দলেরই যুব নেতার অনুগামীদের বাধায় সোমবার পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনের সভায় তাঁরা যোগ দিতে পারেননিএমনই অভিযোগ তুলেছেন বাঁকুড়ার রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত তিন তৃণমূল সদস্য।
রাইপুরের মণ্ডলকুলি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত সদস্য রাধাবল্লভ মণ্ডল, টুম্পা মণ্ডল ও কাকলি ঘোষ বুধবার রাইপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি জগবন্ধু মাহাতোর কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেন। বিডিও-র কাছেও একই অভিযোগ করেছেন তাঁরা। এর ফলে দলেরই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের পারদ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা নিচুতলার তৃণমূল কর্মীদের। এ বার রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির ২৯টি আসনের মধ্যে ২৩টি পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে তৃণমূল। কিন্তু, পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনের সময় শাসক দলেরই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্বের ছবিটা প্রকাশ্যে এসেছে। দলের ব্লক সভাপতির ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় হাঁসদা ও শান্তিনাথ মণ্ডল যথাক্রমে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত হচ্ছেন জেনে যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি রাজু সিংহের গোষ্ঠীর ৯ জন সদস্য সোমবারের বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া কার্যত ‘বয়কট’ করেন। ওই দিন শপথ নিতেও যাননি তাঁরা।
যে ৯ জন তৃণমূল সদস্য ওই দিন বোর্ড গঠনের সভায় যাননি, তাঁদের মধ্যে ছিলেন মণ্ডলকুলি অঞ্চলের রাধাবল্লভ মণ্ডল, টুম্পা মণ্ডল ও কাকলি ঘোষ। এ দিন রাইপুর ব্লক অফিসে শপথ নিতে এসে তাঁরা অবশ্য অভিযোগ করেন, “ওই দিন গাড়িতে চেপে আমরা তিন জন রাইপুর আসছিলাম। সেই সময় রাজু সিংহের লোকেরা রাস্তায় আমাদের গাড়ি আটকে ‘কিছু কথা আছে’ বলে ফুলকুসমায় নিয়ে যায়। ফুলকুসমায় একটি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের উপর তলায় আমাদের বেশ কিছুক্ষণ আটকে রাখা হয়েছিল। দুপুর দু’টোর পরে আমাদের ছাড়া হয়। ওঁদের বাধাতেই আমরা বোর্ড গঠনের সভায় যেতে পারিনি।”
পুলিশে অভিযোগ করেননি কেন, এ প্রশ্নের জবাবে ওই তিন জনের দাবি, তাঁরা জনপ্রতিনিধি। ব্লক তৃণমূল সভাপতির প্রতি আস্থাশীলও। দলের বদনাম হবে ভেবেই পুলিশের কাছে অভিযোগ করেননি। ব্লক সভাপতি জগবন্ধুবাবু বুধবার বলেন, “দলের নির্বাচিত সদস্যেরাই সভাপতি ও সহ-সভাপতি ঠিক করেছেন। তার পরেও দলের মুষ্টিমেয় কয়েক জন বোর্ড গঠনের দিন আমাদেরই দলের সদস্যদের আসতে বাধা দিয়ে ও আটকে রেখে অশান্তির চেষ্টা করেছেন। তিন জন সদস্য এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি জেলা নেতৃত্বকে জানাব।” জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা বাঁকুড়া জেলা পরিষদের দলনেতা শ্যামল সরকার বলেন, “দলের নির্বাচিত সদস্যদের যাঁরা জোর করে আটকে রেখেছিলেন, তাঁরা তৃণমূলের শত্রু! এই কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাজ্য নেতৃত্বকে জানাব।”
ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি রাজু সিংহ অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেন, “ওই তিন জন সোমবার দুপুর বারোটা নাগাদ স্বেচ্ছায় ফুলকুসমা এসেছিলেন। আমাদের কেউ ওঁদের জোর করে তুলে আনেনি, আটকেও রাখেনি। সেই সময় মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছিল বলে বোর্ড গঠনের সভায় ওঁরা যেতে পারেনি। আমাদের সঙ্গে বসে মিষ্টিমুখও করেছেন। এখন জগবন্ধুবাবুর চাপে পড়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।” রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস বলেন, “আমি এখন কাজের সূত্রে বাইরে রয়েছি। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।” |