দু’পা দূরেই তাঁর বাড়ি। দুপুরবেলা দোকান বন্ধ করে খেতে যাচ্ছিলেন তিনি। রাস্তা পার হয়ে বাড়ির গলিতে ঢুকতে গিয়েই দেখলেন, সেখানে দাঁড়িয়ে একটি টেম্পো। আর সেটির ঠিক পিছনে খানিক এগিয়ে-পিছিয়ে নিয়ে একটি লরি দাঁড় করাচ্ছিলেন চালক। কিন্তু লরিটির দাঁড়ানোর অপেক্ষা না-করেই লরি ও টেম্পোর মাঝখান দিয়ে গলির মধ্যে ঢুকতে গিয়েছিলেন ওই যুবক। ঠিক সেই সময়েই সামনের দিকে এগিয়ে আসে লরিটি। টেম্পো ও লরির মাঝে পিষে যান তিনি।
শনিবার দুপুর ১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকার শ্রীমানি মার্কেটের উল্টো দিকে, কৈলাস বসু স্ট্রিটে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত বিশাল জায়সবাল (৩৩) ওই এলাকারই বাসিন্দা। রক্তাক্ত অবস্থায় ওই যুবককে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনার পরে চালক পালিয়ে গেলেও লরিটিকে আটক করা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ দিন এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, কৈলাস বসু স্ট্রিটে লোহার গ্রিল তৈরির দোকান রয়েছে বিশালের। রাস্তার উল্টো দিকের গলির ভিতরেই তাঁর বাড়ি। বছর দু’য়েকের একটি মেয়ে রয়েছে তাঁর। বিশালের ভাই সঞ্জিত এ দিন বলেন, “মাত্র তিন বছর হল দাদার বিয়ে হয়েছে। পরিবারের অনেক দায়িত্ব ছিল ওঁর উপরে।”
এই ঘটনায় কৈলাস বসু স্ট্রিটের এক দিক জুড়ে বেআইনি ভাবে লরি এবং টেম্পো দাঁড় করানো নিয়ে এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগে সরব হয়েছেন। এমনই এক জন মনোজ গুপ্ত বলেন, “ব্যবসায়ীদের পাড়া। রাস্তার দু’পাশেই দোকান। সব সময়েই জিনিস নিয়ে যেতে বা পৌঁছে দিতে লরি ঢোকে। কিন্তু সেগুলির মধ্যে কয়েকটি ২৪ ঘণ্টার উপরে রাস্তার এক দিক আটকে দাঁড়িয়ে থাকে। এক-একটি আবার দু’তিন দিনও দাঁড়িয়ে থাকে।” |
ঘটনার পরে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তখনও রাস্তার এক পাশে সার দিয়ে দাঁড় করানো লরি, টেম্পো, ম্যাটাডর। তবে দুর্ঘটনার পরে এলাকার বাসিন্দারা শান্তিপূর্ণ ভাবেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এলাকায় যে সকলের চোখের সামনেই বেআইনি ভাবে গাড়ি রাখা হচ্ছে, তার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন তাঁরা। এলাকাবাসীরা জানান, এর আগেও কয়েক বার একই ভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে, লরির ধাক্কায় এর আগে কারও মৃত্যু হয়নি।
বাসিন্দাদের দাবি, অবৈধ ভাবে রাস্তার এক পাশ আটকে লরি, টেম্পো দাঁড় করিয়ে রাখার বিষয়টি নিয়ে একাধিক বার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজকুমার গুপ্তকে জানানো হয়েছে। কাউন্সিলর এ দিন বলেন, “স্থানীয়দের অভিযোগ পেয়েছি। লরি দাঁড়িয়ে থাকায় ওই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচলে খুব সমস্যা হয়। অনেক বার পুলিশের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তবে প্রশাসনের তরফে এই সমস্যার কোনও কিনারা করা হয়নি।”
কলকাতা পুলিশের ডি সি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “আমরা এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। অবৈধ ভাবে দাঁড় করিয়ে রাখার লরির বিরুদ্ধে আগেও আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি এবং তা বন্ধ করতে ভবিষ্যতে আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |