বন্দরকে না জানিয়েই জেটি, জলে গেল ৭ লক্ষ
জাহাজের মুখ ঘোরাতে গিয়ে চমকে উঠলেন ক্যাপ্টেন। পিছনে যে মূর্তিমান বিপদ অপেক্ষা করছে!
ঘাট থেকে মুখ বের করে নদীর উপরে ভাসছে বড় এক জেটি। দু’দিন আগেও তো ছিল না! তা হলে এল কোথা থেকে? বটানিক্যাল গার্ডেনস-এর সামনে গঙ্গার এই অংশটির প্রস্থ তুলনায় কম। কিন্তু জলের গভীরতা এবং টান সবচেয়ে বেশি হওয়ার কারণে এখান থেকেই মুখ ঘুরিয়ে সমুদ্রে পাড়ি দেয় বড় বড় মালবাহী জাহাজ। যার কোনও কোনওটি প্রায় ১৭২ মিটার লম্বা।
নেতাজি সুভাষ অথবা খিদিরপুর ডক থেকে ফিরে যাওয়ার পথে ওই ভাসমান জেটি-তে ধাক্কা লেগে মারাত্মক কাণ্ড ঘটতে পারে! বিদেশি জাহাজটির ক্যাপ্টেন এটা বুঝতে পেরে সতর্ক করেন কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষকে। ঘটনাটি অগস্ট মাসের ৮ তারিখের। তার পর ঘুম ছোটে বন্দর কর্তাদের। তাদের এক অফিসারের কথায়, “সাংঘাতিক কাণ্ড! প্রতি দিন গড়ে পাঁচটি করে বিদেশি জাহাজ ঢুকছে, পাঁচটি বেরোচ্ছে। নেতাজি সুভাষ এবং খিদিরপুর ডকে ঢোকা-বেরনোর ওই একটাই রাস্তা। সেখানে এমন একটি জেটি যে কোনও সময় বড় ধরনের বিপদ ঘটাতে পারত!”
বিস্ময়ের প্রাথমিক ধাক্কা সামলে আচমকা ভেসে ওঠা জেটির খোঁজে নেমে পড়েন বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর নেমে জানতে পারেন, রাজ্য সরকারের পর্যটন দফতরের নির্দেশে একটি বেসরকারি সংস্থা ওই ভাসমান জেটি বসাচ্ছে। কাজ প্রায় ৮৫% শেষ। অথচ তাঁরা এ বিষয়ে বিন্দু-বিসর্গ কিছু জানেন না!
বন্দরের এক কর্তার কথায়, “আমাদের এক্তিয়ারের মধ্যে থাকা গঙ্গায় কিছু করতে গেলে কর্তৃপক্ষের আগাম অনুমতি নিতে হবে। ওই জেটি বসানোর ক্ষেত্রে তা হয়নি।” বটানিক্যাল গার্ডেনস-এ আরও একটি জেটি রয়েছে। পুরনো সেই জেটিতে দাঁড়িয়ে জল তোলে জলযান। কিন্তু পর্যটন দফতর কি অনুমতি নেয়নি? রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভীষ্মদেব দাশগুপ্তের কথায়, “আমাদের ভুল হয়ে গিয়েছে। বলতে পারেন, এই ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষাও নিলাম। এর পর থেকে গঙ্গাবক্ষে কিছু করতে গেলে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেই এগোব।” কেন একটি নতুন জেটির প্রয়োজন হল? ভীষ্মদেববাবুর কথায়, “নবনির্মিত ওই জেটি থেকে জলযান চালানোর পরিকল্পনা করেছে পর্যটন দফতর। সেই মতো জলপথ পরিবহণের উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। গঙ্গার পাড়ে এই রকম আরও কয়েকটি জেটি হবে। তিনি বলেন, “ব্যারাকপুর থেকে দক্ষিণেশ্বর ও ত্রিবেণীতে লঞ্চ চালানোর পরিকল্পনা চলছে। সেই কারণেই বেসরকারি ওই সংস্থাকে জেটি তৈরি করতে বলা হয়েছে। প্রথমে ঠিক ছিল, জেটি হবে পলাশিতে। কিন্তু সিদ্ধান্ত বদলে বটানিক্যাল গার্ডেনস-এ জেটি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য।”
বন্দর কর্তৃপক্ষকে না জানানোর জন্য ভুল স্বীকারের পাশাপাশি এখন ওই জেটি সরিয়ে নেওয়ার তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে। জেটি বসানোর কাজে যুক্ত মেরোলিন ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থার কর্ণধার কাকলি মিত্র বলেন, “আমাকে বসাতে বলা হয়েছিল, বসিয়েছি। এখন তুলতে বলা হয়েছে, তুলে দিচ্ছি। কিন্তু এই কাজের জন্যও অনেক টাকা লাগবে। পর্যটন দফতরকে বলেছি টাকা দিতে।”
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, জেটি সরিয়ে ফেলার কাজে হাত দিয়েছেন বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা। ঘাট থেকে একটি ২৫ মিটার লম্বা গ্যাংওয়ে নদীর উপরে বেরিয়ে চলে এসেছে। তার সঙ্গেই লাগানো নবনির্মিত ওই জেটি। আর সেটি প্রায় মাসখানেক ধরে এখানেই রয়েছে। জানাজানির পরে প্রতিটি জাহাজকেই ফেরার পথে সতর্ক করে দিচ্ছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। সরকারি সূত্রের খবর, লোহা আর কংক্রিটের তৈরি জেটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৭ লক্ষ টাকা। এটি বসাতে খরচ হয়েছে চার লক্ষ টাকা। এ বার তোলার খরচ লাগবে আরও তিন লক্ষ টাকা।
মহাকরণের কর্তারা বলছেন, এই জেটি অন্যত্র বসানো যাবে ঠিকই। কিন্তু এটি বসাতে এবং তুলতে গিয়ে জলেই গেল সাত লক্ষ টাকা!





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.