প্রচারই সার, ম্যালেরিয়ার ওষুধও নেই পশ্চিমে
প্রচারের জৌলুসে কোনও খামতি নেই। কিন্তু প্রায় ৬ মাস হতে চলল, ম্যালেরিয়ার ওষুধই নেই জেলাতে। যেটুকু রয়েছে তা ক্লোরোকুইন। কিন্তু ম্যালেরিয়ার আতুঁড়ঘর বেলপাহাড়ি ব্লকে ওই ওষুধ আর কাজ করে না। অতি ব্যবহারে তার প্রতিরোধ ক্ষমতা চলে গিয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। ফলে বেলপাহাড়িতে ব্যবহার করতে হয় আর্টিসুনেট কম্বিনেশন থেরাপি (এসিটি)। অথচ পশ্চিম মেদিনীপুরে সেই ব্যবস্থাই নেই।
জেলার মধ্যে বেলপাহাড়ি ব্লকেই ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে বেশি। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এসিটি না থাকায় ক্লোরোকুইন দিয়েই চিকিত্‌সা চালানো হচ্ছে। সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়, তাঁরা যে ওষুধ খাচ্ছেন তাতে রোগ সারবে না। ওষুধ সরবরাহ নেই বলেই রোগ সারবে না জেনেও চিকিত্‌সকেরা বাধ্য হয়ে এই প্রহসন চালিয়ে যাচ্ছেন! এ ব্যাপারে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশ বেরা বলেন, “আমরা ওষুধ চেয়েছি। আশা করি, শীঘ্রই পেয়ে যাব।”
জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ রয়েছে ভালই। এখানে মূলত দুই ধরনের ম্যালেরিয়া দেখা যায় প্লাসমোডিয়াম ভাইভক্স ও প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিফেরাম। এর মধ্যে প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিফেরাম অত্যন্ত বিপজ্জনক। এই রোগে খিঁচুনি হয়, মাথায় রক্তক্ষরণ হয়, কিডনিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ২০১২ সালে জেলায় দু’জন ম্যালেরিয়া আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছিল। একজন ঘাটাল ব্লকের ও অন্যজন বেলপাহাড়ির বাসিন্দা। চলতি বছর জুলাই পর্যন্ত ৪৯০ জনের ম্যালেরিয়া পাওয়া গিয়েছে। মারা গিয়েছেন এক জন। মৃত শক্তিপদ নায়েক গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের বাসিন্দা। চলতি বছরে বেলপাহাড়িতে ২৯৭ জন ম্যালেরিয়া আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। এর মধ্যে ফ্যালসিফেরাম আক্রান্ত ২৪ জন। ২০১২ সালে জেলার ১৭৮৩ জনের মধ্যে ১২৮০ জন ম্যালেরিয়া আক্রান্তই ছিল বেলপাহাড়ির। এর থেকে পরিষ্কার যে বেলপাহাড়িতে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। আবার বেলপাহাড়িতে ক্লোরোকুইন কাজ না করায় এটিসি পদ্ধতিতে চিকিত্‌সা করতে হয়। কিন্তু সেই ওষুধই প্রায় ৬ মাস ধরে অমিল। যদিও এ বার দ্রুত ওষুধ নিয়ে আসার জন্য স্বাস্থ্য দফতর পদক্ষেপ করছে বলে দাবি।
বেলপাহাড়ি ব্লকে ম্যালেরিয়া কমানো যাচ্ছে না কেন? স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, এলাকার মানুষের সচেতনতার অভাবই এর জন্য দায়ী। মশা যাতে কামড়াতে না পারে সে জন্য ওষধি-মশারি দেওয়া হয়েছে, মশা মারার জন্য ইন্ডোর রেসিডোয়াল স্প্রে করা হয়, রক্ত পরীক্ষা করা হয়, আক্রান্তের চিকিত্‌সা হয়, ফুল হাতা জামা পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অনেকেই সেই নির্দেশিকা মেনে চলছেন না। তাই আবার নতুন করে এ ব্যাপারে জোরদার প্রচার কর্মসূচি নেওয়ার জন্য পরিকল্পনা নিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। ম্যালেরিয়া বিভাগের নোডাল অফিসার তথা জেলা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ২ রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “সব দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে আমরা এ বার ম্যালেরিয়া বিরোধী অভিযান চালাতে চাইছি। মশার আঁতুড়ঘর ভাঙা থেকে শুরু করে প্রতিটি এলাকায় চিকিত্‌সায় জোর দেওয়া হবে।”
স্বাস্থ্য দফতর স্বীকার করেছে যে, অনেক সময় রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করতে দেরিও হয়। এই কাজে যাতে দেরি না হয় সে জন্য এ বার ‘র্যাপিড ডায়াগনস্টিক কিট’ আনা হচ্ছে। তা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দেওয়া হবে। রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু পেলেই দ্রুত চিকিত্‌সা শুরু করা যাবে। কিন্তু প্রতি বছর এ রকম পরিকল্পনা নেওয়া হলেও তা কি আদৌ বাস্তবায়িত হয়? যদি হয়, তাহলে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে কেন? রবীন্দ্রনাথবাবুর দাবি, “সব সময় সমস্যাটা এলাকায় হচ্ছে এমন নয়। দেখা যাচ্ছে মহিলার থেকে পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাটা বেশি। পুরুষেরা বাইরে কাজে গিয়ে সেখান থেকেও রোগ নিয়ে আসতে পারে।”
২০১১ সালে ১৫৫৩ জনের মধ্যে ৯৭৫ জন পুরুষ ও ৫৭৮ জন মহিলা আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর ২০১২ সালে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের মধ্যে ১০৩৮ জনই ছিলেন পুরুষ। রবীন্দ্রনাথবাবুর কথায়, “ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে আনতে এ বার আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করতে চাইছি। আশা করি, এ বার সেই কাজে সাফল্য আসবে।” যেখানে বেলপাহাড়ির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ওষুধ সরবরাহে ঘাটতি থাকে, সেখানে আদৌ ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগ কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।

মারণ ম্যালেরিয়া
সাল ম্যালেরিয়ায়
আক্রান্ত
প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিফেরাম
আক্রান্ত
মৃতের
সংখ্যা
২০১১ ১৫৫৩ ২৯৯
২০১২ ১৭৮৩ ২৯৭
২০১৩ ৪৯০ ৬৯
জুলাই পর্যন্ত
* দুই ধরনের ম্যালেরিয়ার মধ্যে প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিফেরাম অধিক বিপজ্জনক



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.