ঢেলে সাজবে ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানা। এর জন্য ‘মাস্টার প্ল্যান’ অনুমোদন করেছে সেন্ট্রাল জু অথরিটি। প্রকল্প রূপায়ণের জন্য খরচ হবে আনুমানিক দশ কোটি টাকা। প্রথম পর্যায়ে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আগামী দেড় বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে চিড়িয়াখানার সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ শেষ করা হবে। শুধু তাই নয়, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই চিড়িয়াখানায় আসছে চিতাবাঘ ও ঘড়িয়াল-সহ বেশ কিছু নতুন পশুপাখি।
ঝাড়গ্রাম শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ধবনি এলাকায় ৩৪ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের অধীনে থাকা মিনি চিড়িয়াখানা। বর্তমানে এখানে ৭৭টি চিতল হারিণ ও একটি স্বর্ণ মৃগ ছাড়াও রয়েছে হায়না, ভালুক, খেঁকশিয়াল, হুড়াল, তারা কচ্ছপ, গোসাপ, শকুন, সজারু, ভাম, ফিসিং ক্যাট, জংলি বিড়াল, নেউল, গন্ধগোকুল, বাঁদর, হনুমান, কুমির, মদনটাক-সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও সাপ। ঝাড়গ্রামের অন্যতম দ্রষ্টব্য এই চিড়িয়াখানাটি সংস্কারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানাচ্ছিলেন এলাকাবাসী। |
ঝাড়গ্রাম মিনি চিড়িয়াখানা।—ফাইল চিত্র। |
পশুপ্রেমী সংগঠন ‘সহেলি’র সম্পাদিকা স্বাতী দত্ত বলেন, “পশুপ্রাণীদের আরও খোলামেলা ভাবে রাখার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে রাজ্য বন্যপ্রাণ
শাখাকে জানিয়ে এসেছি। অবশেষে চিড়িয়াখানাটির জন্য মাস্টার প্ল্যান অনুমোদিত হওয়ায় আমরা খুশি।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গলমহলের পর্যটন প্রসারে বিশেষ ভাবে উত্সাহী। সেই কথা মাথায় রেখে আগামী দেড় বছরের মধ্যে চিড়িয়াখানাটির ভোল বদলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। ঝাড়গ্রামের ডিএফও আশিসকুমার সামন্ত বলেন, “সম্প্রতি ওয়েস্ট বেঙ্গল জু অথিরিটির সদস্য-সচিব বি আর শর্মা ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানাটি পরিদর্শন করে গিয়েছেন। প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ টাকায় হরিণের জন্য নতুন করে পৃথক তিনটি এনক্লোজার করা হবে। এ ছাড়া সাতশো বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে চিতাবাঘের জন্য একটি এনক্লোজার হবে। কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এই প্রথম এই চিড়িয়াখানায় চিতাবাঘ আসছে। উত্তরবঙ্গ থেকে চিতাবাঘটি আনা হচ্ছে। সংস্কার করা হবে ভালুকের এনক্লোজার।” আসন্ন শীতের মধ্যে চিড়িয়াখানায় একাধিক নতুন অতিথিকে নিয়ে আসার ব্যাপারে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ।
এখন চিড়িয়াখানায় একটি এনক্লোজারের মধ্যেই বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ রাখা আছে। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী চিতল হরিণদের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা এনক্লোজার করা হচ্ছে। এ ছাড়া স্বর্ণমৃগ ও সম্বরের জন্যও আলাদা এনক্লোজার হচ্ছে। এনক্লোজার তিনটি এমন ভাবে করা হচ্ছে, যাতে দর্শকেরা সহজে নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে হরিণের দঙ্গলকে দেখতে পান। চিড়িয়াখানার সামনের জালের ফেন্সিংটি আট ফুট উচু করা হচ্ছে। এ ছাড়া পিছনের দিকে উঁচু কংক্রিটের পাঁচিল করা হচ্ছে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, চিড়িয়াখানার ভিতরে রাস্তাঘাট, বিশ্রামের ব্যবস্থা, নিকাশি, রান্নাঘর, পানীয় জলের ব্যবস্থা, পশুদের পরিচর্যার সরঞ্জাম-সহ সব কিছুরই উন্নতি ঘটানো হবে। আশিসবাবু জানান, দার্জিলিং চিড়িয়াখানা থেকে দু’জোড়া জাঙ্গল ফাউল বা বনমোরগ আসছে। এ ছাড়া আরও দু’জোড়া ‘কালিজ পেসান্ট’ আনা হচ্ছে। শীতের মধ্যে আরও তিনটি কুমির ও একটি ঘড়িয়ালও আসবে ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানায়। |