সাতে সাত সাইনাই আইবিএলে ‘হটশট’
কী ভাবে ম্যাচে ফিরতে হয়
শিখতে হবে সিন্ধুকে
ইবিএল ফাইনালের মহালড়াইয়ে সাইনার কাছে আধঘণ্টার আশপাশে সিন্ধুর ১৫-২১, ৭-২১ হারের যুতসই ব্যাখ্যা কোনটা? ‘ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট’? নাকি, রাজ্যপাট শাসনে অনভিজ্ঞ রাজকন্যার আত্মসমর্পণ বহুঅভিজ্ঞ মহারানির কাছে? এই মুহূর্তে ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের মহারানি আর রাজকন্যা তো সাইনা আর সিন্ধু-ই।
দু’জনেরই ব্যাডমিন্টন-গুরু গোপীচন্দ চব্বিশ ঘণ্টা আগেই এই ম্যাচ নিয়ে বলেছিল, সাইনা অন্য লেভেলের প্লেয়ার। আর সিন্ধু দুধর্র্র্ষ প্রতিভা। আসলে ঘুরিয়ে ক্লাস আর ফর্ম-কেই বোঝাতে চেয়েছিল। দক্ষিণ মুম্বইয়ের ন্যাশনাল স্পোর্টস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া-র (যার আর একটা নাম বল্লবভাই প্যাটেল স্টেডিয়াম) কোর্টে হায়দরাবাদ দলের ‘আইকন’ সাইনার ‘হট শটস’-এর ঝড়ে কার্যত উড়ে গেল ওয়ারিয়র্স দলের ‘আইকন’ সিন্ধুর যাবতীয় যুদ্ধের প্রয়াস।
মাত্র আঠারো বছরে সিন্ধু বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে প্রথম ভারতীয় মেয়ে হিসেবে পদক জিতে আসতে পারে। আইবিএলে শেষ তিনটে ম্যাচে দু’বার হারাতে পারে অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন টাইন বাউনকে, একবার বিশ্বের তিন নম্বর জুলিয়েন শেঙ্ককে। সাফ কথা, এই মুহূর্তে দুরন্ত ফর্মে। কিন্তু ওর চেয়ে পাঁচ বছরের বড় অন্য হায়দরাবাদি মেয়ে সাইনা-ও অলিম্পিকে ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের ইতিহাসে প্রথম পদক জিতেছে। চার বছর নাগাড়ে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম পাঁচের মধ্যে আছে। আইবিএলে শনিবারের আগে জয়ের ডাবল হ্যাটট্রিক করে অপরাজিত। সোজা কথা, বছরের পর বছর ধরে ধারাবাহিক সফল। যে ধরনের সাফল্য কেবল ক্লাস-ই কাউকে দিতে পারে।
ওস্তাদের মার
সাইনার সিন্ধু বিজয়। আইবিএলের ফাইনাল ম্যাচে। শনিবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই
মুম্বই মাস্টার্স সেমিফাইনালে ছিটকে গেলেও সুনীল গাওস্কর ফাইনালে স্টেডিয়ামে ছিলেন। এমনকী মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বণ। সারাক্ষণ তুমুল ঢাক বেজে গেল। দর্শক গ্যালারি টইটম্বুর। সঞ্জয় মঞ্জরেকর স্টেডিয়ামে বসেই টুইট করছিল। যার একটা ইন্টারেস্টিং ‘ব্যাডমিন্টন খেলাটার বিশেষজ্ঞ না হতে পারি। তবে এটুকু স্পষ্ট বুঝতে পারছি, সাইনার দাপটের সামনে সিন্ধুকে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে!’ দ্বিতীয় সেটের প্রথম এক মিনিটের ব্রেকের সময়েই ৭-১ পয়েন্টে এগিয়ে থাকা সাইনার উদ্দেশ্যে গ্যালারিতে বিশাল পোস্টার দেখা গেল ‘সাইনা, তোমার উইনিং র্যাকেটটা চাই।” আর কী আশ্চর্য! ম্যাচের শেষে অত ভিড়ের মধ্যেও সেই কিশোরকে খুঁজে বার করে সাইনা র্যাকেটটা দিয়ে দিল। যে ভাবে ম্যাচের গোড়াতেই সিন্ধুর দুর্বলতাগুলো খুঁজে বার করে ফেলে সারাক্ষণ সেখানে আক্রমণ করে যাচ্ছিল। নেটে আসতে দিল না। স্ম্যাশ করার মতো লেংথ দিল না। উল্টে নিজে বিধ্বংসী ডাউন দ্য লাইন শটের পাশাপাশি সেন্টার অব দ্য কোর্ট স্ম্যাশ করে সিন্ধুর বিখ্যাত কোর্ট কভারিং নষ্ট করে দিল সাইনা।
সাইনার সঙ্গে আমার খেলার জীবনের সময়ের ভারতীয় মেয়ে প্লেয়ারদের বেশ মিল আছে। ওই রকম শান্ত। সাধারণ। বেশি সাজগোজ করে কোর্টে নামে না। আমার কপালে একটা লাল টিপ পরে খেলা অভ্যেস ছিল। বিরানব্বই বার্সেলোনা অলিম্পিকেও (সে বারই ব্যাডমিন্টন প্রথম অলিম্পিকে হয়) টিপ পরে নেমেছিলাম। ব্যাপারটার মধ্যে কোনও মোটিভেশনের ব্যাপার ছিল না। বরং নিজের তৃপ্তির একটা ব্যাপার ছিল। সাইনা দেখি সব সময় রিস্টওয়াচ পরে খেলে। শুনেছি, ওরও নাকি হাতে ঘড়ি বেঁধে খেলতে ভাল লাগে। যার সঙ্গে অবশ্যই খেলার স্ট্র্যাটেজি-ট্যাকটিক্সের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে সাইনাদের প্রজন্মে টিভি, ডিভিডি থাকায় ওর ব্যাডমিন্টন কিটসে হিন্দি সিনেমার ডিভিডি থাকে। হোটেলে অবসর সময়ে দেখে। সেটাই স্বাভাবিক। আমাদের সময়ের মতো তো আর বাইরে খেলতে গিয়ে হোটেলে নিজের জামাকাপড় কাঁচা থেকে ঘর পরিষ্কার রাখতে হয় না সাইনা-সিন্ধুদের! কোর্টের বাইরে আমি হয় টিমমেটদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, না হয় হোটেলে খেয়েদেয়ে ঘুমোতাম।
তবে সিন্ধুর যেন আজ কোর্টে ঘুম কেড়ে নিয়েছিল সাইনা। অলরাউন্ড গেম খেলেছে। যার সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে সিন্ধু প্রচুর আনফোসর্ড এরর করে ম্যাচ থেকে প্রায় হারিয়ে গেল। এটা ওকে শুধরোতে হবে। একবার চাপে পড়লে আর কিছুতেই তার থেকে বেরোতে পারে না। আইবিএলে দু’বারই সিন্ধুকে হারিয়ে সাইনা বুঝিয়ে দিল, দিদি-র ক্লাসে পৌঁছতে এখনও অনেকটা পথ পেরোতে হবে বোন-কে।
সাইনার সাত শিকার
১. পিভি সিন্ধু- ২১-১৯, ২১-৮
২. অরুন্ধতী পান্থাওয়ানে- ২১-৬,২১-৮
৩. জুলিয়েন শেঙ্ক- ২১-১৭, ২০-২১,১১-৬
৪. পি সি তুলসী- ২১-৭ , ২১-১০
৫. জিং তাই জু- ২১-১৭, ১৪-২১, ১১-৮
৬. জুলিয়েন শেঙ্ক- ২১-১০, ১৯-২১, ১১-৮
৭. পিভি সিন্ধু- ২১-১৫,২১-৭
সাইনাকে সেমিফাইনালের মতো ফাইনালেও মিক্সড ডাবলসে রেখেছিল হায়দরাবাদ। এবং সে দিনের মতো আজও ওকে দ্বিতীয়বার কোর্টে নামতে হল না। তার আগেই সাইনার দল ‘টাই’ ৩-১ জিতে নেওয়ায় শেষ ম্যাচের দরকারই পড়ল না। ফাইনালে সাইনা-সিন্ধু লড়াই নিয়ে দেশজোড়া যতই হাইপ উঠুক, ‘প্লেয়ার অব দ্য ফাইনাল’ কিন্তু জয়রাম। মুম্বইয়ের ছেলে। নিজের শহরে মোক্ষম ম্যাচে (পুরুষদের দ্বিতীয় সিঙ্গলস) জ্বলে উঠে গুরুসাইকে এক গেম পিছিয়ে থেকেও ১০-২১, ২১-১৭, ১১-৭ হারিয়ে সাইনার হায়দরাবাদকে প্রথম আইবিএল চ্যাম্পিয়নের ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকার চেক (ব্যাডমিন্টন দুনিয়ার সর্বোচ্চ প্রাইজমানি) পাইয়ে দিল।
তবে তার আগে পুরুষদের ডাবলসও দুর্দান্ত বার করে নিয়েছিল সাইনার দলের মালয়েশিয়ান জুড়ি গো-লিম। ফাইনালের আগে পর্যন্ত অপরাজিত আওয়াধি জুটি কিডো-বায়ে চূড়ান্ত লড়াইয়ে হেরে গেল ১৪-২১, ২১-১৩, ৪-১১। ওটাই আওয়াধির কাছে বিরাট ধাক্কা হয়ে গিয়েছে। ফাইনালের প্রথম ম্যাচে হায়দরাবাদের তাই প্লেয়ার তানংসাক-ও টুর্নামেন্টে প্রথম হারে। কিন্তু তাইল্যান্ড ওপেন জয়ী শ্রীকান্তের সেই জয় কাজে এল না। টুর্নামেন্টে একমাত্র অপরাজিত থেকে গেল সাইনা-ই। সাতে সাত! তার পরে ‘প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট’ আর কে-ই বা হত!

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.