পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল উত্তরবঙ্গের একাধিক জায়গায়। বোর্ড গঠনের আগের রাতে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে ট্রাক থামিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র ও খাকি রঙের উর্দি-সহ ১২১ জন সিপিএম কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করল পুলিশ। শনিবার বোর্ড গঠনের দিনে পুলিশের সঙ্গে সিপিএম ও কংগ্রেস সমর্থকদের গোলমাল বাধে চাঁচল ও রতুয়ায়।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার গভীর রাতে দুটি ট্রাকে চেপে সিপিএম সমর্থকরা ইসলামপুর শহরে ঢুকছিলেন। টহলদারির সময়ে সন্দেহ হওয়ায় ট্রাক দুটিকে থামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। উদ্ধার হয় খাকি রঙের একটি উর্দি, ৫টি দেশি বন্দুক, ১৭ রাউন্ড গুলি, দুইটি ভোজালি এবং প্রচুর পাথর। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন সিপিএমের চার সদ্য জয়ী পঞ্চায়েত সদস্যও। শনিবার ছিল ইসলামপুর এবং চোপড়া পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনের দিন। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডেভিড ইভান লেপচা বলেন, “ধৃতদের থেকে জানা গিয়েছে, তারা বোর্ড গঠনের সময় থাকতে জড়ো হয়েছিলেন। উর্দিটি পুলিশের কি না তা খতিয়ে দেখছি।” শনিবার ধৃতদের ইসলামপুর আদালতে হাজির করানো হলে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন জেলার অতিরিক্ত মুখ্য ও দায়রা আদালতের বিচারক বিকাশ লামা। ধৃতদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মেহেতাব চৌধুরীর অভিযোগ, “বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া ভণ্ডুল করতে সিপিএম সন্ত্রাসের পরিকল্পনা করেছিল। ওই উর্দি পরেই হামলার মতলব ছিল।” সিপিএম-এর ইসলামপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক স্বপন গুহনিয়োগী বলেন, “এলাকায় সন্ত্রাস চলছে। সমর্থকেরা আত্মরক্ষার জন্যও ওই পদক্ষেপ করতে পারেন। তবে গভীর রাতে তাঁরা কোথায় যাচ্ছিলেন তা জানা নেই। দলের নির্দেশ ছিল না। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।” |
কংগ্রেস নেতা কানাইয়ালাল অগ্রবাল বলেন, “সিপিএম বরাবরই সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে। আবার তার প্রমাণ মিলল।” শনিবার অবশ্য ইসলামপুর এবং লাগোয়া চোপড়ায় শান্তিপূর্ণ ভাবেই বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া মিটেছে।
তবে বোর্ড গঠনকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় মালদহের চাঁচল এবং রতুয়ায়। চাঁচল ১ পঞ্চায়েত সমিতি একক ভাবে সিপিএম গঠন করার পরে, দলের কর্মী সমর্থকরা আবির খেলতে শুরু করেন। কয়েকজন পুলিশ কর্মীদের লক্ষ করে আবির ছুড়তে শুরু করেন বলে অভিযোগ। পুলিশ জানায়, কর্তব্যরত অফিসারের তাঁদের সংযত হওয়ার অনুরোধ করলেও ফল হয়নি। সিপিএম সমর্থকদের ছোড়া ঢিলে সাব ইন্সপেক্টর শঙ্কর দাস, হোমগাডর্র্ কালু শেখ এবং গ্রামীণ পুলিশ কর্মী নাজিমুদ্দিন শেখ জখম হন। এরপরই পুলিশ লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “দলের বদনাম করতে বিজয় মিছিলের মধ্যে অন্য কেউ ঢুকে পুলিশের উপর হামলা করেছে। দলের কেউ যুক্ত থাকলে ব্যবস্থা হবে।”
ত্রিশঙ্কু রতুয়া পঞ্চায়েতে তৃণমূল এবং তিন নির্দল সদস্য না থাকায় সিপিএম বোর্ডের দখল নিলে উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযোগ, পঞ্চায়েত সমিতি অফিসের বাইরে থাকা কংগ্রেস সমর্থকরা পাথর ছুড়তে শুরু করেন বলে অভিযোগ। রতুয়া থানার সাব ইন্সপেক্টর বিকাশ ভদ্র এবং হোমগার্ড সুভাষ পাণ্ডের মাথা ফাটে। লাঠি এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়েও অবস্থা নিয়ন্ত্রণে না আসায় পুলিশ শূন্যে গুলি চালায় বলে বাসিন্দাদের দাবি। জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী বলেন, “আমাদের দলের কেউ হামলা করেনি। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দুষ্কৃতীরা পুলিশের উপর হামলা করেছে।” পুলিশ অবশ্য গুলি চালানোর কথা অস্বীকার করেছে। জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন “১০ জনকে ধরা হয়েছে। দু’জায়গাতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।” |