সম্পাদকীয় ১...
গণতন্ত্রের জমি
কশো উনিশ বছর পরে যখন একটি আইন সংশোধিত হয়, তখন আর যাহাই হউক, সংশোধনটিকে হঠকারী বলা কঠিন। অথচ জমি অধিগ্রহণ আইন (১৮৯৪) রদ করিয়া জমি অধিগ্রহণের জন্য ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা সহ বিশদ প্রক্রিয়া চালু করিবার জন্য নূতন আইন প্রণয়নে দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকারের তৎপরতা ‘অতিসক্রিয়তা’র দুর্নাম কুড়াইয়াছে। সমালোচনা প্রধানত দুইটি। এক, এই আইন পাশ করাইয়া প্রধান শাসক দল কৃষক-দরদি সাজিয়া ভোটের বাজারে সুবিধা আদায় করিতে চাহিতেছে। দুই, বিনিয়োগকারীরা যখন সম্পূর্ণ মুহ্যমান, তখন খাদ্য নিরাপত্তা বিলের উপর্যুপরি এই বিলটি পেশ করিয়া সরকার সংকেত দিয়াছে যে, তাহারা গ্রাম ও কৃষি লইয়াই চিন্তিত, শিল্পবাণিজ্যের প্রতি তাহার বিন্দুমাত্র মনোযোগ নাই। বস্তুত, নূতন আইনে শিল্পের জন্য জমি সংগ্রহ করা কঠিন ও সময়সাপেক্ষ হইয়া পড়িবে, এই আশঙ্কা অত্যন্ত প্রবল। ফলে এই বিলটিকে বিনিয়োগের প্রতি সরকারের নিছক ঔদাসীন্য নয় বিরূপতার পরিচায়ক হিসাবে দেখা হইতেছে। প্রথম সমালোচনার উত্তর: নূতন আইন যথাযথ কি না, তাহা ভিন্ন প্রশ্ন, কিন্তু ভোটে জিতিবার উদ্দেশ্যে যদি আইন বদলায়, গণতন্ত্রে আপত্তি কীসের?
দ্বিতীয় সমালোচনার সহজ উত্তর নাই। বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়ার জন্য যাহা করণীয়, তাহা অবশ্যই অবিলম্বে করা জরুরি। কিন্তু বিনিয়োগকারী নিরুৎসাহ হইবেন বলিয়া জমি অধিগ্রহণের আইন সংশোধন করা উচিত নয়, এই মত যুক্তির ধোপে টেকে না। পুরানো আইনটি কেবল ঔপনিবেশিক উনিশ শতকের নয়, উহা কার্যত নির্বিচার অধিগ্রহণের আইন, জমির মালিক এবং জমির উপর নির্ভরশীল মানুষের প্রতি কোনও প্রকার সুবিচারের চেষ্টা সেখানে নাই। সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতি উহাকে ‘প্রতারণা’ বলিয়াছিলেন। আখ্যাটি কর্কশ হইতে পারে, মিথ্যা বলা কঠিন। নূতন আইনে তিনটি বিষয়ে জোর দেওয়া হইয়াছে: জমির মালিকের সম্মতি, জমির উপর নির্ভরশীল মানুষের জন্য ক্ষতিপূরণ এবং উচ্ছিন্ন মানুষের পুনর্বাসন ও পুনর্বসতি। প্রত্যেকটিই নীতিগত ভাবে সংগত ও আবশ্যক। বস্তুত, গত কয়েক বছরে তিনটি প্রশ্নের গুরুত্বই অনেক বেশি করিয়া স্বীকৃত হইয়াছে। তাহার পিছনে এক দিকে জন-অধিকারের জন্য বর্ধমান চেতনা ও তাহার দাবিতে উত্তরোত্তর আন্দোলন, অন্য দিকে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এই আন্দোলনের প্রবল হইতে প্রবলতর প্রভাব। ইহার সহিত অবশ্যই যুক্ত হইয়াছে আদালতের বিভিন্ন রায় ও নির্দেশ। কৃষি, অরণ্য, কৌমজীবন ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়কে অগ্রাহ্য করিয়া যথেচ্ছ জমি অধিগ্রহণের যুগ চলিয়া গিয়াছে, তাহা এখন স্পষ্ট। এই আইন-প্রস্তাবে সেই বাস্তবের প্রতিফলন ঘটিয়াছে।
তাহার পরেও প্রশ্ন থাকিয়া যায়। সম্মতি আদায় এবং ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের বিশদ আয়োজন ব্যয়সাপেক্ষ এবং সময়সাপেক্ষ। তাহা বিনিয়োগের পক্ষে অসুবিধাজনক। সেই কারণেই সরকারের কর্তব্য, সমগ্র প্রক্রিয়াটি যাহাতে দ্রুত এবং মসৃণ ভাবে সম্পন্ন হয়, তাহা নিশ্চিত করা। রাজ্য সরকারের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নূতন আইন রূপায়ণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্য সরকারের অধিকার এবং কর্তব্যও অনেকখানি। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সমন্বয় ব্যতীত এই ধরনের আইনের সুষ্ঠু রূপায়ণ এবং তাহার মাধ্যমে বিনিয়োগের প্রসার সম্ভব নহে। যেহেতু সরকার দলবশ, সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলির দায়িত্বও অনেক। তাহাদের নেতির রাজনীতি এই আইনের সার্থক প্রয়োগে বাধা দিবে। অন্য দিকে, রাজনৈতিক দলগুলি সদর্থক ভূমিকা লইলে অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াটি সচল হইতে পারে। তাহাতে কৃষি ও শিল্প, উভয়েরই লাভ। মনে রাখা দরকার, এই আইন সংসদে পাশ হইলে গণতন্ত্রের প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যাইবে মাত্র। আইনটির সার্থক প্রয়োগেই ভারতীয় গণতন্ত্রের পরবর্তী পরীক্ষা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.