|
|
|
|
মানকরের হলে টিনের ছাউনি, বিয়ের অনুষ্ঠানেই ভরছে আসন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বুদবুদ |
এলাকার নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে মঞ্চ দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছিল প্রেক্ষাগৃহটি। কিন্তু তারপর থেকে বিয়ে-শাদির টুকটাক অনুষ্ঠান ছাড়া তা মোটামুটি ফাঁকাই পড়ে থাকে। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, পরিকাঠামোগত ত্রুটি রয়েছে প্রেক্ষাগৃহটিতে।
২০০৩ সালের ২ এপ্রিল মানকরের পল্লিমঙ্গল লাইব্রেরির পাশের জমিতে এই প্রেক্ষাগৃহটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। তৎকালীন সাংসদ সুনীল খাঁয়ের সাংসদ তহবিল থেকে অর্থ অনুমোদিত হয়। উদ্দেশ্য ছিল, এলাকার সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তিন দফায় মোট ২৬ লক্ষ টাকা খরচ করে এটি বানানো হয়। এলাকাবাসীরা ভেবেছিলেন, এতদিনে গান, নাচ, নাটক বা আবৃত্তির একটা নিজস্ব মঞ্চ পাওয়া গেল। কিন্তু প্রেক্ষাগৃহটি চালু হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই মোহভঙ্গ হয় বলে জানান তাঁরা। স্থানীয় কবি আনন্দগোপাল গোস্বামীর অভিযোগ, কোনও পরিকাঠামো ছাড়াই ওই প্রেক্ষাগৃহটি তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এত টাকা খরচ করে তৈরি করা প্রেক্ষাগৃহের সমস্যাটা কী? আনন্দগোপালবাবু জানান, প্রেক্ষাগৃহের ভিতরে যে মঞ্চটি আছে সেটি থেকে অনুষ্ঠান করলে নীচে বসে থাকা শ্রোতা দর্শকদের কাছে আওয়াজ ঠিকমতো পৌঁছয় না। তাঁর যুক্তি, প্রেক্ষাগৃহটি টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি। ফলে আওয়াজ গমগম করে। সাউন্ড বক্সের আওয়াজও একই ভাবে শ্রোতাদের কানে লাগে। তাঁর দাবি, “এখানে একবার অনুষ্ঠান করলে দ্বিতীয়বার কেউ আসে না।” তাঁর মতে, প্রেক্ষাগৃহটি এখন শিল্পী জগতে একটি বোঝা ছাড়া আর কিছুই নয়। মানকরের আরেক কবি কিশোরকুমার ঘোষেরও অভিযোগ, “ঘরটি এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যে মঞ্চ থেকে কবিতা পাঠ করলে দর্শকাসনে তার শব্দ স্পষ্ট পৌঁছয় না। মানকর অঞ্চল কংগ্রেসের সভাপতি জয়গোপাল দেরও একই অভিমত। তিনি জানান, তাঁরা একবার এখানে ইন্দিরা গাঁধী স্মৃতি রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে একটি অনুষ্ঠান করেছিলেন। কিন্তু সেই শেষ। তিনি সাফ বলেন, “আর আমরা এখানে কোনও অনুষ্ঠান করতে চাই না।” |
|
বন্ধ পড়ে প্রেক্ষাগৃহ। —নিজস্ব চিত্র। |
এলাকাবাসীর মধ্যেও প্রেক্ষাগৃহটি নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। মানকরের স্থানীয় বাসিন্দা, স্কুল শিক্ষক সুকুমার পাল জানান, এটি এখন শুধু বিয়ে বা অন্য কোনও আনন্দ উৎসবে ভাড়া দেওয়া হয়। যে কারণে এটি তৈরি করা হয়েছিল তার কিছুই আর হয় না। তাঁর অভিযোগ, প্রেক্ষাগৃহটিতে দর্শকদের জন্য কোনও ফ্যানের ব্যবস্থা নেই। তার উপর টিনের ছাউনি হওয়ায় গরমে কোনও দর্শক বসে থাকতে চান না। ছাদে পাখা লাগানোর কোনও ব্যবস্থা না থাকায় আয়োজকরা যা ফ্যান লাগান তাতে সবদিকে হাওয়া পাওয়া যায় না। সুকুমারবাবু অভিযোগের সুরে বলেন, “পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক ভাবে এটি তৈরি করার ফলে প্রেক্ষাগৃহের আসল উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে না।” স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, এলাকার সাংস্কৃতিক জগত এর থেকে কোনও উপকার পেল না। বর্তমানে প্রেক্ষাগৃহটি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন তৃণমূলের জেলা পরিষদের সদস্য পরেশচন্দ্র পাল। সমস্যার কথা তিনিও স্বীকার করেছেন। তাঁর অভিযোগ, তিনি এটির দায়িত্ব পেলেও আগের কোনও কাগপত্র এখনও তাঁর হাতে আসেনি। এ’বিষয়ে তিনি স্থানীয় বিডিওকেও জানিয়েছেন। তিনি জানান, প্রযুক্তিগত ত্রুটি থাকাতেই প্রেক্ষাগৃহটির এই হাল। তিনি বলেন, “চেষ্টা করব ত্রুটিমুক্ত করে প্রেক্ষাগৃহটিকে উপযুক্ত কাজে লাগানোর।” |
|
|
|
|
|