পঞ্চায়েত প্রধান ঠিক করা নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়ানো গিয়েছিল। কিন্তু, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচন করা নিয়ে নিয়ে হুগলিতে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাঁধ ভাঙল। প্রকাশ্যে এল বিধায়ক-সাংসদ দ্বন্দ্বের ছবি।
শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে চণ্ডীতলা ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বাছতে লিখিত ‘হুইপ’ দিলেন দলেরই দুই বিধায়ক। পরিস্থিতি যে অনুকূলে নয়, তা আগেই আঁচ করেই সাংসদের পক্ষ নিয়ে আসরে নামেন তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মকুল রায় নিজে জেলা নেতা দিলীপ যাদবকে ঘটনাস্থলে পাঠান। ‘হুইপ’ দেওয়া হয় সাংসদের পছন্দসই প্রার্থীকেই যেন দলীয় সদস্যেরা সভাপতি পদে ভোট দেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, মুকুলবাবু নিজে ফোনে কথা বলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের (মাস্টারমশাই) সঙ্গেও। কিন্তু, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যে পুরো বিষয়টিতেই হস্তক্ষেপ করতে দেরি করেছেন, ‘মাস্টারমশাই’ তা স্পষ্টই জানিয়ে দেন মুকুলবাবুকে।
এ দিন সভাপতি নির্বাচনকে ঘিরে সকাল থেকেই তেতে ছিল চণ্ডীতলা ব্লক অফিস চত্বর। এক দিকে, সাংসদের অনুগামীরা। অন্য দিকে, চণ্ডীতলার বিধায়ক স্বাতী খন্দকার ও ‘মাস্টারমশাই’ গোষ্ঠীর লোকজন। দু’পক্ষই গালিগালাজ দিতে থাকে। |
হাতিহাতিও অল্পবিস্তর হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে দিলীপবাবু হিমশিম খান। এর মাঝেই চণ্ডীতলা ব্লকে দলের তরফে দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক সুবীর মুখোপাধ্যায় অসুস্থ হয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি হন। অবস্থা যে ভাল নয়, তা আঁচ করে শ্রীরামপুরের এসডিপিও রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়কে ঘটনাস্থলে পাঠান জেলার পুলিশ সুপার সুনীলকুমার চৌধুরী।
তৃণমূল সূত্রের খবর, দুই বিধায়ক চেয়েছিলেন সন্টু রিট সভাপতি হন। সাংসদ কল্যাণবাবু সভাপতির চেয়ারে বসাতে চেয়েছিলেন জয়দেব রক্ষিতকে। এই নিয়ে দু’তরফের লড়াই। রাজ্য নেতৃত্ব মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত দেখা গেল ভোটাভুটিতে সন্টুবাবুই জয়ী হয়েছেন। এই খবর ছড়াতেই উত্তেজনা চরমে ওঠে। স্লোগান-পাল্টা স্লোগান চলতে থাকে। এক গোষ্ঠী স্থানীয় অহল্যাবাঈ রোড অবরোধ করে। দু’পক্ষকেই লাঠি নিয়ে তাড়া করে হটিয়ে দেয় পুলিশ।
জেলা প্রশাসনের আশঙ্কা, সভাপতি নির্বাচন নিয়েই যখন কাজিয়া এই পর্যায়ে পৌঁছেছে, তখন স্থায়ী সমিতি গঠন হওয়ার পরে কাজ নিয়েও পদে পদে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ দেখা দেবে। অশান্তির এই আবহে পঞ্চায়েত সমিতির উন্নয়নের কাজ কতটা হবে, তা নিয়ে আশঙ্কায় এলাকার মানুষও। মুকুলবাবু অবশ্য পুরো ঘটনাকে লঘু করে দেখাতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, “জেলার ১৮টি ব্লকের মধ্যে সামান্য সমস্যা হয়েছে। এ আর এমন কী? দলীয় স্তরে অবশ্য বিষয়টি দেখা হবে।” কিন্তু তাঁর নির্দেশ অমান্য করে দুই বিধায়কের ‘হুইপ’ দেওয়া প্রসঙ্গে মুকুলবাবুর বক্তব্য, “সাংসদ কল্যাণ, বিধায়ক স্বাতী বা মাস্টারমশাই কেউই হুইপ দিতে পারেন না। এর একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে।” |