকবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.