পাট পচানোর জন্য আর বৃষ্টির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না চাষিদের। বৃষ্টির জল ছাড়াই খুব সামান্য জলে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে চাষিরা এ বার পাট পচাতে পারবেন বলে দাবি জুট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার কর্তাদের। কিন্তু এই যন্ত্রের ব্যবহারে পাটকাঠি নষ্ট হয়ে যায় বলে চাষিরা খুব উৎসাহী নন।
এই যন্ত্রের প্রধান সুবিধা, এর মাধ্যমে পাটের আঁশ ছাড়িয়ে তা খুব সামান্য জলে ভিজিয়ে রাখলেই হয়। চিরাচরিত দেশি পদ্ধতিতে নদী, নালা, খাল-বিলে মাটি চাপা দিয়ে পাট পচানো হয়। এই পদ্ধতিতে যন্ত্রের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তিতে পাট ছাড়ালে যেমন বৃষ্টির জলের উপর নির্ভর থাকতে হবে না, তেমনই পাটের গুণগত মান অপেক্ষাকৃত ভাল হবে বলে দাবি জুট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার কর্তাদের। শুধু তাই নয়, খরচও হবে অপেক্ষাকৃত কম আর সময় লাগবে অনেক কম।
গত মঙ্গলবার কৃষ্ণনগরের কাছে ভানপুরে কর্পোরেশনের ‘ডাইরেক্ট পার্চেস সেন্টার’-এ চাষিদের সামনে যন্ত্রটির কার্যকারিতা হাতে-কলমে দেখিয়ে দেওয়া হল। চাষিদের উৎসাহিত করতেই এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন কর্পোরেশনের কর্তারা। আর সবটা দেখাশোনার পর চাষিরা কিন্তু থেকে গেলেন দোলাচলের মধ্যেই। জুট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার কৃষ্ণনগরের রিজিওনাল ম্যানেজার মানস ভট্টাচার্য বলেন, “পাট পচানোর প্রধান সমস্যা হল পর্যাপ্ত জল। এমনিতেই দিন দিন খাল-বিলের পরিমাণ কমছে। তার উপর বৃষ্টিপাত সব বছর ঠিকঠাক পরিমাণ মতো হচ্ছে না। ফলে বৃষ্টি না হলে চাষিরা পাট পচাতে পারছেন না। পাট মাঠেই শুকিয়ে যাচ্ছে।” |
তবে নতুন এই যন্ত্রটিকে এখনই স্বাগত জানাতে রাজি নন চাষিরা। পলদা মুড়াগাছার বাসিন্দা সুবল বিশ্বাস, গোবিন্দ হালদাররা বলেন, প্রথমত যন্ত্রটির দাম অনেক, তার উপর মেশিনে আঁশ ছাড়ালে পাটকাঠি টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। ফলে সেই পাটকাঠি কোনও কাজে লাগবে না। না যাবে চাষের কাজে লাগানো, না যাবে বিক্রি করা। জ্বালানি ছাড়া কোনও কাজেই আসবে না ওই পাটকাঠি। তা ছাড়া, টুকরো টুকরো পাটকাঠি সারা বছর গুছিয়ে রাখাও কঠিন। পাট চাষের শ্রমিকেরাও এই যন্ত্র ব্যবহারে কতটা দক্ষ হবেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, চিনে এই যন্ত্র প্রথম আবিষ্কার হয়। সেই যন্ত্রের অনুকরণে ভূপালে একটি সংস্থা যন্ত্রটি তৈরি করতে শুরু করেছে। বর্তমানে যন্ত্রটির দাম এক লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। যদিও যন্ত্রটি কিনলে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জুট টেকনোলজি মিশন’ ৫০ হাজার টাকা ভর্তুকি দেবে। ইন্ডিয়ান জুট ইন্ডাস্ট্রিজ রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের টেকনিক্যাল অফিসার অরিন্দম দাশ বলেন, ‘‘প্রথমে যন্ত্রটির সাহায্যে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পাটগাছ থেকে আঁশ ছাড়িয়ে নিতে হবে। তার পর সেই আঁশ পাটের বস্তার মধ্যে বেঁধে সামান্য জলের ভিতরে ভিজিয়ে দিতে হবে। জল লাগবে খুবই সামান্য। জলে সামান্য পরিমাণ ‘এনজাইম’ দিলে প্রায় অর্ধেক সময়ের মধ্যে পাট পচতে থাকে।”
বৃষ্টি না হলে তো চাষিরা পাট পচাতেই পারেন না, আর যদিও বা বৃষ্টি হয়, সব সময় তা সঠিক সময়ে হয় না। সাধারণত ১২০ দিনের মাথায় কেটে নিলে সেই পাটের মান সব সময় ভাল হয়। কিন্তু সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হলে চাষিরা বাধ্য হন পরে পাট কাটতে। তাতে যেমন পাটের গুণগত মান কমে, তেমনই সেই জমিতে সঠিক সময়ে আমন চাষ করা যায় না। মার খায় ধান চাষও। কর্পোরেশনের কর্তাদের দাবি, এই পদ্ধতিতে পাট পচালে উভয় সংকট থেকে মুক্তি পাবেন চাষিরা। কারণ সে ক্ষেত্রে বৃষ্টি হোক বা না হোক, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পাট কেটে সেই জমিতে আমন ধান চাষ করতে পারবেন চাষিরা। মানসবাবু বলেন, “চাষিদের এই সংকট থেকে মুক্ত করতে পারে এই যন্ত্র। কারণ এই যন্ত্রের মাধ্যমে কাঁচা পাটগাছ থেকে আঁশ ছাড়িয়ে তা পচাতে খুবই কম জল প্রয়োজন।’’ অরিন্দমবাবুর দাবি, “আর পরিষ্কার জলে পাট পচানোর কারণে গুণগত মান ভাল হবে। লোকবল কম লাগায় খরচও হবে কম।’’ |