নিজেদের মধ্যে মারামারি ও ভাঙচুরে জড়িয়ে পড়লেন দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি কলেজের ইঞ্জিনিয়ারিং ও পলিটেকনিক বিভাগের ছাত্রেরা। সবে মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেই ওই পলিটেকনিক বিভাগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। কলেজ কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট কারও নামে অভিযোগ না করলেও পুলিশ ১০ ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার রাতে দুর্গাপুরের বিধাননগরে ওই মারপিটে পলিটেকনিকের প্রথম এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রেরা জড়িত ছিলেন। পলিটেকনিকের প্রথম বর্ষের পাঁচ পড়ুয়া জখম হয়েছেন। তাঁদের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁদেরই এক জন পুলিশের কাছে চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে র্যাগিংয়ের অভিযোগ করেছেন। ভাঙচুরের ঘটনায় প্রথম বর্ষের আট জন এবং চতুর্থ বর্ষের দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিধাননগরে ওই পলিটেকনিক কলেজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন সদ্য হলেও আগে থেকেই সেখানে ছাত্রেরা থাকছিলেন। ইঞ্জিনিয়ারিং এবং পলিটেকনিক বিভাগের হস্টেল দু’টি পাশাপাশি। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ লোডশেডিং হয়েছিল। অভিযোগ, সেই সময়ে পলিটেকনিক প্রথম বর্ষের কিছু পড়ুয়ারা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রদের উদ্দেশে কটূক্তি করেন। এর পরেই চতুর্থ বর্ষের কিছু ছাত্র পাঁচিল টপকে পলিটেকনিক হস্টেলে চড়াও হন। |
বিধাননগরের কলেজে ভাঙচুরের পরে ছড়িয়ে কাচ। ছবি: বিশ্বনাথ মশান। |
পলিটেকনিক প্রথম বর্ষের পড়ুয়া উদিতকুমার জানা, সুমিত ঘটক, অর্ণব কুমারেরা অবশ্য কটূক্তির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, বিনা প্ররোচনাতেই চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়ারা তাঁদের মারধর শুরু করেছিলেন। চতুর্থ বর্ষের কোনও পড়ুয়া অবশ্য এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। পলিটেকনিক হস্টেলের ওয়ার্ডেন মিহির গোস্বামীর অভিযোগ, গণ্ডগোলের সময়ে ভাঙা হয় জানলার কাচ, উল্টে দেওয়া হয় চেয়ার-টেবিল। থালা-বাসন মেঝেতে ফেলে দেওয়া হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই রাতেই সম্পত্তি ভাঙচুরের অভিযোগ দায়ের করেন।
কলেজের প্রশাসনিক আধিকারিক বিপ্লব বসু ঠাকুর জানান, থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ এসে প্রাথমিক তদন্তের পরে ১০ ছাত্রকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পলিটেকনিক প্রথম বর্ষের পবনকুমার দাসের মাথায় ১২টি সেলাই দিতে হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়ারা নিয়মিত তাঁদের র্যাগিং করতে আসতেন। এ দিন তাঁরা প্রতিবাদ করতেই কিছু ছাত্র লাঠি নিয়ে এসে চড়াও হয়। পুলিশ ছাড়াও কলেজের অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি তাঁর অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে। কংগ্রেসের তরফেও র্যাগিং রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানানো হয়। পবনের বাবা, বোকারো স্টিল প্ল্যান্টের কর্মী শঙ্কর দাস জানান, অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির তদন্তে কারও দোষ প্রমাণিত হলে সেই ছাত্রদের সাসপেন্ড করা হবে বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন।
পলিটেকনিক হস্টেলের ওয়ার্ডেন মিহির গোস্বামী অবশ্য দাবি করেন, প্রথম বর্ষের ছাত্রদের কটূক্তি এবং চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়াদের চড়াও হওয়া তাঁর চোখের সামনেই ঘটেছে। তিনি বলেন, “র্যাগিংয়ের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তেমন কিছু ঘটেনি। পুলিশ এসেছিল। ঘটনায় জড়িতদের নাম আমি পুলিশকে দিয়ে দিই। পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।” |