ভোগান্তি নিত্যসঙ্গী, ক্নান্ত বেলডাঙা স্টেশন রোড
সুস্থ ছেলেকে নিয়ে সুলেখা বেগম বেলডাঙা স্টেশনে নামতেই ঝেঁপে বৃষ্টি নামল। এ দিক ও দিক খুঁজে রিক্সার দেখা না পেয়ে শেষতক বছর চারেকের ছেলেকে কোলে নিয়েই স্টেশন রোড ধরে হাসপাতালের উদ্দেশে হাঁটতে শুরু করেন তিনি। নামে বেলডাঙা স্টেশন রোড হলেও বছরের অন্য সময় খানাখন্দের মিছিল আর রাস্তার উপর গুছিয়ে বসা বাজারের বিকিকিনিতে রাস্তা খুঁজে পাওয়াই দায় হয়ে পড়ে। তার উপর বৃষ্টি পড়লে তো কথাই নেই। জমা জল, কাদা, থিকথিকে ভিড় কাটিয়ে সুলেখা কোনরকমে হাসপাতালে পৌঁছলেন ঠিকই। কিন্তু একরাশ বিরক্তি ঝরে পড়ে তাঁর গলায়, “বাবাঃ, এটা রাস্তা নাকি দোজখ! এইটুকু পথ আসতে যে এত যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে তা জানতাম না। একেবারে হাঁফিয়ে গেলাম গো।”
এমন অভিজ্ঞতা শুধু সুলেখা বেগমের একার নয়। বেলডাঙা স্টেশন রোডের রাস্তা কোনওরকমে পার করতে পারলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন পথচারী থেকে নিত্যযাত্রী সকলেই। পূর্ব রেলের লালগোলা শাখার কৃষ্ণনগর ও বহরমপুর রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী বেলডাঙা স্টেশন। গুরুত্বের বিচারে দুই জেলার দুই সদর রেলস্টেশনের পরেই স্থান বেলডাঙার। দৈনিক গড়ে কয়েক হাজার মানুষ বেলডাঙা রেলস্টেশনের দু’দিকের রাস্তা ব্যবহার করেন। অথচ বছরের পর বছর ধরে রাস্তা মেরামত করা দূরের কথা খোদ রাস্তাটাই যেন উধাও হতে বসেছে।
বেহাল বেলডাঙা স্টেশন রোড। ছবি: সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়।
বেলডাঙা স্টেশন রোডের প্রায় ১৫০ মিটারের মধ্যে বেলডাঙা থানা। স্টেশনের পাশেই পোস্ট অফিস। থানা লাগোয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। তার পাশেই বড় সব্জি বাজার, ফলের পাইকারি বাজার এবং বেলডাঙা রেলবাজার। যে বাজারের বড় অংশের বিক্রেতারা রাস্তার উপরে বসেই সব্জি বিক্রি করেন। স্টেশন থেকে বেরিয়ে রাস্তার জমা জল মাড়িয়ে যেতে হয় যাত্রীদের।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে স্টেশন সংলগ্ন ওই রাস্তার শেষ কাজ হয়েছে ২০১০ সালে। কিন্তু এত দ্রুত ওই রাস্তা বেহাল হয়ে গেল কিভাবে? বেলডাঙা পুরসভার পুরপ্রধান কংগ্রেসের অনুপমা সরকার বলেন, “ওই রাস্তা তৈরির সময়েই বেশ কিছু সমস্যা ছিল। সেই কারণেই রাস্তার হাল এত তাড়াতাড়ি এমন বেহাল হয়ে গিয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে ওই এলাকায় বেশ কিছু বড় ড্রেন, রাস্তা, ফুটপাত করেছি। বাকি সমস্যাটুকুও শীঘ্রই মেটানো হবে। তাছাড়া স্টেশন রোডের দ’ুদিকে যাতে বাজার না বসে তার জন্য অন্যত্র একটা জায়গাও দেখা হচ্ছে।”
যদিও বেলডাঙা পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের শীলা ঘোষ বলেন,“ যানজট, রাস্তা ও নিকাশির মতো জরুরি বিষয়গুলোতে বর্তমান পুরসভা পুরোপুরি ব্যর্থ। বেলডাঙা স্টেশন রোড নিয়েও পুরসভা কার্যত কোন উদ্যোগই নেয়নি। কাউন্সিলরদের সাধারণ সভাতেও এই সমস্যার সমাধানের জন্য বহুবার আমরা সরব হয়েছি।”
অথচ এটা লক্ষ করার মতো বিষয় যে স্থানীয় লোকজন ছাড়াও বেলডাঙা স্টেশনের উপর নির্ভর করেন রেজিনগরের একাংশ ও নওদা, হরিহরপাড়ার এলাকার মানুষ। রেল দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে প্রতি মাসে এই স্টেশনে টিকিট বিক্রি হয় তেরো লক্ষ টাকারও বেশি। সংরক্ষিত টিকিট বিক্রি হয় আরও তেরো লক্ষ ষাট হাজার টাকার। তাছাড়াও মাসে গড়ে ৪০০ কুইন্টাল সব্জি ও ৪০ কুইন্টাল সাধারণ পণ্য এই স্টেশন থেকে যাতায়াত করে। এর থেকেও গড়ে প্রতি মাসে রেলের ৩৫ হাজার টাকা আয় হয়। স্থানীয় মানুষ ও নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, জমজমাট এই স্টেশনের উপর দিয়ে দৈনিক তিনটি এক্সপ্রেস সহ ১৩ জোড়া প্যসেঞ্জার ট্রেন যাতায়াত করে। অথচ বৃষ্টি হলেই স্টেশন সংলগ্ন রাস্তাগুলোতে জল জমে যায়। জল থইথই এবড়ো-খেবড়ো ওই রাস্তা দিয়ে রিক্সা কিংবা গাড়িতে করেও যাওয়া কঠিন হয়ে যায়। বেলডাঙা রেলবাজার বাজার ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে সনাতন চৌধুরী বলেন, “স্টেশন সংলগ্ন রাস্তাতে জল জমে যাওয়ায় আমাদের ব্যবসারও ক্ষতি হয়। জমা জল মাড়িয়ে ক্রেতারাও দোকানে আসতে বেশ সমস্যায় পড়েন। পুরসভার দ্রুত এই রাস্তার হাল ফেরান উচিত।”
এখন পুরসভার কত মাসে বছর হয় সেটাই দেখার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.