সম্পাদকীয় ২...
বিচ্ছিন্ন?
ব্রাত্য বসু নিজেকে বাক্সিদ্ধ বলিয়া দাবি করেন নাই। কিন্তু রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী অন্তত এমন কথা না বলিলেই ভাল করিবেন, যাহা প্রায় মুহূর্তের মধ্যে ভ্রান্ত প্রমাণিত হইবে। উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহারে মেঘনাদ সাহা কলেজে নকল করায় লিপ্ত পরীক্ষার্থীদের খাতা কাড়িয়া লওয়ায় মহিলা অধ্যক্ষা যখন প্রহৃত হন, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সেই ঘটনাটিকে ‘বিচ্ছিন্ন’ আখ্যা দিয়াছিলেন। তাহার পরে প্রায় সপ্তাহকাল অতিক্রান্ত। বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভয়ঙ্কর সব শিক্ষক নিগ্রহ ঘটিয়া চলিয়াছে। এতগুলি ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা যোগ করিলে ফল কী দাঁড়ায়? গত বছর এক সময় বিভিন্ন কলেজে অশান্তি চরমে উঠিয়াছিল, যাহার পরিণামে কলেজে ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচন বন্ধ রাখা হয়। এখন আবার হিংস্র অশান্তির নূতন পর্ব শুরু হইয়াছে। ইহাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলিলে যাহা করা হয়, ভদ্রভাষায় তাহাকে ভাবের ঘরে চুরি বলে।
শিক্ষামন্ত্রী ইটাহারের ঘটনার পরেই কথা দিয়াছিলেন, এমন ঘটনা— ‘বিচ্ছিন্ন’— হইলেও বরদাস্ত করা হইবে না, যাহাতে এই অন্যায়ের পুনরাবৃত্তি না হয় তাহা নিশ্চিত করা হইবে। যে কোনও সংগঠনকেই তিনি এমন আচরণ হইতে নিবৃত্ত থাকিতে বলিয়াছেন। মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং একই আশ্বাস তথা সতর্কবাণী ঘোষণা করিয়াছিলেন। কিন্তু সেই সকল সতর্কবার্তা কেহ গ্রাহ্য করিতেছে কি? লক্ষণীয়, মুখ্যমন্ত্রী যে দিন কলিকাতায় অনুগামী ছাত্র সংগঠনের সমাবেশে শিক্ষকদের ‘সম্মান করার’ এবং ‘দুঃখ না-দিবার’ আর্জি জানাইতেছেন, তখনই এই সব অপকাণ্ড ঘটিতেছে এবং তাহার দায়ে তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের সদস্য-সমর্থকরা অভিযুক্ত হইতেছেন। বুঝিতে অসুবিধা হয় না, প্রশাসনের চালকদের কথার ধার নাই, ভারও নাই। তাঁহাদের হম্বিতম্বি এবং সুভাষিতাবলিই সার হইতেছে।
কেন এমন ঘটিতেছে, তাহার কারণ বোঝা কঠিন নহে। যাহারা দুষ্কর্ম করে, তাহারা নির্বোধ নহে, অচেতনও নহে। বরং তাহার অধিকমাত্রায় সচেতন এবং চতুর। অপরাধ এবং শাস্তির সম্পর্কটি কতখানি এবং কী রূপ, তাহারা অভিজ্ঞতা হইতে তাহা বুঝিয়া লয়। রাজ্যপাল ছাত্রদের ঠান্ডা করিবার জন্য যে ব্যবস্থার বিধান দিয়াছেন, তাহা লইয়া প্রশ্ন আছে। রাজ্যপালের এমন উক্তি করা উচিত হয় নাই, তাহাও অনস্বীকার্য। কিন্তু দুষ্কর্মের শাস্তি অবশ্যই জরুরি। প্রশাসনের আচরণ দেখিয়া যদি দুষ্কৃতীদের মনে হয় যে, ইহারা যত গর্জাইবে, তাহার এক শতাংশও বর্ষাইবে না, তবে কেবল মন্ত্রিবাক্যে টনক নড়িবার কোনও কারণ নাই। বিশেষত, শাসক দলের অনুগামী হইলে যদি দুষ্কর্ম করিয়াও পার পাওয়া যায়, তাহা হইলে এই বেপরোয়া মনোভাব আরও বেশি প্রশ্রয় পায়। বামফ্রন্ট জমানায় ঠিক এমন দলীয় পক্ষপাতিত্বই সুলভ ছিল। কলেজ ‘দখল’ হইতে শুরু করিয়া শিক্ষক নিগ্রহ, অধ্যক্ষের লাঞ্ছনা ও শারীরিক নির্যাতনে সে দিনও শাসক দলের অনুগামী ছাত্ররা পিছপা হয় নাই। শাসকের বরাভয় মাথার উপর থাকায় এই যথেচ্ছাচার সে দিনও অনিয়ন্ত্রিত ছিল। দুর্ভাগ্য, রাজ্যে ক্ষমতার বদল সেই অপসংস্কৃতিতে বদল আনিতে পারে নাই, এখনও বিরোধী দলের অনুগামী ছাত্ররা অভিযুক্ত হইলে প্রশাসনের যে তৎপরতা দেখা যায়, শাসক দলের অনুগামী ছাত্রের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাহার তুল্য নিষ্ক্রিয়তা। এই ধারায় যথার্থ পরিবর্তন জরুরি। প্রশাসন কেবল নিরপেক্ষ হইলে চলে না, তাহার নিরপেক্ষতাকে বিশ্বাসযোগ্য হইতে হয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.