কেতারূপেণ
লাইটস... ক্যামেরা... অ্যাকশন....
শব্দ তিনটে উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে সিনেমাটোগ্রাফার দৃশ্যবন্দি করতে থাকেন একটার পর একটা সিনেমার দৃশ্য। কিন্তু যদি বলা যায় লাইটস.... লাইটস.... মোর লাইটস। কোথাও কোনও ক্যামেরা নেই, নায়ক-নায়িকাদের অ্যাকশন নেই। তা হলে?
ঠিক সেটাই ঘটেছে ক্যামেরাম্যান ওরফে সিনেমাটোগ্রাফার প্রেমেন্দুবিকাশ চাকীর ক্ষেত্রে। অপর্ণা সেন, অঞ্জন দত্ত, শেখর দাস, রাজ চক্রবর্তীর মতো পরিচালকদের ছবির এই ক্যামেরাশিল্পী এ বছর পুজোর মরসুমে সিনেমায় দৃশ্যে আলো সাজানোর বদলে কলকাতা শহরের ন’টি পুজো মণ্ডপের আলোকসজ্জায় ব্যস্ত। সুরুচি সংঘের পুজো থেকে আহিরিটোলা সর্বজনীন, শিবমন্দির সর্বজনীন থেকে নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাব এবং এই রকমই নামজাদা আরও কয়েকটি পুজোয় তাঁরই আলোক পরিকল্পনায় ঝলমলিয়ে হেসে উঠবে পুজোমণ্ডপ আর প্রতিমার মুখ।
শুধু প্রেমেন্দুবিকাশই বা কেন? বিরাট পুজো-যজ্ঞে অংশ নিচ্ছেন এ বছর টলিউডের বিভিন্ন স্তরের শিল্পী ও কলাকুশলীরা। নায়িকা কোয়েল মল্লিক থেকে জুন মাল্য, সুরকার গায়ক জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় থেকে শিল্প নির্দেশক গৌতম বসু, তন্ময় চক্রবর্তী।
আলিপুরে আবাসন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সুরুচি সঙ্ঘ-র থিম সং বানিয়েছেন এই মুহূর্তে টালিগঞ্জের এক নম্বর সুরকার। কলকাতার অন্যতম হাইপ্রোফাইল এই পুজোর এ বারের থিম সং গেয়েছেন শ্রেয়া ঘোষাল ও শান। মুম্বইতেই রেকর্ডিং হয়েছে এ বার সুরুচির থিম সং-য়ের। “শান, শ্রেয়া ছাড়াও গানের একটা অংশ আমি গেয়েছি। বহু দিন পর এত মেলোডিয়াস একটা সুর বানিয়েছি। আমি থ্রিলড্। থিম সংয়ের কথা লিখেছে আমার স্ত্রী চন্দ্রাণী ও কাজি কামাল নাসের,” মুম্বই থেকে জানালেন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর কাছে এও জানা গেল সমগ্র থিমের সঙ্গে ভক্তিরসের মূর্ছণা জুড়তে গানের মধ্যে ব্যবহার হয়েছে খোল, একতারা, বেহালা। সবই অ্যাকোয়াস্টিক বাদ্যযন্ত্র বা তালযন্ত্র। কোনও ইলেকট্রনিক প্রোগ্রামিং করা যন্ত্রই ব্যবহার হয়নি। শ্রেয়া ঘোষাল এই থিম সং গাইতে গাইতে নাকি এতটাই ভক্তিবিহ্বল হয়ে পড়েন যে মাকে ফোন করেন রেকর্ডিংয়ের মাঝখানে।
হঠাৎ সিনেমার ক্যামেরা ছেড়ে কেন দুর্গাপুজোর আলো তৈরিতে? টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ কি কিছু কম পড়িয়াছে? হেসে সিনেমাটোগ্রাফার প্রেমেন্দুবিকাশ বললেন, “না, তা নয়। তবে মানি মার্কেট ডাউন থাকায় এখন বেশ কিছু ছবির কাজ বন্ধ। সেগুলোর কাজ শুরু হবে পুজোর পর। তাই এই সময়টাকে পুজো প্যান্ডেলের আলো সাজানোর জন্যই লাগিয়ে দিলাম। বেশ লাগে এ কাজ করতে। তা ছাড়া আমি তো ২০১০ সাল থেকেই আলোর কাজ করছি। সিনেমায় ক্যামেরা করলে সমালোচকেরা কাগজে আমাদের নিয়ে দু’লাইন ভাল বা মন্দ লিখে ছেড়ে দেন। কিন্তু পুজোয় আলো করে প্রচুর মানুষের সরাসরি প্রশংসা পাই। মন ভরে যায়।” এই বছর শিবমন্দির সর্বজনীনে মেটাল নেট আর এসি পাইপের কেরামতিতে সাজানো পুজোমণ্ডপে অনেক বুদ্ধি খাটিয়ে তাঁকে আলো করতে হচ্ছে। মেটাল নেট বা এসি পাইপ স্বচ্ছ মাধ্যম নয়, তা সত্ত্বেও তিনি দেখিয়ে দেবেন এই মাধ্যমেই কেমন ভাবে আলোর ঝলকানি বিচ্ছুরিত করা যায়।
এ বছর সুরুচি সঙ্ঘের পুজোর জন্য থিম সং বানিয়েছি,
বহুদিন এত মেলোডিয়াস সুর আমি বানায়নি। শ্রেয়া, শান
দু’জনেই অসম্ভব ভাল গেয়েছে। আমি থ্রিলড।
আর সুরুচি সঙ্ঘের পুজোর আলো কেমন হবে? এটা খুব বিস্তারিত বলা বারণ আছে পুজো কমিটি থেকে। এ বার যে প্রদেশকে নিয়ে কাজ, সেই অনুসারে আলোতেও থাকবে চমক। ঠিক এই ভাবেই ভবানীপুরের অগ্রদূত উদয়ন সঙ্ঘর পুজোয় এ বার প্রেমেন্দুবিকাশ পাইপ দিয়ে তৈরি অসংখ্য সাপের ওপর ফেলবেন আলোর এমন কারুকাজ যে দেখলেই গা ছমছম করবে। বললেন, “শিল্প নির্দেশকরা সকলেই পুজোর সাজ করছেন। এঁদের দেখেই অনুপ্রেরণা পেয়েছি আলো সাজাবার।” একজন সিনেমাটোগ্রাফার যদি মণ্ডপের আলো সাজান, তফাতটা কী হয়? উত্তরে তিনি বললেন, “আলোর উৎস কোথায় কী ভাবে তৈরি করা যেতে পারে, সেটা একজন ক্যামেরাম্যান, বা ফোটোগ্রাফার যে ভাবে জানেন সেটা সাধারণ আলোকসজ্জায় সম্ভব হয় না। গোটা থিম হয়ে ওঠে একটা নাট্যমঞ্চ।” শুধু আলোর সাজই বড় কথা নয়, বিদ্যুৎ অপচয় বন্ধ করার জন্য এলইডি লাইট ব্যবহার করে চূড়ান্ত শৈল্পিক রূপটা ফুটিয়ে তোলার কথাও ভাবতে হচ্ছে প্রেমেন্দুবিকাশকে। আসলে পুজোর সব ব্যাপারেই এ বার এমনই সব রাজকীয় জাঁকজমক।
যেমন চক্রবেড়িয়া সর্বজনীন ক্লাবের থিম এ বছর নারীশক্তির বন্দনা। সেই পুজোর ব্র্যান্ড অ্যামবাসাডর জুন মাল্য বললেন, “নারীশক্তির মধ্যে দিয়ে কী ভাবে দেবীর প্রকাশ হয়, পুজোর সময় মঞ্চে এ নিয়েই কথা বলব।”
কোন পুজোর কী সারপ্রাইজ তা জানতে বাকি আর মাত্র ৩৪ দিন।
কাউন্টডাউন শুরু...



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.