‘অরণ্য মানবের’ জীবনের ছবি ক্যামেরা-বন্দি করতে গিয়েছিলেন কলকাতার পরিচালক। নতুন অরণ্য তৈরির কাজে জড়িয়ে পড়লেন তিনি নিজেই। সিনেমার চরিত্র হয়ে উঠলেন পরিচালনায় জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত তমাল দাশগুপ্তও।
‘অরণ্য-মানব’ যাদব মোলাই পায়েং মানুষটা যে এইরকমই। তাঁর আর্জি ফেরাতে পারেননি তমালবাবুও।
আম-জনতার মাপকাঠিতে ধরা যাবে না যাদবকে। অরণ্য তাঁর খ্যাপামি। তাঁর রোজনামচা নিয়ে সিনেমা তৈরিতে যাওয়া কলকাতার লোকজনকে নৌকা থেকে নামালেন ব্রহ্মপুত্রের চরে। নৌকাতেই পড়ে থাকল ক্যামেরা, অন্য যন্ত্র। সকলকে দিয়ে গাছ পোঁতালেন নদীর তীরে। নতুন এক অরণ্য তৈরির জন্মলগ্নের সাক্ষী থাকলেন তমালবাবুরা।
শৈশবে যোরহাটের উত্তর-পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্রের বালুচরে গরু চরাতে যেতেন যাদববাবু। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে কাঠোনিবাড়ি চরে বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ করতে থাকেন তিনি। ক্রমে তা ছোট্ট একটা জঙ্গলের চেহারা নেয়। বছর এগতে আয়তনেও বেড়েছে ওই অরণ্য। এখন চিতল, হগ ডিয়ার-সহ একাধিক প্রজাতির হরিণ, বাঘ, বুনো মোষ, হাতি, সাপ, বাঁদর, বিভিন্ন প্রজাতি পাখির ‘ঘরবাড়ি’ যাদববাবুর ওই জঙ্গলে। বহুজাতিক সংস্থা, সরকারের অরণ্য প্রকল্পের আড়ম্বর থেকে দূরে জীবনের তিন দশকের চেষ্টায় বছর পঞ্চশের যাদববাবুর সেই ৩০০ হেক্টর সবুজ দ্বীপ এখন পরিচিত তাঁরই নামে।
‘মোলাই কাঠোনিবাড়ি’। ডাকনাম—‘মিনি কাজিরাঙা’।
যাদববাবুকে ‘ফরেস্ট ম্যান অফ অসম’ সম্মানে ভূষিত করে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়। জঙ্গল তৈরির গল্প সুদূর প্যারিসেও শুনিয়ে এসেছেন অরণ্য-মানব।
তাঁর জীবনের গল্প নিয়ে সিনেমা করতে সদলবলে কলকাতা মাজুলি পৌঁছেছেন তমালবাবু। শুক্রবার থেকে শুটিং-ও শুরু হয়েছে। মোলাই অরণ্যের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, “সবার চোখের আড়ালে একটা মানুষ এতবড় জঙ্গল গড়েছেন ভাবতে পারিনি।”
তমালবাবু জানান, যাদববাবুর স্ত্রী বিনীতাদেবীও স্বামীর জঙ্গল তৈরির কাজের সমান শরিক। মেয়ে মুনমুনি, বছর দশেকের ছেলে সঞ্জয়ও বাবার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করে। মাজুলির জীবন, বিহু সংস্কৃতি, সত্র—সব কিছুকেই আগলে রেখেছে মাজুলির ওই নতুন প্রজন্ম।
পরিচালক বললেন, “নৌকায় ওঁর হাতে গড়া জঙ্গলে যাচ্ছিলাম। মাঝরাস্তায় নতুন একটা বালুচরে নৌকা থামিয়ে আমাদের নিয়ে নামলেন যাদববাবু। সবাইকে দিয়ে গাছ লাগালেন সেখানে। ওই চরে আরও একটা জঙ্গল গড়বেন তিনি।” তমালবাবু জানান, যাদববাবুর বক্তব্য, ব্রহ্মপুত্রের চরগুলিতে এমন অনেক জমি রয়েছে যেখানে বনসৃজন সম্ভব। কিন্তু বন দফতর উদ্যোগ না-নেওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না। সেখানেও তিনি অরণ্যের সবুজ ছড়িয়ে দিতে চান। দেশের যে কোনও প্রান্তেই জঙ্গল তৈরির কাজে এগতে রাজি যাদববাবু।
যাদববাবুর কথায়, “নগর-কেন্দ্রিক সভ্যতার উন্নতির পাশাপাশি পরিবেশকেও বাঁচাতে হবে। ছোটরাই এ কাজ সবচেয়ে ভালোভাবে করতে পারে। প্রতি বছরের পাঠক্রমে স্কুলপড়ুয়াদের অন্তত দু’টি গাছ রোপণ এবং সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করা বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। একটা গাছ তাদের নিজেদের জন্য। অন্যটা বিশ্বকে অক্সিজেন দেওয়ার জন্য।”
মেঘালয়ে বন্ধ। বন্ধে ব্যাহত হল মেঘালয়ের জনজীবন। রাজ্যে বহিরাগতদের প্রবেশের ক্ষেত্রে ‘ইনারলাইন পারমিট’ চালুর দাবিতে আজ ১২ ঘণ্টার বন্ধ ডেকেছিল কয়েকটি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ। শিলং-সহ রাজ্যের অন্য জায়গায় স্কুল-কলেজ, অফিস বন্ধ ছিল। রাস্তায় যানবাহনেরও দেখা মেলেনি। |