দু’টো হাতে ক্রাচ। বেশ থেমে থেমে হাঁটতে হচ্ছে। সবে হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করে ফিরেছেন দেশে, রবিবারই যেতে হবে বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি।
তবু মনোজ তিওয়ারি আজ এ ভাবে ভবানীপুর বালক সঙ্ঘের মাঠে কেন?
আসবেন না? বহু দিনের বন্ধু-র পাশে দাঁড়াতে তো হবে! যাঁর জন্য আসা, যাঁকে উষ্ণ আলিঙ্গনে ‘আমরাও আছি তোর জন্য’ বার্তা পৌঁছে দেওয়া, তিনি অভীক চৌধুরী বছর চারেক আগে এক গাড়ি দুর্ঘটনা হাঁটাচলার শক্তি হারিয়েছেন। সঙ্গী হুইলচেয়ার। ক্রিকেট কেরিয়ারের ‘অকালমৃত্যু’ নিয়ে দুঃখ আছে ভেতরে ভেতরে, কিন্তু মুখে কোনও বহিঃপ্রকাশ নেই। বরং হাতের ট্যাটুতে লিখে রেখেছেন, ‘অ্যাবসর্ব পেইন’।
এবং অভীককে ঘিরে শনিবার বঙ্গ ক্রিকেটের অতীত-বর্তমানদের যে সম্মেলন দেখা গেল, তাতে তাঁর যন্ত্রণা আরও কমবে নিশ্চিত। যা আদতে হল বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটারকুল ও দু’টো এনজিও-র উদ্যোগে। আর কী হল নয়, প্রশ্ন উঠতে পারে শনিবার কী হল না অভীকের জন্য? |
সহমর্মিতার হাত
অভীকের পাশে মনোজ। ছবি: উৎপল সরকার |
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাংলার এক সময়ের প্রতিশ্রুতিমান অলরাউন্ডারকে বলে ফেললেন, “অভীককে একটাই কথা বলব। জীবন কিন্তু ক্রিকেটের চেয়ে অনেক বড়। সেটা আমি আমার অবসরোত্তর জীবন দিয়ে বুঝেছি!” বাংলা ক্রিকেটার ও সংগঠকদের তরফ থেকে অভীকের জন্য উঠল চার লক্ষ টাকারও বেশি। যার মধ্যে শুধু মনোজ তিওয়ারিই দিলেন এক লক্ষ!
সিএবি ঘোষণা করে দিল, অভীককে ডাকা হবে জুনিয়র ক্রিকেটের স্বার্থে। তাঁর জীবনের উদাহরণ দিয়ে জুনিয়রদের বোঝানো হবে একজন ক্রিকেটারের মন কতটা পাথুরে হওয়া দরকার। যাতে ক্রিকেট মাঠের যুদ্ধ কোন ছাড়, জীবনের বাইশ গজেও ‘ম্যাচ’ জেতা যাবে হাসতে হাসতে।
একই মঞ্চে ফুটবল-ক্রিকেটের সহাবস্থানও তো দেখা গেল। অতীতের ফুটবলজগতের দিকপাল সুকুমার সমাজপতি, অলোক মুখোপাধ্যায় যেমন ছিলেন, তেমন দেখা গিয়েছে সৌরভ, অরুণলাল, সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রণব রায়, উৎপল চট্টোপাধ্যায়, লক্ষ্মীরতন শুক্ল, অনুষ্টুপ মজুমদারদের। আর সৌরভের “আমরা অভীককে সাহায্য করতে আসিনি। কারণ ওর সাহায্যের দরকারই নেই,” মন্তব্যে যদি সবচেয়ে বেশি হাততালির ঝড় ওঠে, তা হলে উপস্থিত দর্শক সবচেয়ে অবাক হয়েছে মনোজ তিওয়ারিকে দেখে। যা নিয়ে মনোজ আবার পরে বললেন, “আসব না? অভীকের স্ট্যাটাস মেসেজ দেখে তো আমিও মোটিভেশন পাই।” অভীক স্বয়ং? আবেগে ভাষা হারিয়েছেন। বারবার বলে যাচ্ছিলেন, “কী বলব, আমি অভিভূত।” শুধু একটাই যা আক্ষেপ। সাংগঠনিক ত্রুটিতে লক্ষ্মী-দিন্দাদের ফুটবল মাঠেই যা নামা হল না। |