|
|
|
|
দুই কামরার গ্রন্থাগারে জায়গা নেই বইয়ের |
তিরিশ বছরেও ভবন হয়নি |
অমিত কর মহাপাত্র • হলদিয়া |
১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠা। কিন্তু আজও হলদিয়া টাউন লাইব্রেরির নিজস্ব ভবন তৈরি হল না। আগে শহরের দুর্গাচক বিনোদন কেন্দ্রে চলত গ্রন্থাগার। ২০০৬ সাল থেকে হলদিয়া শহরের মঞ্জুশ্রী মোড় থেকে মিৎসুবিশি যাওয়ার রাস্তার পাশে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের একটি ভবনের এক তলায় স্থানান্তর হয়েছে। সর্বসাকুল্যে দু’টি ছোট্ট ঘর। জায়গা কম বলে বই কম। পছন্দের বই কম থাকায় কমছে পাঠকের সংখ্যাও।
দু’টি ঘরের মধ্যে একটিতে পাঠকদের পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। পাশের ঘরে বসেন গ্রন্থাগারিক সনাতন দোলুই। তিনি জানান, গ্রন্থাগারে বারো হাজার বই ও পত্রিকা রয়েছে। প্রায় সতেরোশো পাঠক। কিন্তু কর্মীর অভাবে ঠিক মতো পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। গ্রন্থাগারিককে বাদ দিলে কর্মী বলতে রয়েছেন মাত্র এক জন শম্ভুনাথ দাস। ২০০৩ সাল থেকে দপ্তরী তথা বই বাঁধাইকারী ও ২০০৮ সাল থেকে নৈশপ্রহরীর পদ শূন্য রয়েছে। বাধ্য হয়ে একজন সাফাইকর্মীকে অস্থায়ী ভাবে রাখা হয়েছে। |
|
লোডশেডিংয়ে লণ্ঠনই ভরসা হলদিয়া টাউন লাইব্রেরিতে।—নিজস্ব চিত্র। |
দুপুর বারোটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এই গ্রন্থাগার খোলা থাকে। গ্রন্থাগারে এসেছিলেন বৈষ্ণবচকের বাসিন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুস্মিতা সামন্ত। তিনি বলেন, “আধুনিক সাহিত্যের পাশাপাশি অনুবাদ সাহিত্যের বইয়ের সংখ্যা নিতান্তই কম। ফলে বই পেতে মাঝে মাঝে অপেক্ষা করতে হয়।” রঘুনাথচকের বাসিন্দা গ্রন্থাগারের দশ বছরের সদস্য সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অসন্তোষের সঙ্গে বলেন, “গ্রন্থাগারে আঞ্চলিক ইতিহাস বা ভাল প্রবন্ধের বই নেই। তাই বাধ্য হয়ে একই বই বারবার পড়তে হয়।” স্কুলের পাঠ্য বইয়ের সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাই বই নিতে এসে ফিরে যেতে হয় অনেক ছাত্রছাত্রীকেও। আবার গ্রন্থাগারে পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যা হয় বলে জানান কুমারচকের বাসিন্দা শেখ সরিফুল। পরানচকের বাসিন্দা সৌমিত্র প্রামাণিক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়ক বইয়ের জন্য গ্রন্থাগারের সদস্য হয়েছেন। তাঁর কথায়, “বইয়ের
সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। পড়ার সুযোগ তেমনভাবে নেই। পরীক্ষা প্রস্তুতির কিছু বই বাড়িতে দিলে ভাল হয়।”
সমস্যার কথা স্বীকার করে গ্রন্থাগারিক বলেন, “আমাদের আর্থিক সঙ্গতি কম। বই-পত্রিকা কেনা, খবরের কাগজ কেনা, বাঁধাই করা, আসবাব কেনা ও অন্যান্য খরচ বাবদ বছরে মাত্র ৪৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়। অর্থাভাবে পাঠকদের চাহিদা মেটাতে আমরা অপারগ। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে পাঠকদের উন্নত পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
পূর্ব মেদিনীপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক ইন্দ্রজিৎ পান বলেন, “গ্রন্থাগারে কর্মী সমস্যা প্রায় সর্বত্রই রয়েছে। সরকারি ভাবে নতুন কর্মী নিয়োগের প্রস্তুতি চলছে।” তিনি আরও জানান, এ বছর জেলার বিভিন্ন গ্রন্থাগারের জন্য ১কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। জমি পেলে নতুন গ্রন্থাগার নির্মাণে কোনও সমস্যা হবে না। ওই গ্রন্থাগারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আসেনি। প্রস্তাব এলে দ্রুত অর্থ বরাদ্দ করা হবে। গ্রন্থাগারিক সনাতন দোলুই হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের কাছে জমি চেয়ে আবেদন জানানোর কথা ভাবছেন এখন। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক পি. উলাগানাথন বলেন, “ওই গ্রন্থাগারকে জমি দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও জটিলতা নেই। প্রস্তাব এলে বিবেচনা করে দেখা হবে।” |
|
|
|
|
|