টালমাটাল টাকাই এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে গাড়ি শিল্পের কাছে। হয়ে উঠেছে শাঁখের করাত।
এক দিকে, ডলারের তুলনায় টাকার দরের প্রায় লাগাতার পতনের কারণে যন্ত্রাংশ আমদানির খরচ লাফিয়ে বাড়ছে গাড়ি সংস্থাগুলির। তা পুষিয়ে দিতে গাড়ির দাম বাড়ানোর কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছে তারা। কিন্তু সেখানে আবার তাদের দ্বিধায় ফেলছে বাজারের হাল। কারণ, গত ন’মাস ধরে দেশে এমনিতেই যাত্রী গাড়ি বিক্রি তলানিতে। এর উপর তেলের দাম বাড়লে, বিক্রি আরও ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা। তাই এই পরিস্থিতিতে গাড়ির দাম বাড়ালে বিক্রি আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছে তারা। কয়েকটি সংস্থা দাম বাড়ালেও, এখনও পর্যন্ত তা ঠেকিয়ে রেখেছে অন্য গাড়ি নির্মাতারা।
অবশ্য এই দোলাচল যে এখনই যাওয়ার নয়, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে সোমবারও। আগের দু’দিন ওঠার পর এ দিন ডলারের সাপেক্ষে ফের ৩০ পয়সা পড়েছে টাকা। তার উপর সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের খবর অনুযায়ী, অগস্টেও খুব বেশি বদলায়নি দেশের যাত্রী-গাড়ি বাজার। |
দেশের বাজারে মারুতির বিক্রি এক লাফে ৫১% বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু তার প্রধান কারণ গত বছর এই একই সময়ে কারখানা বন্ধ থাকায় তখন অত্যন্ত কম উৎপাদন হওয়া। বিক্রি বেড়েছে হুন্ডাই ও ফোর্ডের। কিন্তু তা-ও মূলত রফতানিতে ভর করে। টাটা মোটরস, জেনারেল মোটরস, টয়োটার মতো সংস্থার বিক্রি এখনও পড়তির দিকে। বরং কয়েক মাস পরে বিক্রি বৃদ্ধির মুখ দেখেছে বজাজ, হিরো মোটো কর্পের মতো মোটরসাইকেল-স্কুটার সংস্থা।
এই যেখানে বাজারের হাল, সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই চট করে দাম বাড়াতে পারছে না অনেক সংস্থা। যদিও এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে, তা করা ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না বলে মেনে নিচ্ছে তারা।
জেনারেল মোটরস কর্তা পি বালেন্দ্রন জানান, এই মাসেই তিনটি গাড়ির দর ২-১০ হাজার টাকা বাড়ছে। দাম বাড়াচ্ছে মার্সিডিজ বেঞ্জ-ও। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে মারুতি-সুজুকি, হোন্ডা-সিয়েল কার, হুন্ডাই ইত্যাদি সংস্থা। হোন্ডা কর্তা জ্ঞানেশ্বর সেন বলেন, “পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। কিছু দিন এই বাড়তি খরচ বহন করা গেলেও, দীর্ঘ মেয়াদে তা সমস্যার।”
মারুতির মুখপাত্রও বলেন, “বেশি দিন এই ভার বওয়া সম্ভব নয়।” অবশ্য রফতানিতে ভর করে এই চাপ কিছুটা এড়াচ্ছে হুন্ডাই। কর্তা আর সেতুরমনের দাবি, “আমাদের ৪০ শতাংশ গাড়িই রফতানি হয়। যা টাকার পতনের ধাক্কা সামালাতে কিছুটা সহায়ক।” |