চোখের সামনে টুকলি হতে দেখেও নিগ্রহ হওয়ার আতঙ্কে পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক শিক্ষিকারা তা আটকানোর চেষ্টা করছেন না। শনিবার কলেজ চত্বরে সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনই দাবিই করলেন উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের ডক্টর মেঘনাদ সাহা কলেজের অধ্যক্ষা স্বপ্না মুখোপাধ্যায়। এদিন ওই কলেজে প্রথমার্ধে দ্বিতীয় বর্ষের পাশকোর্সের পড়ুয়াদের ঐচ্ছিক বাংলা ও ইংরেজির ষষ্ঠ পত্রের পরীক্ষা ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম পত্রের পরীক্ষা হয়েছে! গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দলও এদিন কলেজে যায়নি। স্বপ্নাদেবীর অভিযোগ, “এদিনও প্রথম ও দ্বিতীয়ার্ধের পরীক্ষায়, পরীক্ষার্থীদের একাংশ নকল করেছেন।”
স্বপ্নাদেবী বলেন, “পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক ও শিক্ষিকারা নিগ্রহ হওয়ার আতঙ্কে নকল হতে দেখেও নীরব ছিলেন। টুকলি আটকাতে গিয়ে নিগ্রহের পাশাপাশি শ্লীলতাহানি ও মারধরের মতো মিথ্যা মামলাতেও ফাঁসতে হতে পারে বলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা আতঙ্কে রয়েছেন।”
ইটাহার কলেজের অধ্যক্ষার অভিযোগ, নিগ্রহের ঘটনার চারদিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেনি। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা সমর্থক হওয়ায় অভিযুক্তরা পুলিশের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁর কথায়, “এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের নিরাপত্তার ও অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে রাজ্যের মানবাধিকার কমিশন, মহিলা কমিশন, মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের কাছে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।”
গত মঙ্গলবার ওই কলেজের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর নকল ধরে, ছাত্রীর স্বামী জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি তথা জেলা পরিষদ সদস্য গৌতম পাল, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা বাবুসোনা মোহান্ত-সহ অনুগামীদের হাতে অধ্যক্ষা সহ কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষিকা প্রহৃত হন বলে অভিযোগ ওঠে।
গত বৃহস্পতিবার নিরাপত্তার দাবিতে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষিকারা প্রথমার্ধের পরীক্ষায় পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন না করায়, ওই কলেজে তদন্তে যাওয়া গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক সনাতন দাসের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা পরীক্ষা হলে নজরদারি করেন। সনাতনবাবুরা নকলের অভিযোগে ২৫ জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করে দেন। টুকলি ধরাকে কেন্দ্র করে তাঁদের সঙ্গে অভিযুক্ত পরীক্ষার্থীদের তর্কাতর্কি ও ধাক্কাধাক্কিও হয়। শুক্রবারও নকলের অভিযোগে সমাজবিদ্যার ১০ জনের পরীক্ষা বাতিল করে দেন সনাতনবাবু।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা কার্যকরী সভাপতি ইন্দ্রনীল আচার্য বলেন, “তৃণমূল নেতা গৌতমের স্ত্রীকে ফাঁসানো হয়েছে। উল্টে গৌতমবাবুর স্ত্রীর শ্লীলতাহানি করা হয়। প্রতিটি কলেজের পরীক্ষার্থীদের একাংশের মধ্যেই নকল করার প্রবণতা থাকে। তাই বলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দখলে থাকা কলেজে অরাজকতার পরিবেশ প্রমাণ করতে নকল হতে দেখেও শিক্ষক শিক্ষিকারা হাতগুটিয়ে বসে থাকবেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা আন্দোলনে নামার চিন্তাভাবনা করছি।” জেলা পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, “দুপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।” |