পুলিশকে বোমা-গুলি, ধৃত আজাদের ভাই
পুলিশকে লক্ষ করে গুলি ও বোমা ছোড়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্য-সহ দু’জনকে। বোমার টুকরো লেগে দুই পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। মঙ্গলকোট থানার পুলিশ জানায়, রবিবার সকালে অঞ্জন মুন্সি নামে মঙ্গলকোটের লাখুরিয়া পঞ্চায়েতের ওই সদস্য-সহ দু’জনকে ধরা হয়েছে। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা।
গোটা ঘটনা নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অভিযোগ করেছেন মঙ্গলকোট থানার ওসি দীপঙ্কর সরকার। তিনি জানান, শনিবার রাতে নানা দুষ্কর্মে অভিযুক্ত আজাদ মুন্সির নেতৃত্বে ২০-২৫ জন মঙ্গলকোটের লাখুরিয়া গ্রাম দখল করতে যায়। পুলিশ বাধা দিলে দুষ্কৃতীরা বোমা, গুলি ছোড়ে। রবিবার সকালে পুলিশ মঙ্গলকোটের আড়াল গ্রামের বাসিন্দা, আজাদের ভাই অঞ্জন ও ওই গ্রামেরই কারিগর পাড়ার বসির শেখকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের কাছ থেকে ৩টি পাইপগান, একটি মাস্কেট, ৬ রাউন্ড কার্তুজ, ৯টি গুলির খোল ও ৪৯টি তাজা বোমা উদ্ধার করে। রবিবার কাটোয়া আদালতে ধৃতদের পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে চেয়ে আবেদন করা হলেও বিচারক তা নামঞ্জুর করেন। আজ, সোমবার পুলিশের আবেদন শুনবেন কাটোয়ার এসিজেএম। ধৃতদের আইনজীবী ধীরাজ কবীর বলেন, “পুলিশ আদালতে কেস ডায়েরির কোনও অংশ পাঠায়নি। ফলে বিচারক ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে পাঠাননি।”
আদালতে ধৃতেরা।— নিজস্ব চিত্র।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত কয়েক দিন আগে। গত সপ্তাহে এক সন্ধ্যায় লাখুরিয়া গ্রামে আজাদ-গোষ্ঠীর লোকেরা আহত হন। বিস্ফোরণে কয়েকটি গরু মারা যায়। তখনই আড়াল গ্রামে বিরোধী গোষ্ঠীর লোকেরা হামলা চালায়। আজাদের কাকিমাকে লক্ষ করে গুলি ছেড়া হয় বলেও অভিযোগ। আজাদের দাবি, “পুলিশ আমাদের কোনও অভিযোগ গ্রাহ্য করছে না। উল্টে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসাচ্ছে। আমার বৃদ্ধ বাবা-কাকাকেও পুলিশ ছাড়ছে না।” মঙ্গলকোট থানা সূত্রে জানা যায়, আজাদ-অঞ্জনের বাবা ও কাকার বিরুদ্ধে অন্য একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় পুলিশ তাঁদের ধরেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম মঙ্গলকোটের লাখুরিয়া-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় সাইফুল-রাজ চলে। তার জেরে আজাদ-বাহিনী কার্যত কোনঠাসা। পুলিশ জানায়, আজাদ এখন বীরভূমে থাকেন। শনিবার রাতে তিনি লাখুরিয়া এলাকা দখলের জন্য দলবল নিয়ে তৈরি হচ্ছেন বলে মঙ্গলকোট থানা খবর পেয়েছিল। রাত পৌনে ২টো নাগাদ ওসি দীপঙ্কর সরকার বাহিনী নিয়ে লাখুরিয়ায় যান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই রাতে ৭টি মোটরবাইক ও তিনটি গাড়িতে বোলপুর থানার জাহানাবাদে অজয়ের পাড়ে হাজির হয় আজাদ বাহিনী। কিছুক্ষণ পরে জাহানাবাদ অজয় সেতু পেরিয়ে লাখুরিয়া গ্রামের গোপীনাথপুর পাড়ার কাছে বাঁধে চলে আসে। খবর পেয়ে ওসি বাহিনী নিয়ে লাখুরিয়া গ্রামে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। এর মধ্যে ওসি পুরো ঘটনা জানান বোলপুর ও নানুরের পুলিশকে। ওসি জানান, এলাকায় টহল ও নানা মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
দায়ের করা অভিযোগে ওসি জানান, ভোর সওয়া ৫টা নাগাদ দেখা যায়, অজয়ের পাড়ে সোনাঝুরি ও ইউক্যালিপটাস গাছের সারির ভিতর দিয়ে জড়ো হয়ে ৩০-৩৫ জনের একটি দল নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। পুলিশ কথা বলতে বারণ করতেই ওই দলটি পরপর বোমা ও গুলি ছোড়ে। ওসি জানান, অনুকূল মাল ও মহম্মদ খুদরুতুল্লা নামে দু’জন পুলিশকর্মী জখম হন। অভিযানে থাকা এক পুলিশকর্মী বলেন, “আমরাও দশ রাউন্ড গুলি ছুড়ি।” রবিবার সকালে এসডিপিও (কাটোয়া) ও সার্কেল ইনস্পেক্টর শচীন্দ্রনাথ পড়িয়া বড় বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য-সহ দু’জনকে ধরেছেন।
কাটোয়া আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে রবিবার অঞ্জন মুন্সির দাবি, “আমরা গোলমালে যুক্ত নয়। কোনও অশান্তির মধ্যে নেই। পুলিশ আমাদের শান্তিতে থাকতে দেবে না।” রবিবার থেকে লাখুরিয়া গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পুলিশ পিকেট রয়েছে। জেলার এক পুলিশকর্তা বলেন, “আজাদ মুন্সি এর আগেও দীপঙ্করবাবুর দিকে গুলি ছুড়েছিল। শনিবার রাতেও তা-ই করে। এক বছরে চার বার নাগালে পেয়েও আজাদ আমাদের হাত থেকে ফস্কে গেল!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.