শিক্ষক দিবসের হুল্লোড়ে অপমানিত হয়েছেন তাঁরাই— অধ্যক্ষের কাছে সমবেত ভাবে তাঁদের এই আক্ষেপের কথা জানালেন রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজের শিক্ষকেরা।
‘অপমানে’র কারণ শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান চলাকালীন ছাত্রদের অসংযত আচরণ এবং শেষমেশ শিক্ষকদের ছেড়ে টিভি চ্যানেলের অডিশন দেখতে চলে যাওয়া। ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ছাত্র সংসদে ক্ষমতাসীন টিএমসিপি। মঞ্চে ছিলেন শাসকদলের নেতারা। কিন্তু পরিণাম ভাল হল না।
কয়েক দিন আগেই, গত সোমবার এই কলেজে প্রধান করণিকের ঘরে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল। অভিযোগ ছিল টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলি। তিনি সে দিন মন্তব্য করতে চাননি। এ দিন শুধু বলেন, “অনুষ্ঠানে ছিলাম না। বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে যা করার করব।” এসএফআইয়ের রানিগঞ্জ লোকাল সম্পাদক প্রীতি মাহাতোর কটাক্ষ, “শিক্ষক দিবস কার্যত ফূর্তি দিবসে পরিণত হল। এতে ছাত্রদেরই ভাবমূর্তি খারাপ হল।”
বৃহস্পতিবার, শিক্ষক দিবসে দুপুর ১২টা নাগাদ কলেজের নতুন গ্রন্থাগার ভবনে শিক্ষকদের সংবর্ধনা জানানোর অনুষ্ঠান শুরু হয়। শিক্ষকদের পাশেই মঞ্চে ছিলেন বাঁকুড়ার অর্ধগ্রামের তৃণমূল প্রধান মলয় মুখোপাধ্যায় এবং বেশ কয়েক জন স্থানীয় তৃণমূল নেতা। |
রানিগঞ্জে টিডিবি কলেজে তখন চলছে টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ। |
সঞ্চালনার দায়িত্বেও স্থানীয় তৃণমূল নেতা গোপাল আচার্য। নেতাদের ভিড়ে মঞ্চে বসার জায়গা না পেয়ে ছ’জন শিক্ষক দাঁড়িয়েই থাকেন।
এরই মধ্যে দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ একটি বাংলা গানের চ্যানেলের এক সঞ্চালিকা এসে আসতেই বেশ কিছু শিস দিতে, টিপ্পনী কাটতে শুরু করেন। ওই সঞ্চালিকাকে সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণনের প্রতিকৃতিতে মালা দিতে ডাকা হয়। তখনও হুল্লোড় চলতে থাকে। এর পরে সঞ্চালিকা হল ছেড়ে কলেজ মাঠে তাঁদের চ্যানেলের জন্য অডিশন নিতে গেলে প্রায় সব পড়ুয়াই তাঁর পিছু পিছু বেরিয়ে পড়েন। কলেজ মাঠে অডিশন দেখার সুবিধা করতে ক্লাস থেকে কিছু বেঞ্চ বের করে আনা হয়েছিল। অতিরিক্ত পায়ের চাপে ছ’টি বেঞ্চ ভেঙে পড়ে।
ছাত্রেরা বেরিয়ে গেলে মঞ্চে রয়ে যান শুধু শিক্ষকেরাই। অধ্যক্ষ নেপঙ্কর হাজরা ঘোষণা করেন, অনুষ্ঠান শেষ। পরে শিক্ষকেরা অধ্যক্ষের ঘরে গিয়ে জানতে চান, অধ্যক্ষ কেন শিক্ষক দিবসে ওই চ্যানেলের অনুষ্ঠান করতে দিলেন। নেপঙ্করবাবু বলেন, “আমি ওই অনুষ্ঠানের অনুমতি দিইনি।” কলেজের তৃণমূল পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, অধ্যক্ষই অনুমতি দিয়েছিলেন। অধ্যক্ষ পাল্টা বলেন, “সৌমিত্রই আমার কাছে চ্যানেলের প্রতিনিধিদের আনে শিক্ষক দিবসে কলেজ মাঠে প্রশ্নোত্তরমূলক প্রতিযোগিতা করার জন্য। লাইব্রেরি হলের মূল অনুষ্ঠানে ওদের প্রতিনিধিকে কিন্তু ডাকার কথা ছিল না।”
মঞ্চে শিক্ষকদের পাশে তৃণমূল নেতাদের বসিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া প্রসঙ্গে সৌমিত্রর যুক্তি, “অর্ধগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মলয় মুখোপাধ্যায়, গোপাল আচার্য-সহ ওঁরা সকলেই এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র। তাই ওঁদের মঞ্চে বসানো হয়েছিল।” গোপালবাবু বলেন, “রাধাকৃষ্ণনকে মালা না পরিয়েই শিক্ষকদের সংবর্ধনা জানানো শুরু করেছিল পড়ুয়ারা। সেই ভুল শুধরোতেই আমি মাইক্রোফোন হাতে নিই। পরে যা ঘটল তা আমরা ভাবতে পারছি না। এ দিন ওই অনুষ্ঠানের অনুমতি না দিলেই ভাল হত।” |