বেতন নেই, প্রশিক্ষকও নেই
সালুয়ার জঙ্গি দমনের স্কুলে
পুরোদস্তুর প্রশিক্ষণ চালু হওয়া দূরের কথা, মাসের পর মাস বেতন না-পেয়ে শেষমেশ চাকরি ছেড়েই চলে গেলেন প্রশিক্ষকেরা। ফলে খড়্গপুরের সালুয়ায় রাজ্য সরকার যে উদ্দেশ্যে জঙ্গি দমন ও সন্ত্রাস মোকাবিলার কৌশল শেখানোর স্কুল (কাউন্টার ইনসার্জেন্সি অ্যান্ড অ্যান্টি টেররিজম, সংক্ষেপে সিআইএটি স্কুল) গড়েছিল, তা কার্যত জলে যেতে বসেছে বলে মনে করছেন পুলিশকর্তাদের একাংশ। কেন্দ্র চেয়েছিল, জঙ্গি দমন ও সন্ত্রাস মোকাবিলার ঘাঁতঘোঁত শিখতে রাজ্যগুলো যেন শুধু ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ড (এনএসজি) বা অন্ধ্রের গ্রে হাউন্ড বাহিনীর মুখাপেক্ষী হয়ে না থাকে। দিল্লির বক্তব্য ছিল, বিভিন্ন রাজ্য নিজেরাই উচ্চ মানের প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে নিতে পারলে ওই দুই বাহিনীর উপরে যেমন চাপ কমবে, তেমন রাজ্যের পুলিশও ধীরে ধীরে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠার সুযোগ পাবে। সেই উদ্দেশ্যসাধনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকার প্রাথমিক ভাবে ১৪টি রাজ্যকে বেশ কিছু টাকাও দিয়েছিল। তার সাহায্যে অন্যেরা বেশ খানিকটা পথ এগিয়ে গেলেও পশ্চিমবঙ্গ পিছনেই পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ।
কী রকম?
রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের খবর: সিএআইটি স্কুলের নামে কয়েকটা টিনের চালাঘর ছাড়া কার্যত কিছু হয়নি। পাশাপাশি বেতন না-পেয়ে প্রশিক্ষকেরা বিদায় নিয়েছেন। মহাকরণ-সূত্রে জানা যাচ্ছে, স্কুল চালানোর জন্য এক জন সুুপারভাইজার এবং একাধিক প্রশিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। শর্ত ছিল, ফৌজ বা আধা ফৌজের অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের দায়িত্ব দিতে হবে। মাস-মাইনেও বেঁধে দিয়েছিল কেন্দ্র সুপারভাইজারের ৫০ হাজার, প্রশিক্ষকদের ২০ হাজার টাকা। সেই মতো সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি) থেকে সুপারভাইজার ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) দুই অবসরপ্রাপ্ত অফিসারকে সালুয়ার ট্রেনিং স্কুলে প্রশিক্ষক হিসেবে আনা হয়েছিল। যাঁরা বেতন না-পেয়ে চলে গিয়েছেন।
ওঁদের মাইনে দেওয়া গেল না কেন?
এক স্বরাষ্ট্র-কর্তার ব্যাখ্যা, “ট্রেনিং স্কুলের রোজকার খরচ-খরচা ও শিক্ষক-কর্মীদের বেতন মেটাতে একটা আলাদা হেড অফ অ্যাকাউন্টস খোলার কথা ছিল। স্কুল তৈরির দু’বছর পরেও তা করে ওঠা যায়নি। এমনকী, ওই কাজের জন্য ড্রয়িং অ্যান্ড ডিসবার্সিং (ডিডিও) পদেও কর্মী বসাতে পারেননি রাজ্য পুলিশ কর্তৃপক্ষ।” মহাকরণ সূত্রের খবর, সদ্য গত মাসে হেড অফ অ্যাকাউন্টস খোলা হলেও ডিডিও নিয়োগ এখনও হয়নি।
আর প্রশিক্ষকের অভাবে রাজ্য পুলিশ আপাতত সিএআইটি চালানোর দায়িত্ব সঁপেছে ইএফআরের হাতে, দু’বছর আগে যাদের সালুয়া ক্যাম্পাসেই প্রশিক্ষণকেন্দ্রটির পত্তন। এ নিয়ে আপত্তি উঠেছে পুলিশ-প্রশাসনের একাংশে। একাধিক পুলিশকর্তার যুক্তি: জঙ্গি দমন ও সন্ত্রাস মোকাবিলায় ইএফআর নিজেই সে ভাবে দড় নয়। “তারা কী ভাবে পুলিশকর্মীদের এমন বিশেষ তালিম দেবে?” প্রশ্ন তুলছেন ওঁরা। যে লক্ষ্যে প্রাক্তন ফৌজি অফিসারদের দিয়ে প্রশিক্ষণকেন্দ্রটি চালানোর পরামর্শ দিল্লি দিয়েছিল, এ রাজ্যে আদৌ তা সফল হবে কি না, সে সম্পর্কেও এই মহল সন্দিহান।
সংশয়ের যথেষ্ট ভিত্তিও রয়েছে। স্বরাষ্ট্র-তথ্য বলছে, ২০১১-র ১ সেপ্টেম্বর সালুয়ার ইএফআর ক্যাম্পাসে সিআইএটি চালু হওয়ার পরে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসারদের হাতে সেখানে চার দফায় তালিম নিয়ে গিয়েছেন রাজ্য পুলিশের বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় আড়াইশো সদস্য। অথচ এখন সেখানে সদ্যনিযুক্ত জুনিয়র কনস্টেবলদের প্রশিক্ষণ হচ্ছে। বিভিন্ন পুলিশকর্তার আক্ষেপ, শিক্ষানবিশ পুলিশকে ব্যারাকপুরের ট্রেনিং কলেজে যে সাধারণ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, উপযুক্ত প্রশিক্ষকের অভাবে এখন সালুয়ার সিআইএটি’তে সেই পাঠই চলছে।
শুধু প্রশিক্ষণেই যে সঙ্কট, তা নয়। অস্ত্রভাণ্ডারে তেমন খামতি না-থাকলেও সিআইএটি স্কুলের পরিকাঠামোয় বিবিধ ঘাটতির অভিযোগ। দু’শো শিক্ষার্থীর জন্য চারটি ও প্রশিক্ষকদের জন্য এ পর্যন্ত দু’টি টিনের চালের ব্যারাক তৈরি হয়েছে। ক্লাসরুমের প্রয়োজনীয় আসবাবেও টান। এক পুলিশকর্তার কথায়, “সিআইএটি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। প্রথম দফায় কেন্দ্র ১ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা দিয়েছিল।
তাতেই যা হয়েছে। আর্থিক টানাটানির দরুণ রাজ্য কিছু বরাদ্দ না-করায় গোটা উদ্যোগের মুখ থুবড়ে পড়ার জোগাড় হয়েছে।” অর্থাৎ, জঙ্গি দমনের যথাযথ তালিম নিতে ফের অন্ধ্র, ওড়িশা বা রাজস্থানে ছোটাই পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ভবিতব্য বলে মনে করছেন পুলিশ-প্রশাসনের অনেকে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.