টাকা নিচুতলায় পাঠাল কে, তরজা দুই আমলের
কে আগে রাজ্য পরিকল্পনার টাকা জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়েছে, তা নিয়ে পূর্বতন বামফ্রন্ট এবং বর্তমান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মধ্যে বির্তক বেধেছে।
বাম জমানার কর্তাদের দাবি, অর্থ দফতরের বিকেন্দ্রীকরণের কাজ তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের হাত ধরেই শুরু হয়েছে। সরকারি দফতরগুলির মাধ্যমে তৃণমূল স্তরে উন্নয়নের টাকা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র যে তৎপরতার দাবি করেছেন, তার সবটাই শুরু হয়েছে আগের আমলে।
অর্থ দফতরের এখনকার কর্তারা অবশ্য পাল্টা দাবি করে বলেছেন, অসীমবাবুর আমলে বিকেন্দ্রীকরণ সংক্রান্ত কিছু আদেশনামা বেরিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থাকত অসীমবাবুর হাতেই। অথচ টাকা খরচের ব্যাপারে দফতরের সচিবরা গত দু’বছরে যে আর্থিক স্বাধীনতা পেয়েছেন, তার সুফল ফলতে শুরু করেছে। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ রাজ্যের নিজস্ব টাকার ৮৩% একেবারে নীচের স্তরে নামিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। যা আগে কখনও হয়নি।
বাম আমলের কর্তারা অবশ্য বলছেন, আর্থিক বছরের শুরুতে পরিকল্পনা খাতের ২৫% টাকা দফতরগুলিকে বরাদ্দ করার আদেশনামা প্রথম বের হয় ২০০৭-’০৮ সালে। পাশাপাশি, জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ৫০% অর্থ বরাদ্দ করা হতো সেই বছর থেকেই। তার পর দফতরগুলির কাজের বিচার করে ডিসেম্বরের শেষে বাকি ২৫% অর্থ বরাদ্দ করা হতো। তাঁদের আরও দাবি, পরিকল্পনা খাতের টাকা নীচের স্তরে বরাদ্দ করার ক্ষমতা বিভাগীয় অনুমোদন কমিটিকে আগেই দেওয়া হয়েছিল। তারা ২ কোটি টাকা পর্যন্ত যে কোনও প্রকল্পের অনুমোদন দিতে পারত। কোনও চালু প্রকল্পের জন্য আলাদা করে অনুমোদন নিতে হতো না। আর নতুন প্রকল্পের টাকার জন্য অর্থ দফতরের প্রশাসনিক অনুমোদন নিলেই হতো। পাশাপাশি, পরিকল্পনা বরাদ্দের টাকা ঠিকমতো ব্লকস্তরে পৌঁছচ্ছে কিনা, তা দেখার জন্য অসীমবাবু প্রতি মাসে পর্যালোচনা বৈঠক করতেন বলে জানিয়ে ওই কর্তারা দাবি করছেন, আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণের যে কাজ বাম জমানায় শুরু হয়েছিল, তারই সুফল এখন মিলছে।
এই সব দাবির সঙ্গে একমত নন অর্থ দফতরের বর্তমান আধিকারিকরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ২০০৭-’০৮ সালে আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসের জন্য ২৫% এবং পরবর্তী ৬ মাসের জন্য আরও ৫০% অর্থ বরাদ্দের আদেশনামা জারি হলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ হয়নি। কারণ, ২৫% বরাদ্দের পুরো টাকা কখনওই তিন মাসের মধ্যে দফতরগুলিকে দেওয়া হতো না। টাকা পেতে হলে আগে অর্থ দফতরে ফাইল পাঠাতে হতো। সেই অনুমোদন পেতে বিস্তর সময় লেগে যেত। আবার, বিভাগীয় অনুমোদন কমিটিকে ২ কোটি টাকার প্রকল্পে ছাড়পত্র দেওয়ার অধিকার দেওয়া হলেও তার জন্য ফাইল পাঠাতে হতো অর্থ দফতরে। সেই অনুমোদন পেতে কালঘাম ছুটতো সচিবদের। এখন ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত প্রকল্পের অনুমোদন নিতে অর্থ দফতরের দ্বারস্থ হতে হয় না। পাশাপাশি, বাম আমলে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৭৫% অর্থ খরচের স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলা হলেও প্রকল্প জমা দিয়ে ডিসেম্বরে মধ্যে অনুমোদন পাওয়ার নজির প্রায় নেই। তা ছাড়া, আর্থিক বছরের শেষ তিন মাসে কোনও দফতরকেই টাকা ছাড়ত না আগের অর্থ দফতর। ফলে কোনও দফতর ৭৫% টাকা খরচ করলেও শেষ কিস্তির ২৫% অর্থ পেত না।
ওই কর্তারা জানাচ্ছেন, ১৯৯৭ সালে অসীমবাবু বিভাগীয় সচিবদের ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০০২ সালে তা আবার ফিরিয়ে নিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন, যে কোনও ধরনের প্রকল্পের ছাড়পত্র অর্থ দফতর থেকেই নিতে হবে। এমনকী, পরিকল্পনা বর্হিভূত খাতে একটি ফটোকপি মেশিন, একটি কম্পিউটার বা জল পরিশোধক যন্ত্র কেনার ছাড়পত্র পেতেও অর্থ দফতরের কাছে ছুটতে হতো। ২০১৩ সালের মে মাস পর্যন্ত এই ব্যবস্থা বহাল ছিল। এখন তা বদল করে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিকেই স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
সরকারের এক শীর্ষ কর্তা জানান, বাম জমানায় উন্নয়ন তহবিলের টাকা বরাদ্দের ক্ষেত্রে অর্থ দফতরের নিয়ন্ত্রণ যে পুরোমাত্রায় ছিল, তা অসীমবাবুর পেশ করা বাজেট পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট। যেমন, ২০১০-’১১ সালের বাজেটে ১৯ হাজার ৬৯ কোটি টাকার পরিকল্পনা বরাদ্দ ঘোষণা করেছিলেন তিনি। বাস্তবে বরাদ্দ হয়েছিল ১১ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, রাজ্যের নিজস্ব উন্নয়ন খাতের ৭২৩২ কোটি টাকা দফতরগুলিকে দেওয়াই হয়নি।
ওই কর্তার আরও বক্তব্য, বিভাগীয় সচিবদের ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচের ক্ষমতা দেওয়া, বিভাগীয় অনুমোদন কমিটির মাধ্যমে ৫ কোটি টাকার প্রকল্পের ছাড়পত্র দেওয়ার কাজ অমিত মিত্রই শুরু করেছেন। পাশাপাশি, অর্থ দফতরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দফতরে যে আর্থিক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁরা ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত প্রকল্প মঞ্জুর করতে পারেন। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে প্রকল্পভিত্তিক খরচ অদল-বদল (রি-অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন) করার স্বাধীনতাও বিভাগীয় সচিবদের দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, বাম আমলে ‘প্ল্যান রিলিজ ইনফরমেশন সিস্টেম’ সফটওয়্যার থাকলেও তার মাধ্যমে পরিকল্পনা খাতে খরচের হিসেব অর্থ দফতরে পেশ করার নজির ছিল না।
অর্থ দফতরের এক কর্তা জানান, ২০১০ সালের অক্টোবরে অসীমবাবু মৌখিক ভাবে পরিকল্পনা বরাদ্দের টাকা আটকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে বছরই নভেম্বরে একটি ফাইলে তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, এখন আর কোনও টাকা ছাড়া হবে না। সেই আর্থিক-নিষেধাজ্ঞা ২০১১ সালের মে মাস পর্যন্ত চলেছিল। কর্তাদের প্রশ্ন, যদি ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৫% টাকা বরাদ্দ করাই থাকবে, তা হলে নভেম্বর থেকে টাকা আটকে দেওয়া হয়েছিল কেন? কারণ, পুরো ক্ষমতাটাই ছিল অর্থ দফতরের হাতে। যার জেরে ২০১০-’১১ সালে পরিকল্পনা খাতে ব্যয় তার আগের বছরের তুলনায় ৫৮.৫৩% কম হয়েছিল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.