রাস্তা চওড়া করার জন্য কাটা হয়েছিল কয়েকশো গাছ। বন দফতর বলেছিল, এর বদলে গাছ লাগাতে হবে ঠাকুরপুকুরের বাখরাহাটে। কিন্তু পূর্ত দফতর তা লাগাল জেমস লং সরণির উপরে। তা-ও যথাযথ ভাবে নয়। ফুটপাথের টালি তুলে দিয়ে, ঠিক মতো গর্ত না খুঁড়েই ঘেঁষাঘেঁষি করে যে ভাবে লাগানো হয়েছে ওই গাছ, তা দেখে চোখ কপালে বন দফতরের কর্তাদেরই। কারণ, এ ভাবে লাগালে কোনও গাছই বাঁচানো সম্ভব নয় বলে বনকর্তারা জানিয়েছেন।
তারাতলা থেকে জোকা পর্যন্ত জেমস লং সরণি সম্প্রসারণের জন্য গাছ কাটার অনুমতি চেয়েছিল পূর্ত দফতর। গত মে মাসে বন দফতর ৫৮৯টি গাছ কাটার অনুমতি দেয় বলে জানায় ওই দফতর। শর্ত ছিল, এর বদলে বাখরাহাটে লাগাতে হবে এর পাঁচ গুণ সংখ্যক গাছ। শর্ত মেনে অনুমতি পাওয়ার পরে কয়েকশো পূর্ণবয়স্ক গাছ কেটে ফেলে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে পূর্ত দফতর। এই সময়ে গাছ কাটার বিরোধিতা করে ‘জেমস লং সরণি গাছ বাঁচাও ক্লাব সমন্বয় কমিটি’ তৈরি করেন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। সাধারণ মানুষের বিরোধিতায় পূর্ত দফতর রাস্তার কাজ বন্ধও করে দেয়। কিন্তু সম্প্রতি ওই এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, অগস্ট মাসে ওই রাস্তার ডিভাইডারে এবং ফুটপাথের টালি তুলে সামান্য গর্ত করেই দেরদারু এবং মেহগনি গাছ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এলাকার বাসিন্দা উমা রায় সুব্রহ্মণ্যম বলেন, “এ ভাবে লাগানো গাছ বাঁচানো সম্ভব নয়। দু’টি গাছের মধ্যে ঠিক মতো ফাঁকও রাখা হয়নি। আসলে পূর্ত দফতর ধোঁকা দেওয়ার জন্য এ ভাবে গাছ লাগিয়েছে। এতে কাজের কাজ কিছুই হবে না।” |
নিয়মের তোয়াক্কা না করে বাড়ির দেওয়াল ঘেঁষে বসানো হয়েছে গাছ।
জেমস লং সরণিতে। ছবি: অরুণ লোধ। |
ওই রাস্তার ফুটপাথ যে গাছ লাগানোর উপযুক্ত নয়, তা জানিয়েছেন এলাকার বরো চেয়ারম্যানও। ১৩ নম্বর বরো চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ বলেন, “জেমস লং সরণির উপরে অনেক জায়গাতেই ফুটপাথের নীচে জল নিকাশির পাইপলাইন রয়েছে। আমরা সেটা বাঁচিয়ে এবং ফুটপাথের শক্ত মাটির বদলে রাস্তার পাশের নরম মাটিতে গাছ লাগাতে বলেছিলাম। কিন্তু তা করা হয়নি।”
জেমস লং সরণির উপরে কোনও গাছ লাগানোর অনুমতি দেয়নি বন দফতরও। দফতরের এক কর্তা বলেন, “আমরা বাখরাহাটে গাছ লাগাতে বলেছিলাম। জেমস লং সরণির উপরে কেন ওই গাছ লাগানো হল, তা বুঝতে পারছি না। গাছ বাঁচানোর জন্য জেমস লং সরণির ফুটপাথ উপযুক্ত নয়।” এ ব্যাপারে পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার বলেন, “স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ ছিল, জেমস লং সরণির গাছ কেটে বাখরাহাটে গাছ লাগানোর কোনও মানে হয় না। তাই জেমস লং সরণিতে গাছ বসানো হয়েছে। তবে বাখরাহাটেও গাছ লাগানো হবে।”
ফুটপাথে কিংবা রাস্তার ডিভাইডারে গাছ বসাতে গেলে ঠিক কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে হয়?
উদ্যান-বিশেষজ্ঞ রঞ্জিত সামন্ত জানান, ফুটপাথে গাছ বসাতে গেলে বাড়ির দেওয়াল থেকে দূরত্বের পাশাপাশি দু’টি গাছের মধ্যেও নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা প্রয়োজন। না হলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। তিনি বলেন, “ফুটপাথের টালি তুলে গাছ বসালে মাটিকেও সেই ভাবে তৈরি করে নিতে হয়। পুরনো মাটির সঙ্গে নতুন মাটি এবং কিছু পরিমাণে সার দিয়ে মাটিকে তৈরি করে তবেই গাছ লাগানো উচিত।” উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ত্বিষা লাহিড়ীও বলেন, “রাস্তার ডিভাইডার বা ফুটপাথে ছোট দেবদারু গাছ বসালে মাটির গুণমান দেখাটাও জরুরি। মাটিতে বালির পরিমাণ বেশি হলে গর্তের গভীরতা বেশি হতে হবে। এঁটেল মাটির ক্ষেত্রে গর্ত কম খুঁড়লেও চলবে। না হলে গাছ বড় হলে সামান্য ঝড়েই উপড়ে পড়ে যাবে।”
এ ব্যাপারে কী বলছে পূর্ত দফতর?
ওই রাস্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “বন দফতরের পরামর্শ মেনেই ওই জায়গায় গাছ লাগানো হয়েছে। ঠিক মতো লাগানো হয়েছে কি না, তা দেখার জন্য আমরা ইতিমধ্যেই বন দফতরের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি।” |
|
গাছ-কথা |
যে ভাবে বসেছে |
• বাড়ির দেওয়াল ঘেঁষে।
• ফুটপাথের টালি সরিয়ে শক্ত মাটিতে।
• ভাল করে গর্ত না খুঁড়ে।
• দু’টি গাছের মধ্যে দূরত্ব ঠিক নেই।
• তিনটে কঞ্চি আর বস্তা দিয়ে ঘিরে। |
যে ভাবে উচিত (উদ্যান বিশেষজ্ঞদের মতামত) |
• দেওয়াল থেকে অন্তত দেড় ফুট দূরে।
• দু’টি গাছের মধ্যের দূরত্ব ৩ ফুট।
• ফুটপাথে দেড় ফুট গর্ত খুঁড়ে।
• টালি তুলে বসালে মাটিকে তৈরি করা।
• পুরনো মাটিতে চাই নতুন মাটি এবং সার।
• লাগানোর পরে তিন বছর পরিচর্যা।
• গাছের চারপাশে মজবুত বেড়া। |
|