|
|
|
|
|
|
|
প্রকৃত প্রেম |
ডন শি
আমেরিকা |
তাঁদের দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছিল একটা জাতীয় পতঙ্গবিজ্ঞান সম্মেলনে। ভদ্রলোকের দৃষ্টিতে মহিলাকে মনে হয়েছিল অসামান্য সুন্দরী, লীলায়িত, লাবণ্যময়ী মোদ্দা কথা, একটা পেশাদার কনফারেন্সে যে-রকম কাউকে খুঁজে পাওয়ার আশাই কেউ করে না।
মহিলার ছিপছিপে চেহারা, নির্লোম বাহুমূল, ঘাড়ের কমনীয় বাঁক, তার ওপর তিনি তাঁর ছোট্ট মাথাটিকে নিয়ে যে-অহংকারী ভঙ্গিতে ঘোরাফেরা করছিলেন, সব মিলিয়ে লোকটির মনে বেশ গভীর দাগ কেটে গেল।
ও দিকে লোকটির লম্বাটে ও পাতলা গড়নের চেহারা, একটু বেরিয়ে-আসা চোখ দেখে মহিলার মনে পড়ে যাচ্ছিল সেই কীটদের কথা, যারা তাঁর প্রথম কীটবিদ্যা-বিষয়ক সফল গবেষণার বিষয় ছিল। সে এক তীব্র ও খুব প্রিয় স্মৃতি। সৃষ্টিশীল কীটপতঙ্গবিদ্যার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তাঁকে বেশ বিখ্যাত করে তুলেছিল।
প্রথম দিন পেপার-টেপার পাঠ সাঙ্গ হলে, ককটেল-অনুষ্ঠানে ভদ্রলোক মহিলার সঙ্গে আলাপ-পরিচয় করতে এগিয়ে গেলেন।
‘হেল্লো’, তিনি বললেন, ‘আমার নাম লয়েড গেনর।’
‘গেনর? ও, আচ্ছা আচ্ছা। উইপোকা।’
ভদ্রলোক খুশি হলেন।
মহিলার নাম ফিলিস টার্নার, এবং ভদ্রলোক সেটা জানতেনও। তিনি বললেন, মহিলার পিঁপড়ে-বিষয়ক গবেষণামূলক কাজের জন্য তিনি তাঁকে সমীহ করেন। প্রচুর তারিফ করলেন।
ঘটনাচক্রে, নৈশভোজের সময় তিনি বসার আসনও পেলেন মহিলার পাশেই। তাঁদের পারস্পরিক আকর্ষণটা হয়ে উঠছিল বেশ দৃঢ় এতটাই দৃঢ় যে তাঁদের ভাব বিনিময়ের মধ্যে একটা দ্রুত লয় চলে এসেছিল, ধাপে ধাপে তা চড়ছিল, ছোট ছোট কিন্তু উদ্গ্রীব পা ফেলে ফেলে, একটা ধর্মীয় আচারের নাচ যেন পরস্পরকে ঘিরে ঘিরে ঘুরে ঘুরে রুদ্ধশ্বাস একটা সর্পিল আবর্তন।
এ এমন একটা আকর্ষণ, যা সত্যিকারের ভয় জাগিয়ে তোলার পক্ষে যথেষ্ট। |
|
ছবি: সুমন চৌধুরী |
মশলাদার কুকি ও এসপ্রেসো খেতে খেতে মহিলা এক অদ্ভুত জিনিস উপলব্ধি করলেন। তাতে তিনি প্রবল উত্তেজিত হলেন, অতটা অবশ্য চোখে-মুখে দেখালেন না। মহিলা বুঝতে পারলেন, লোকটি তখন উইপোকার নিউরো-বায়োলজি বিষয়ে তাঁর গবেষণার যে অংশটা সম্পর্কে বলছিলেন, সেটা নিখুঁত ভাবে করতে গিয়ে তিনি এমন একটা কম্পিউটার মডেল বানিয়েছেন, যেটা ব্যবহার করার অনুমতি পেলে মহিলাটির ছ’মাসের কাজ বেঁচে যাবে, পিঁপড়েদের ব্রেন ফাংশন নিয়ে মহিলাটি যে-সব তথ্য লিখে রেখেছেন, তার পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ খুব তাড়াতাড়ি সেরে ফেলা যাবে।
অবশ্য মহিলা এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখালেন খুব চড়া সুরে নয়, বরং একটু নিচু মাত্রায়, যেন ‘হলেও হয়, না হলেও হয়’। ভদ্রলোক ‘বেশ তো’ গোছের একটা উৎসাহী ভাব দেখালেন, যা খুব একটা প্রতিশ্রুতি দেয় না।
নৈশভোজের ঠিক পরেই, অব্যক্ত এক বোঝাপড়ায় ওঁরা দুজনে হোটেলের এলিভেটরে চড়ে মহিলার ফ্লোরে নেমে মহিলাটির ঘরে ঢুকলেন। নিঃশব্দে পোশাক খুলে ফেললেন দুজনেই, পুরুষটি বাথরুমে গিয়ে, আর মহিলাটি শোওয়ার ঘরেই।
পুরুষটি শোওয়ার ঘরে ঢুকে দাঁড়িয়ে থাকলেন বিছানার পাশে। বিছানার ও-পাশে মহিলাটিও সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে। দুজনে দুজনের পাণ্ডুর, রোগা-ছিপছিপে এবং প্রায়-চুলহীন শরীরের দিকে তাকিয়ে।
পুরুষটি কথা বললেন প্রথম।
‘এক জাতের গঙ্গাফড়িং-এর মাদিগুলো চোখে ভাল দেখে না, কিন্তু খুব মারাত্মক। পুরুষ ফড়িংটা যখন সংগমের জন্য আকুল, সে খুব ধীরে ধীরে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মেয়েটার দিকে এগোতে থাকে, বুঝলে কিনা, পরবর্তী পদক্ষেপের আগে কখনও কখনও এমনকী কুড়ি মিনিট ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, আর তার পরও এগোয় হয়তো খুব সামান্যই।
শেষ পর্যন্ত, এত দীর্ঘ ও সাবধানী প্রক্রিয়ার পর, যখন সে দৌড়ে গিয়ে মেয়েটিকে পেছন দিক থেকে চেপে ধরে সংগম করার চেষ্টা করে, মেয়েটি নিজের ওপর-শরীরটা মুচড়ে ঘাড় ঘোরায় এবং পুরুষ পতঙ্গটির মাথা কামড়ে ছিঁড়ে ফেলে। আক্ষরিক অর্থেই এই কাজটি মেয়েটির প্রতি ওই পুরুষটির অন্তর্গত সব ভয় দূর করে দেয়, কারণ ভয়টা জন্মায় তো নিউরোন আর গ্যাংলিয়া থেকে, যা এখন ছিঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
তার পর, পুরুষ পতঙ্গটি অত্যন্ত সফল ভাবে সংগমপর্ব শেষ করে, অবশেষে মারা যায়। এই সংগম সে করে যথেষ্ট আনন্দের সঙ্গে মানে, মাথাহীন অবস্থায় কোনও প্রাণী তা যতটা আনন্দের সঙ্গে করে উঠতে পারে আর কি। শেষে, পুরুষ ফড়িংটার মৃত্যু ঘটলে মেয়েটি সেই পুরুষটির বাকি দেহাংশ খেয়ে ফেলে।’
একটু থেমে ভদ্রলোক আশান্বিত চোখে মহিলার দিকে তাকালেন। তাঁর লম্বা সরু পুরুষাঙ্গটি শক্ত ও ঊর্ধ্বমুখী হয়ে বড় হয়ে উঠছিল, সঙ্গে ছিল নির্বাক গোলাপি তাড়না।
মহিলা যখন কথা বলতে শুরু করলেন, তিনি পুরুষটির মতোই এক ধরনের শিক্ষকসুলভ হালকা কণ্ঠস্বর বজায় রাখলেন।
‘ইমপ্লিড ফ্লাই নামে এক রকম মাছিরও এ রকম নোংরা অভ্যাস আছে। পুরুষটি যখন সংগমঋতুর সময় ঘনিষ্ঠ হয়, নারী তাকে খেয়ে ফেলে। এ-কাজ থেকে মেয়েটাকে বিরত বা অন্যমনস্ক রাখতে, পুরুষটি সঙ্গে এক টুকরো খাবার নিয়ে যায়, এবং নিজের লালা-নিঃসৃত রসে একটা বেলুনের মতো মোড়ক তৈরি করে, সেই খাবার-টুকরোটি মুড়ে নেয়। মেয়ে-মাছিটা সেই মোড়ক-টোড়ক খুলে খাবারটি খেতে যা সময় নেয়, তত ক্ষণে পুরুষটি সফল সংগমপর্ব শেষ করে অক্ষত অবস্থায় কেটে পড়ে।
কিন্তু ওই মাছিরই একটা অন্য প্রজাতির বেলায়, চালাকি করেই হোক, আলস্যবশতই হোক, কিংবা খারাপ অর্থে বিশ্বাসের সুযোগ নিতেই হোক, পুরুষটি মোড়ক তৈরি করে ভালই, কিন্তু তার মধ্যে কোনও খাবার রাখতেই ভুলে যায়। সে ক্ষেত্রে মেয়েটি সংগমে লিপ্ত হয়, কিন্তু ফাঁকা প্রতিশ্রুতির ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হয়।’
এই যে কথাগুলি দুজনে দুজনকে শোনালেন, দুজনেই কিন্তু এ সব খুব ভাল করেই জানেন, কারণ কীটবিদ্যায় স্নাতক পর্যায়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীও এগুলি জানে।
মহিলার কথা শেষ হওয়ার পর একটু বিরতি। দুজনে দুজনের দিকে টানা তাকিয়ে থাকলেন। ব্যাপারটা যে কোনও দিকেই যেতে পারত।
তার পর দুজনে বিছানায় ঝাঁপিয়ে পড়লেন। |
অনুবাদ উজ্জ্বল সিংহ |
|
|
|
|
|