নিজের বাড়ির দোতলায় কম্পিউটারে কাজে ডুবে ছিলেন প্রৌঢ় শক্তিবিজ্ঞানী। চার যুবক হঠাৎই উপরে উঠে এসে জাপটে ধরল তাঁকে। চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে ফেলল রাজ্যের অপ্রচলিত শক্তি উন্নয়ন নিগমের ওই প্রাক্তন অধিকর্তার হাত-পা। বেঁধে দেয় তাঁর মুখও। তার পরে ঘরে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, নগদ টাকা, পদক, ফলক-সহ যা ছিল, সব কিছু লুটে নিয়ে পালাল দুষ্কৃতীরা।
|
শান্তিপদ গণচৌধুরী |
রবিবার রাত সওয়া ৮টা নাগাদ ডাকাতির এই ঘটনাটি ঘটেছে বাইপাস সংলগ্ন মাদুরদহ হোসেনপুরের একটি বাড়িতে। মহাতীর্থম সিটিজেন্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ওই বাড়ির মালিক শক্তিবিজ্ঞানী শান্তিপদ গণচৌধুরী। তাঁর স্ত্রী এবং ছেলেমেয়ে এখন বিদেশে। বাড়িতে ছিলেন শান্তিবাবু আর এক পরিচারিকা। পুলিশ ওই পরিচারিকার বয়ান উদ্ধৃত করে জানায়, রাত সওয়া ৮টা নাগাদ কলিং বেলের শব্দ শুনে তিনি (পরিচারিকা) পর্দা সরিয়ে দেখেন, এক যুবক বিল-বই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর মনে হয়েছিল, যুবকটি পুজোর চাঁদা চাইতে এসেছে। তিনি দরজা খুলে দিতেই ওই যুবক এবং অন্য তিন জন হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে। পরিচারিকা জানান, ছুরি উঁচিয়ে চেঁচামেচি করতে নিষেধ করে যুবকেরা গামছা দিয়ে তাঁর হাত-পা বেঁধে ফেলে। তার পরে তাঁকে নীচে রেখে উপরে উঠে যায়।
পরে শান্তিবাবু জানান, উপরে উঠেই দুষ্কৃতীরা চেয়ারের সঙ্গে দড়ি দিয়ে তাঁর হাত-পা বেঁধে দেয়। বড় রুমাল দিয়ে বাঁধে তাঁর মুখও। গালিগালাজ করতে করতে তাঁর সামনেই ভেঙে ফেলে আলমারি। কেন্দ্রীয় অপ্রচলিত শক্তি মন্ত্রকের অন্যতম পরামর্শদাতা শান্তিবাবু দেশের অপ্রচলিত শক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। সেই সংক্রান্ত বহু ফাইল, সিডি, পেনড্রাইভ, চিপ ছিল বাড়িতে। ছিল সোনা-রুপোর অজস্র পদক ও ফলক। শান্তিবাবু বলেন, “টাকা ছাড়াও পদক-ফলক, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, বহু সিডি, চিপ ও পেনড্রাইভ নিয়ে আধ ঘণ্টার মধ্যে ওরা চলে যায়। ওদের বয়স ২৪-২৫। কথা বলছিল বাংলাতেই।”
পুলিশ জানায়, দুষ্কৃতীরা বাইরে থেকে সদর দরজায় তালা দিয়ে চম্পট দেয়। পরিচারিকা কোনও মতে নিজের হাতের বাঁধন খুলে উপরে যান। তিনিই গৃহকর্তার বাঁধন খুলে দেন। শান্তিবাবু প্রথমেই ফোন করেন প্রতিবেশী, দমকলের প্রাক্তন অধিকর্তা বরেন্দ্রনাথ সেনকে। বরেনবাবু অন্য পড়শিদের বিষয়টি জানান। প্রতিবেশীরা ভিড় করেন ওই বাড়িতে। খবর যায় থানায়। পুলিশ গিয়ে তালা ভেঙে ঘরে ঢোকে। রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশি তদন্ত চলছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে পরিচারিকাকে। ওই ঘটনায় বিপর্যস্ত শান্তিবাবু বলেন, “ওরা যে কখন উপরে উঠে এসেছে, বুঝতেই পারিনি। এত দিন এখানে আছি। কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি।” |