রাস্তায় বেরোনো মানেই রীতিমতো প্রাণ হাতে। কারণ এ এমনই রাস্তা যেখানে দীর্ঘদিন মেরামত না হওয়ায় বেরিয়ে পড়েছে পিচ। আবার কোথাও অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে তৈরি হয়েছে ছোট ডোবা। আন্তঃরাজ্য যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা আসানসোলের চিত্তরঞ্জন রোডের হাল বর্তমানে এমনই। গত মার্চ মাস থেকে এখনও পর্যন্ত এই রাস্তায় পাঁচটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যু হয়েছে চার জনের।
আসানসোল থেকে রূপনারায়ণপুর ডাবোর মোড় পর্যন্ত চিত্তরঞ্জন রোডটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২১ কিলোমিটার। ২ নম্বর জাতীয় সড়কে ঢোকার পরই বোঝা যায়, এই রাস্তা বহু দিন সংস্কারের মুখ দেখেনি। যত্রতত্র বেরিয়ে গিয়েছে পিচ। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে বই কমছে না। কিন্তু মেরামতি হয়নি কেন? গত ১৫ জুন ব্লক প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরেই রাস্তা সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হবে। তারও আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি পূর্ত দফতর জানিয়েছিল, দরপত্র দেখার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। রাস্তা সংস্কার আরম্ভ হবে সময় মতোই। তবে তারপরেও রাস্তা মেরামত করার বিষয়টি রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই। |
ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত চলে আসানসোল চিত্তরঞ্জন রাস্তায়। —নিজস্ব চিত্র। |
সালানপুরের নিমতলা, কালিতলা ও রেলগেট সংলগ্ন অঞ্চলের রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। দেন্দুয়া মোড়, জেমারি মোড় সংলগ্ন এলাকার রাস্তায় যেখানে সেখানে খানাখন্দ। ফলে বর্ষায় বৃষ্টির পর সে রাস্তায় চলাচল করাই দায়। সালানপুর পুলিশ সূত্রে পাওয়া পরিসংখ্যান থেকে জানা গিয়েছে, গত ১৩ মার্চ আল্লাটি ও জেমারির মাঝখানে রেজ্জাক নগরের কাছে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন মোটরবাইক আরোহী এক দম্পতি। গুরুতর জখম হন তাঁরা। ২৭ মার্চ দেন্দুয়া মোড়ের কাছে চিত্তরঞ্জনগামী একটি সবজি বোঝাই লরি উল্টে যায়। গুরুতর জখম চালক এবং খালাসিকে লরির তলা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ৫ এপ্রিল বর্ধমানগামী একটি বাসের ধাক্কায় রাস্তার পাশে বসে থাকা এক মাছ বিক্রেতা জখম হন। ২৭ এপ্রিল সালানপুর রেল গেটের কাছে গর্তে পড়ে গিয়ে একটি বাসের চাকা ভেঙে যায়। আহত হন বহু যাত্রী। ১৫ জুন দেন্দুয়া মোড়ের কাছে খারাপ রাস্তার জন্য টাল সামলাতে না পেরে একটি লরি পাশের একটি অটোর উপরে পড়ে যায়। অটোর চার যাত্রীর মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলেই। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। প্রায় সাত ঘণ্টা বন্ধ থাকে যান চলাচল। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমসিম খায় পুলিশ। সে দিনই ঘটনাস্থলে সালানপুরের বিডিও প্রশান্ত মাইতি পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে রাস্তা সারানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি আজও।
চিত্তরঞ্জন রোডের সংস্কার না হওয়ার জন্য অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন বাস ও মিনিবাস চালকেরাও। আসানসোলের মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় বলেন, “অনেক বার আবেদন করেছি। কোনও লাভ হচ্ছে না। এর পর বাস চালানো বন্ধ করতে বাধ্য হব।” তিনি আরও জানিয়েছেন, এই রুটে বাসের সংখ্যা অর্ধেকের বেশি কমে গিয়েছে। বাস এক বার খারাপ হলে, তা আর মেরামত করে চালাচ্ছেন না মালিকেরা। স্থানীয় বাসিন্দা শশী পাণ্ডের অভিযোগ, “একের পর এক দুর্ঘটনা হয়ে চলেছে। কিন্তু কিছুই করছে না প্রশাসন। এটা দুর্ভাগ্যজনক।” তবে বিডিও প্রশান্তবাবুর আশ্বাস, “পূর্ত দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে।” কী বলছে পূর্ত দফতর? পূর্ত দফতরের আসানসোলে শাখা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই রাস্তাটির জন্য ২০ কোটি টাকা অনুমোদন মিলেছে। দরপত্র ডাকার প্রক্রিয়াও অনেক আগে শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কাজ এখনও শুরু হয়নি। এই রাস্তার দায়িত্বে থাকা পূর্ত (২) দফতরের আসানসোলের আধিকারিক প্রণব চক্রবর্তী অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে রাস্তা সংস্কারের বিষয়টি নিয়ে ভাববেন বলে জানিয়েছেন বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়। |