বাৎসরিক নাট্যমেলা থেকে নৃত্যানুষ্ঠান, গানের আসর থেকে আবৃত্তি সন্ধ্যা সমস্ত রকম সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে এ বছর শীতে বঞ্চিত হতে চলেছে কৃষ্ণনগর। বছরটা শীতঘুমে কাটার আশঙ্কা শহরবাসীর।
কৃষ্ণনগরের একমাত্র সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রবীন্দ্রভবনের সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে বেশ কয়েক মাস আগে। ধীর গতিতে চলতে থাকা সংস্কার কবে শেষ হবে তা ঠিক নেই। তাই এ বছরের শীতকালীন নাটকের আসর যে রবীন্দ্রভবনে বসবে না তা এক প্রকার নিশ্চিত জেলার সাংস্কৃতিক কর্মীরা। জেলার তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক অলোক সান্যাল বলেন, “জুন মাস থেকে কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শেষ করতে প্রায় ৯ মাস লাগবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। তবে আমরা চাইছি, যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করতে।” |
চলছে মেরামতির কাজ। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য। |
মেরামতির দরুন ‘ক্ষতবিক্ষত’ অবস্থায় রবীন্দ্রভবন পড়ে থাকার জন্য আতান্তরে পড়েছেন নাট্য সংগঠনগুলি। মাসের শেষ শনিবার ‘নাট্যবন্ধু’ রবীন্দ্রভবনে নাটকের আয়োজন করত। সংস্কারের ঠেলায় মাস ছ’য়েক ধরে বন্ধ সংস্থার নাটক। ফি বছর জানুয়ারি মাসে নাট্যমেলার আয়োজন করে কৃষ্ণনগর পরম্পরা। এ-পার ও-পার দু’পারের একাধিক নাটকের দল এই মেলায় আসে। কিন্তু এ বার এই মেলার ভবিষ্যত বিশ বাঁও জলে। সংস্থার অন্যতম কর্মকর্তা শিবনাথ ভদ্র বলেন, “রবীন্দ্রভবন কৃষ্ণনগরের একমাত্র সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। তা বন্ধ থাকলে স্বাভাবিকভাবেই শহরের সংস্কৃতি চর্চা থমকে যাবে।” ১৯৮১ সাল থেকে রবীন্দ্রভবনে প্রতি বছর বাৎসরিক অনুষ্ঠান করে আসছে নূপুর ডান্স অ্যাকাডেমি। এ বছর সেই নৃত্যানুষ্ঠানে ছেদ পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংস্থার কর্ণধার গোপা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “রবীন্দ্রভবনের বিকল্প কোনও প্রেক্ষাগৃহ শহরে না থাকায় সংকটে শহরের সংস্কৃতিকর্মীরা।”
তবে সংস্কৃতিপ্রেমীরা কিন্তু একেবারেই হাত গুটিয়ে বসে থাকতে নারাজ। ছোট-বড় অনেক সংস্থাই শহরের দু’-একটি স্কুলের বড় হল ঘরেই সেরে নিচ্ছে তাদের বাৎসরিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আবার আর্থিক দিক থেকে শক্তিশালী অনেক সংস্থা একটু বেশি টাকা খরচ করে কলকাতার কোনও প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠান সেরে ফেলতে চাইছে। কৃষ্ণনগর ‘রূপকথা’ যেমন কলকাতায় প্রেক্ষাগৃহ ভাড়া করে নাটকের শো করা শুরু করেছে। গানের প্রতিষ্ঠান সপ্তসুর এ বার তাদের বাৎসরিক অনুষ্ঠান কলকাতায় করার কথা ভাবছে। কোনও কোনও সংস্থা আবার শহরের টাউন হলের মাঠেই অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করছে।
১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের জন্ম-শতবার্ষিকীতে কৃষ্ণনগরের রবীন্দ্রভবন প্রতিষ্ঠিত হয়। তার পর থেকে তেমন কোনও বড়সড় সংস্কার হয়নি। এ বার কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ উদ্যোগে ৩ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা ব্যয় করে রবীন্দ্রভবনের আধুনিকীকরণের কাজ শুরু। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, খোলনলচে বদলে যাবে ভবনের।
প্রতি বছর প্রায় শতাধিক অনুষ্ঠান হয় শহরের সাংস্কৃতিক চর্চার সবেধন নীলমনি রবীন্দ্রভবনে। শহরে দ্বিতীয় কোনও প্রেক্ষাগৃহ না থাকায় এই বছর শীতকালীন জমজমাট সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা থেকে বঞ্চিত থাকার আশঙ্কায় মুখ বেজার অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা থেকে দর্শক সকলের। |