• পিয়ংইয়ং ও ওয়াশিংটন • উত্তর কোরিয়ায় গিয়ে ২০১২-র ডিসেম্বরে বন্দি হয়েছিলেন মার্কিন নাগরিক কেনেথ বে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁর সঙ্গে নাকি অত্যন্ত আপত্তিজনক সব জিনিসপত্র ছিল, উত্তর কোরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধতার স্পষ্ট প্রমাণ-সহ। বে নিজে যদিও বলছিলেন, তিনি ট্যুর অপারেটর হিসেবে উত্তর কোরিয়ায় গিয়েছিলেন, পিয়ংইয়ং-এর মতে, বে-র ব্যাগ থেকে মিলেছে একটি সিডি, যাতে খুবই গোলমেলে তথ্যের সমাহার! ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক-এর একটি প্রোগ্রামের কপিও তাঁর কাছে মিলেছে, উত্তর কোরিয়ার দমনমূলক রাষ্ট্রের বিরোধিতার ইঙ্গিত সেটায়, প্রোগ্রামের নাম ‘‘ডোন্ট টেল মাই মাদার দ্যাট আই অ্যাম ইন নর্থ কোরিয়া”! সুতরাং চটপট সিদ্ধান্ত বে-কে জেলে পোরা হবে: কঠিন সশ্রম কারাদণ্ড। ১৫ বছরের জন্য।
হইহই পড়ে দিয়েছে মার্কিন দুনিয়ায়। এত বড় দুঃসাহস পিয়ংইয়ং-এর? কী প্রমাণ দেখাতে পারে ওরা বে-র বিরুদ্ধে? হইহই আরও বাড়ল যখন খবর এল, ব্লাডশুগারের রোগী বে সশ্রম কারাদণ্ডের চাপ সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, ৫০ পাউন্ড ওজন কমে গিয়েছে তাঁর মাস তিনেকের মধ্যে।
সুতরাং মার্কিন সরকার পিয়ংইয়ং-এ সরকারি দূত পাঠাতে মনস্থ করে: মানবাধিকার-বিশেষজ্ঞ বব কিং সেই দূত। টোকিয়ো থেকেই কিং ওয়াশিংটনকে জানান, না, বহু অনুরোধ সত্ত্বেও বে-কে মুক্ত করার কোনও পদক্ষেপই নিচ্ছে না কিম জং-আন-এর সরকার। গত শুক্রবার টোকিয়ো থেকে বজ্রাঘাত: বব কিংকে উত্তর কোরিয়া সে দেশে ঢোকার যে অনুমতিপত্র দিয়েছিল, সেটা প্রত্যাহার করে নিল। কোনও মার্কিন নাগরিক এই মুহূর্তে নতুন করে কোরিয়ায় ঢুকতে পারবেন না কোরিয়া সরকারের বিশেষ অনুমতি ছাড়া। ওয়াশিংটনের স্বভাবতই মাথায় হাত, খবর শুনে। — যুদ্ধ কি কেবল গোলাগুলিতেই হয়?
|
রাষ্ট্রপুঞ্জের লঙ্কা-কাণ্ড |
• কলম্বো • দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক হলে কী হবে, আসলে তো জন্মপরিচয়ে ভারতীয়, তাও আবার তামিল! নভি পিল্লাই-এর তামিল পরিচয়ই তাঁকে ঘোর বিপদে ফেলল। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিভাগের উচ্চপদস্থ এই অফিশিয়াল শ্রীলঙ্কায় এসেছিলেন একটা বিশেষ কাজ নিয়ে। ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কা সরকার তামিল বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যে ঐতিহাসিক অভিযান চালায়, সেই সময়কার সরকারি মানবাধিকার-লঙ্ঘনের বিষয়টি তদন্ত করতে। ফিরে গিয়ে রিপোর্ট পেশ করার কথা তাঁর। |
এ দিকে, ফেরার আগেই শ্রীলঙ্কা সরকারের ক্যাবিনেট মন্ত্রী বীরহংস-র গুরুতর অভিযোগ, নভি তাঁর তামিল পরিচয়ের কারণে তামিল ‘সন্ত্রাসবাদী’দের প্রতি অকারণ সহানুভূতিপ্রবণ, তিনি নাকি বিদ্রোহীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন! প্রবল উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ ও শ্রীলঙ্কার আদানপ্রদান। শ্রীলঙ্কা এই ধরনের অভিযোগ তুলতে সিদ্ধহস্ত চির কালই। তবে কিনা, রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফেই বা কোনও তামিলকে শ্রীলঙ্কা-তামিল সংঘর্ষের তদন্ত করতে পাঠানোটা আশ্চর্য নয় কি?
|
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে মহা বিপাকে ফেলে দিয়েছেন বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা এড মিলিব্যান্ড। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিদ্রোহ দমনে রাসায়নিক মারণ-গ্যাস ব্যবহার করে বহু শিশু সহ কয়েকশো নাগরিককে হত্যা করেছেন, সুতরাং এ বার আসাদকে নিরস্ত করতে প্রয়োজনে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী হিসেবে) সামরিক আক্রমণও করতে হবে— ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই প্রস্তাব পেশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। বৃহস্পতিবার ২৮৫-২৭২ ভোটে সেই প্রস্তাব নাকচ হয়েছে। ১৯৮২ সালে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ফকল্যান্ডস যুদ্ধে এবং ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর শরিক হিসেবে ইরাক আক্রমণের প্রশ্নে অনেক তর্কের পরে শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার সামরিক অভিযানের পক্ষে পার্লামেন্টের সমর্থন পেয়েছিল। ক্যামেরন নিশ্চিন্ত ছিলেন, এ বারেও সেই ইতিহাসের ব্যতিক্রম হবে না, কারণ বিরোধী নেতা মিলিব্যান্ড কয়েক দিন আগে পর্যন্ত সিরিয়া অভিযানে যোগ দেওয়ার পক্ষেই ছিলেন। কিন্তু দলের একটা বড় অংশের আপত্তি এবং সাধারণ ভাবে পশ্চিম এশিয়ায় আরও একটা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার বিরুদ্ধে প্রবল জনমত শেষ পর্যন্ত তাঁকে অবস্থান পালটাতে বাধ্য করেছে। মিলিব্যান্ড এখন বলেছেন, আসাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অবশ্যই জরুরি, কিন্তু তিনি যে এ বার সত্যই রাসায়নিক গ্যাস প্রয়োগ করেছেন, তার যথেষ্ট প্রমাণ যতক্ষণ না পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ সিরিয়া আক্রমণ করা উচিত নয়, বিশেষ করে সেই আক্রমণের পরিণাম বিচার না করে অভিযানে যোগ দেওয়া অন্যায় হবে। অবশ্য লেবার একা নয়, ক্যামেরনের নিজের কনজার্ভেটিভ পার্টির ত্রিশ জন এবং তাঁর সরকারের শরিক লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের ন’জন সাংসদও তাঁর প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
এই ভরাডুবির পরে ক্যামেরন সামনের সপ্তাহে এ বিষয়ে আবার ভোট নেবেন। তাঁর আশা, ইতিমধ্যে আসাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ মিলবে। |