সুপ্রিম কোর্টে তাঁর ভাগ্য কী দাঁড়াবে, নিশ্চিত কোনও উত্তর নেই। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বরের বোর্ড নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত তিনি বোর্ড প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসতে পারবেন কি না, সেটাও কেউ এখনও জানে না। কিন্তু চরম ‘বাউন্সি’ উইকেটেও বিশেষ হেলদোল নেই নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের!
শ্রীনি বরং প্রবল উদ্যমে নেমে পড়েছেন নির্বাচনের আগে কাঁটা তোলার কাজে। নেমে পড়েছেন, ললিত মোদীকে ভারতীয় ক্রিকেট থেকে বরাবরের মতো মুছে দিতে!
ভারতীয় ক্রিকেট-প্রশাসনের অন্দরমহলের খবরকে যদি সত্য ধরতে হয়, তা হলে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর, বোর্ড নির্বাচনের ঠিক চার দিন আগে ললিত মোদীকে ইতিহাসে পাঠিয়ে দিতে চলেছেন শ্রীনি। শোনা যাচ্ছে, ওই দিন চেন্নাইয়ে বোর্ডের বিশেষ সাধারণ সভায় আইপিএলে অতীত কেলেঙ্কারির দায়ে আজীবন নির্বাসনে পাঠানো হচ্ছে মোদীকে।
আদতে যে সিদ্ধান্তকে শ্রীনির পাল্টা বাউন্সার বলে ধরা হচ্ছে। বোর্ড কর্তাদের কারও কারও ধারণা, মোদীকে আজীবন নির্বাসনে পাঠিয়ে বিরোধীদের একটা বার্তা দিতে চাইছেন শ্রীনি। বুঝিয়ে দিতে চাইছেন, ভারতীয় বোর্ডে তাঁর নিরঙ্কুশ আধিপত্য আগে যেমন ছিল, আজও তাই আছে। জানা গেল, কলকাতার রবিবাসরীয় ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের পরেই মোটামুটি মোদীর ‘মৃত্যু পরোয়ানা’ চূড়ান্ত হয়ে যায়। ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠক শেষে বোর্ডের অন্তর্বর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া এবং রাজীব শুক্ল-র সঙ্গে আরও একটা বৈঠকে বসেন শ্রীনি। শুধু মোদীর ভাগ্য নির্ধারণ নিয়ে। অরুণ জেটলি, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার মতো হেভিওয়েটদের নিয়ে যে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি মোদীর বিরুদ্ধে গঠিত হয়েছিল, তা আদতে শ্রীনি-নির্বাচিত। বলা হচ্ছে সেই কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ে গিয়েছে। এবং সেখানে নাকি মোদীর আজীবন নির্বাসনের কথাই সুপারিশ করা হয়েছে।
কিন্তু সেটা করতে গেলেও তো বিশেষ সাধারণ সভায় দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা প্রয়োজন। মোদীর বিরুদ্ধে চরম সিদ্ধান্তে পৌঁছতে দরকার অন্তত ২১-টি ভোট। সম্ভব? বোর্ড সদস্যদের কেউ কেউ মনে করছেন, প্রবল ভাবে সম্ভব। কারণ অধিকাংশ বোর্ড সদস্যের শ্রীনির প্রতি আনুগত্য এখনও একই জায়গায় আছে। বলা হচ্ছে শ্রীনি নাকি মনে করেন, হালফিলে বিহার ক্রিকেট সংস্থার সচিব আদিত্য বর্মার তাঁর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য জেহাদ থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া, সব কিছুর পিছনেই মদত রয়েছে মোদীর। শ্রীনির ধারণা, আদিত্যকে স্রেফ সামনে রাখা হয়েছে। আসল রিমোট কন্ট্রোল শরদ পওয়ার-ললিত মোদীর হাতে। এমনকী যে সমস্ত আইনজীবীকে নিয়ে শ্রীনির বিরুদ্ধে লড়ছেন আদিত্য, তাঁরাও নাকি মোদী-ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
যা শুনে সোমবার রাতে ফোনে আদিত্য চিবিয়ে-চিবিয়ে বললেন, “আইনজীবী কি কারও কেনা? টাকা থাকলে যাকে খুশি আমি দাঁড় করাতে পারি, তাই না?” তাঁর যুদ্ধ নিয়ে শ্রীনির ধারণা শুনে আরও আক্রমণাত্মক, “তাই? আমার পিছনে মোদী আছে? আমার তো সন্দেহ যে মোদী আমাকে আদৌ চেনেন কি না। ঠিক আছে, মোদী না থাকলে তো আমি থাকব না। আমার মামলাও উঠে যাবে। শ্রীনি দেখতেই পাবে। আদালত অবমাননার মামলা এই সপ্তাহে করছি। দেখব ও বোর্ড প্রেসিডেন্টের চেয়ারে কী ভাবে বসে।”
আদিত্য বলছেন ঠিক। কিন্তু জানা গেল শ্রীনিও পাল্টা স্ট্র্যাটেজি ঠিক করে ফেলেছেন। প্রথমে মোদীকে পুরোপুরি হঠিয়ে দেবেন। তা হলে পড়ে থাকবেন শুধু পওয়ার। মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার ক্ষমতায় যদি শেষ পর্যন্ত আসেনও পওয়ার, সেটা হতে হতে মাঝ অক্টোবর। তত দিনে শ্রীনির হিসেবমতো তিনি বোর্ড প্রেসিডেন্টের চেয়ারে পুরোপুরি ফিরে আসছেন। আসন্ন বোর্ড নির্বাচন নিয়েও শ্রীনির স্ট্র্যাটেজি শোনা গেল। তিনি নাকি ধরে রাখছেন বার্ষিক সভায় নির্বাচন হতে পারে। তাই ঠিক করেছেন, বিশেষ সাধারণ সভায় সদস্যরা গেলে তাঁদের নির্বাচনের দিন পর্যন্ত চেন্নাইয়েই থাকতে বলা হবে। যাতে বিদ্রোহের সামান্যতম আঁচ তৈরি হলেও সেটা তাঁর নখদর্পণে থাকে!
|