সাফ ফুটবল: সুনীল নেই সেমিফাইনালে
পাকিস্তানের হাত ধরে শেষ চারে ভারত
নেপাল ২ (অনিল, জুমানু)
ভারত ১ (নবি)
ড্রেসিংরুম থেকে টিম বাস দাঁড়িয়ে বড়জোর ফুট পঁচিশেক দূরে।
খোঁড়াতে থাকা রহিম নবিকে নিয়ে তাঁর সতীর্থরা যখন বাসে উঠছিলেন, তখন মনে হচ্ছিল কোনও শ্মশানযাত্রীর দল। দেখে কে বলবে, বিশ্রী হারের লজ্জা নিয়েও এই টিমটা এখনও টিঁকে আছে টুর্নামেন্টে! সেমিফাইনালে উঠেছে হেড টু হেডের অঙ্কে!
বাসের সিঁড়িতে পা রাখার মুখে নবিকে প্রশ্ন করা হল, এত দিন ভারতীয় দলে খেলছেন, কখনও এত খারাপ খেলেছে দল? “না না, নেপালের কাছে হারটা লজ্জার। কখনও এত বিশ্রী পারফরম্যান্স হয়নি আমাদের। কী যে হল?”
তার একটু আগেই মেহতাব হোসেনের মুখে শোনা গিয়েছে একই সংলাপ। “এর চেয়ে অনেক ভাল দলের বিরুদ্ধে খেলেছি। হেরেছিও। কিন্তু এ রকম খারাপ খেলিনি। আরে কিছু তো শুনতেই পাচ্ছিলাম না। শুধু ঘাড়ের কাছে চিৎকার হচ্ছিল।” সকালে জন্মদিনের কেক কাটার পর মেহতাবের মুখ কালো বিকেলেই।
শব্দব্রহ্ম আর কিক অ্যান্ড রানের উজ্জীবিত ফুটবলের কাছে ফের পদানত উইম কোভারম্যান্সের ভারত। বিদেশে এটা নিয়ে তাঁর তেরো মাসের জমানায় টানা চার বার। সিঙ্গাপুর, মায়ানমার, তাজিকিস্তান এবং নেপাল।
হাতের কাছে থাকা তথ্য আরও ভয়ঙ্কর সব খারাপ ইঙ্গিত দিচ্ছে—দশ বছর পর সাফ কাপের কোনও গ্রুপ লিগের ম্যাচ হারল ভারত। সাফ কাপের ‘দৈত্য’-রা নেপালের কাছে হেরে কখনও ‘বামন’ হয়নি এর আগে। সাফ গেমসে সিনিয়র দল শেষ হেরেছে কুড়ি বছর আগে। সেই ১৯৯৩-তে। ঢাকায়।

নবির জবাব দেওয়ার দিন। ছবি: পিটিআই।
ডাচ কোচ সেই দুঃখের স্মৃতি ফিরিয়ে আনলেন ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীদের স্মৃতিতে। বৃহস্পতিবার দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে। কোভারম্যান্স হারের পর সাফাই দিলেন, “নেপাল খুব ভাল দল জানতাম। আমরা খেলতেই পারিনি। সেমিফাইনালে সেই ভুলগুলো শুধরে নিয়ে ঝাঁপানোর চেষ্টা করতে হবে। এ বার টুর্নামেন্টের চতুর্থ ফাইনাল।” আপনার জমানায় সবথেকে বিশ্রী পারফরম্যান্স কি এটাই? “ও ভাবে আমি বিচার করি না। এটা নিয়ে কোনও নাটক হোক চাই না।” রুষ্ট কোভারম্যান্স।
সৈয়দ নইমুদ্দিন, সুখবিন্দর সিংহ, এমনকী বর্তমান জাতীয় দলের সহকারী স্যাভিও মেদেইরাও দেশকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন সাফ কাপে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, দেশীয় কোচেরাই যদি এই ট্রফি পেতে পারেন, তা হলে কোটি কোটি টাকা দিয়ে কোভারম্যান্সদের পোষার প্রয়োজন কী? গ্রুপ লিগের পরপর তিনটি ম্যাচ খেলল ভারত। প্রতিদিন গ্রাফ নিম্নমুখী—জয়, ড্র এবং হার। তা হলে ডাচ কোচ করছেনটা কি? তাঁর ফুটবলার বাছতেই অবশ্য গলদ। লালকমল ভৌমিক, লালরিন্দিকা, দেবব্রত রায়, বিনীশ বালান, জোয়াকিম আব্রাঞ্চেজদের মতো আই লিগে ভাল খেলা ফুটবলাররা কেন টিমের বাইরে থাকবে? সন্দীপ নন্দীকে যদি ফিরিয়ে আনা যায়, তা হলে আই লিগের গত দু’বারের সেরা সাইড ব্যাক দীপক মণ্ডলকে নেওয়া হল না কেন?
শুধু তাই নয়, যে ম্যাচটা জিতলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া যাবে সেই ম্যাচ ভারতীয় কোচ শুরু করলেন ৪-৫-১ দিয়ে। আবার দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে ২-০ পিছিয়ে পড়ার পর ফর্মেশন বদলালেন ৪-৪-২। যা করা উচিৎ ছিল অনেক আগেই। এত দিন ব্রাত্য হয়ে থাকা নবি ইনজুরি টাইমে সাইড ভলিতে দুর্দান্ত গোল করলেন। লজ্জার হারে যা দশ পার্সেন্ট হলেও মলম দিল। কিন্তু তাতে কোভারম্যান্সের ভুল স্ট্র্যাটেজিকে ক্ষমা করা যাচ্ছে না। ড্র-এর ভাবনা না নিয়ে শুরু থেকে জোড়া স্ট্রাইকারে শুরু করলে কিন্তু নেপাল এ ভাবে ঘাড়ে উঠতে পারত না।
শব্দব্রহ্ম কী ভাবে একটা টিমকে ভোকাল টনিক দিতে পারে এ দিন তা দেখালেন অনিল-রবিন শ্রেষ্ঠারা। নেপালের কাছে সাফ কাপ আসলে বিশ্বকাপের মতো। দু’ঘণ্টা আগেই স্টেডিয়াম ভর্তি। ফুটপাথে বসে ছেলে-মেয়েরা মুখে নেপালের পতাকা এঁকে ঢুকে পড়েছিলেন মাঠে। আর তার পর দেশের পতাকা নিয়ে শুরু থেকেই কানফাটানো চিৎকার—নে-পা-ল, নে-পা-ল। জেতার পর সাগর থাপা-জগজিতদের নিয়ে মাঠে যা হল তা ব্রাজিল বা আর্জেন্তিনা বিশ্বকাপ জিতলে হয়! হবেই বা না কেন। যে দেশে জাতীয় লিগ নেই, তিন মাস ফুটবল হয়, খেলোয়াড়রা সে ভাবে টাকাও পান না সেখানে এ রকম জয় তো আনন্দের লাভাস্রোত ছড়াবেই।
২০১১ জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সেপ্টেম্বর
এশিয়ার দেশগুলোর বিরুদ্ধে ভারতের পারফরম্যান্স
মায়ানমারের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচে জয়- ১, হার- ১, ড্র- ১
তুর্কমেনিস্তানের বিরুদ্ধে এক ম্যাচে ড্র- ১
মলদ্বীপের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচে জয়- ২, ড্র- ১
তাজিকিস্তানের বিরুদ্ধে এক ম্যাচে হার- ১
ফিলিপিনসের বিরুদ্ধে এক ম্যাচে হার- ১
সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে এক ম্যাচে হার- ১
তথ্য হরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
নেপালের লাল পতাকায় সূর্য আর চন্দ্র আঁকা আছে। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টগবগে টাট্টু ঘোড়ার মতো দৌড়াল জ্যাক স্টেনাভোস্কির টিম। নিখুঁত অঙ্কে কোভারম্যান্সের টিমকে হামাগুড়ি দেওয়াল নেপাল। গোলের কাছাকাছি ভয়ঙ্কর হওয়া দূরে থাক, ভারত প্রথম কর্নার পেল ৬৫ মিনিটে! বল পজেশন থেকে উইং প্লে, ছোট ছোট পাস থেকে প্রতিটি বল তাড়া করে যাওয়া—অনিল, ভরত, সন্দীপরা ছিলেন আগুনে মেজাজে। নেপাল যখন আক্রমণে যাচ্ছিল তখন একসঙ্গে পাঁচ জন। রক্ষণ সামাল দেওয়ার সময় সংখ্যাটা বেড়ে হচ্ছিল ছয়-সাত। যুক্তরাষ্ট্রের কোচের হাত ধরে আধুনিক ফুটবলের অনুকরণ করার চেষ্টা। ফিটনেসও ছিল চোখে পড়ার মতো।
বিপক্ষের এই আগুনে মেজাজের সামনে সুনীল, মেহতাব, আরাতা, মোহনরাজরা ছারখার হয়ে গেলেন। ডাবল কভারিং-এ আটকে যাওয়া সুনীল দ্বিতীয় হলুদ কার্ডও দেখে ফেললেন। সেমিফাইনালে তিনি নেই। পরিকল্পিত আক্রমণ, মাঝমাঠে বল ধরে উইং-এ পাস বাড়ানো কিছুই হচ্ছিল না ভারতের। শুধুই উদ্দেশ্যহীন বল তুলে যাওয়া। যা নেপালের রক্ষণভাগকে আরও সুবিধা করে দিল। দু’টো পরিবর্তন আনা হয়েছিল টিমে। নবি এবং আরাতাকে খেলানো হল ফ্রান্সিস আর লেনির জায়গায়। আরাতা ডাহা ফেল। তাঁর কাজটা যে কী ছিল সেটাই বোঝা গেল না। কেমন যেন একটা হ-য-ব-র-ল গোছের ব্যাপার। সব তালগোল পাকিয়েও কোভারম্যান্সের টিম শেষ চারে গেল—কপাল চওড়া হলে যা হয়।
গ্রুপের অন্য ম্যাচে বাংলাদেশ ১-০ এগিয়ে গিয়েও হেরে গেল পাকিস্তানের কাছে। ২-১ গোলে। ভারত এবং পাকিস্তান দু’দলেরই পয়েন্ট চার। কিন্তু ভারত গ্রুপ লিগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জেতায় হেড টু হেড নিয়মে শেষ চারে গেল। কিন্তু সেমিফাইনালে মেহতাব-নবিদের সামনে কে? আজ শুক্রবার মলদ্বীপ-আফগানিস্তান ম্যাচের পর জানা যাবে ভারতের প্রতিপক্ষ।
কিন্তু যার সঙ্গেই ম্যাচ হোক, কী হবে? এক ফুটবলার বললেন, “আমাদের কোচের যা কপাল, দেখবেন সাডেন ডেথে আমরা ফাইনালে চলে গিয়েছি।”

ভারত: সুব্রত, নির্মল, গৌরমাঙ্গি, নির্মল, মোহনরাজ, নবি, মেহতাব, আরাতা (লেনি), জেজে (রবিন), জুয়েল, সুনীল।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.