বিহার, ঝাড়খণ্ডের পরে এ রাজ্যেও আধুনিক মানের সিমেন্ট উৎপাদন শুরু করল এসিসি (অ্যাসোসিয়েটেড সিমেন্ট কোম্পানিজ) সংস্থা। সোমবার পুরুলিয়ার সাঁতুড়ির মধুকুন্ডার কারখানা থেকে ওই বিশেষ সিমেন্ট (এসিসি প্লাস) উৎপাদন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হল। ছিলেন সংস্থার পূর্বাঞ্চলের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক (সিইও) বিবেক চাওলা।
তিনি বলেন “প্রথম ধাপে ঝাড়খণ্ডের চাঁইবাসা ও বিহারের একটি কারখানা থেকে উৎপাদিত ওই সিমেন্ট দুই রাজ্যের গ্রাহকদের কাছে সমাদৃত হয়েছ। পরের ধাপে সাঁতুড়ির এই কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। এখান থেকেই সিমেন্ট সরবরাহ করা হবে কলকাতা, আসানসোল, খড়্গপুর, জলপাইগুড়ির মতো বড় এলাকায়।” খড়্গপুরে আধুনিক মানের সিমেন্ট তৈরির দ্বিতীয় কারখানা গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান বিবেকবাবু। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনাও এগিয়েছে।
সাঁতুড়ি ব্লকের বালিতোড়া পঞ্চায়েত এলাকায় দামোদর নদের পাশে ওই সংস্থার কারখানায় বছরে ৫.২৫ লক্ষ টন সিমেন্ট উৎপাদন হয়। সংস্থা সূত্রের খবর, এ বার ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করে আরও একটি ইউনিট চালু করে সাঁতুড়ির এই কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে বছরে ৬ লক্ষ টন করা হয়েছে। |
নতুন উৎপাদনের পরে কর্মীদের উচ্ছ্বাস। —নিজস্ব চিত্র। |
সংস্থার আধিকারিকদের দাবি, উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ার ফলে এলাকায় কর্মসংস্থান বাড়বে। এমনিতেই প্রত্যন্ত এই এলাকায় এসিসি-র কারখানার জন্য আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হয়েছে।প্রথমে এই কারখানা শুরু হয়েছিল কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ উদ্যোগে। পরে রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগম তাদের অংশীদারিত্ব বিক্রি করে কেন্দ্রের সিমেন্ট কর্পোরেশনকে। ঘাটতিতে চলা এই কারখানা অধিগ্রহণ করে এসিসি। তার পরেই কারখানা লাভের মুখ দেখে।
স্থানীয় সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া জানান, তাঁরা নীতিগত ভাবে বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে হলেও এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে এসিসি-কে স্বাগত জানিয়েছিলেন। এই কারখানায় শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি বাসুদেববাবু এ দিন বলেন, “মধুকুন্ডার এই সিমেন্ট করাখানাই পুরুলিয়ার প্রথম সংগঠিত বড় শিল্প। ওই কারখানার ফলে এলাকার উন্নয়ন হচ্ছে। কমবেশি চারশো জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। কর্মসংস্থান আরও বাড়াতে উৎপাদন বাড়িয়ে বছরে ১০ লক্ষ টন করার দাবি জানানো হয়েছে।” তৃণমূলের সাঁতুড়ি ব্লক সভাপতি রামপ্রসাদ চক্রবর্তীও বলেন, “এলাকায় আর্থ সামাজিক উন্নয়নে এই সিমেন্ট কারখানার অবদান যথেষ্ট। পরোক্ষ কর্মসংস্থান ছাড়াও পণ্য পরিবহণের মাধ্যমে এলাকায় বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।”
এলাকায় সমাজিক উন্নয়নে প্রথম থেকেই গুরুত্ব দিচ্ছে এই বেসরকারি সংস্থা। সুনুড়ি, দুমদুমি, মকড়া, বাখুলিয়া ও বালিতোড়াএই পাঁচটি গ্রামে তাঁরা সামাজিক উন্নয়নের কাজ করছেন বলে এ দিন জানান কারখানার ডিরেক্টর মনোজ জিন্দল। গ্রামের বাসিন্দাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়। সংস্থার দাবি, সুনুড়ি গ্রামে ২০ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে সেচ ব্যবস্থা গড়া হয়েছে। প্রায় দুশো একর জমি রয়েছে সেচের আওতায়। উপকৃত হচ্ছে চারশোর বেশি পরিবার। ছয় একর পতিত জমিতে সব্জি চাষের প্রশিক্ষণ দিয়ে আলু, বেগুন, ব্রকোলি, টম্যাটো চাষ শুরু হয়েছে। এলাকার আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম দুমদুমিতে পাইপ লাইনের মাধ্যেমে বছর ভর জল সরবরাহও করে সংস্থাটি। মনোজবাবু জানান, এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ধুপকাঠি, কেঁচো সার, নকশা, কাঁথা সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে মহিলা সদস্যদের আর্থিক মান উন্নয়নে তাঁরা জোর দিয়েছেন। তার কথায় “এলাকার এই পাঁচটি গ্রামের সামাজিক উন্নয়নে বিশেষভাবে নজর দিচ্ছি আমরা”। |