রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে তার প্রাথমিক দায় বর্তাবে সংশ্লিষ্ট থানা এবং ট্রাফিক গার্ডের ও সি-দের উপরেই। শনিবার ক্রাইম কনফারেন্সে কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ এ কথা জানিয়েছেন। সুরজিৎবাবু বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা যে ঘটছে, সে সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল। এর পাশাপাশি তিনি নির্দেশ দেন, রেসকোর্সে শিশু-হত্যার ঘটনাটির তদন্ত এমন ভাবে করতে হবে, যাতে তা সারা দেশের সামনে মডেল হয়ে ওঠে।
লালবাজার সূত্রের খবর, শনিবার ক্রাইম কনফারেন্সে সি পি সাফ জানিয়ে দেন, ঘুষ নেওয়ার মতো ঘটনার ব্যাপারে থানা এবং ট্রাফিক গার্ডের ও সি-দেরই নজর রাখতে হবে। কিছু ঘটলে তাঁদের উপরেই দায় বর্তাবে। একটি খারাপ কাজ যে পুলিশের অনেক ভাল কাজকে ঢেকে দেয়, সে কথাও সুরজিৎবাবু এ দিন তাঁর বাহিনীকে জানিয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে রেসকোর্স এলাকায় আড়াই বছরের শিশুকে যৌন নিগ্রহের পরে শ্বাসরোধ করে খুনের ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যাতে দ্রুত সুনিশ্চিত করা যায়, তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখাকে সিপি নির্দেশ দিয়েছেন।
শুক্রবার লঞ্চ থেকে মাঝগঙ্গায় পড়ে যাওয়া এক ব্যক্তিকে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে বাঁচান কলকাতা পুলিশের এক কনস্টেবল। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ঘটনার কথা তুলে সুরজিৎবাবু জানান, এত ভাল কাজের পাশাপাশি কারও কারও খারাপ কাজের জন্য গোটা বাহিনীর বদনাম হচ্ছে। তার পরেই তিনি রাজপথে ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ নেওয়ার মতো ঘটনা বন্ধে থানা ও ট্রাফিক গার্ডের ও সি-দের দায়িত্ব দেন।
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শুক্রবার কলকাতা পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা পুলিশকে দেশের মধ্যে এক নম্বর হতে বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই আশা পূরণের জন্য এ দিন ক্রাইম কনফারেন্সে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা থেকে অপরাধ দমন, এমনকী জলাশয় ভরাটের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সি পি।
গত ২১ জুলাই রেসকোর্স এলাকায় আড়াই বছরের এক শিশুর দেহ পাওয়া যায়। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, আড়াই বছরের ওই শিশুটিকে যৌন-নিগ্রহের পরে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। অমানুষিক অত্যাচারে শিশুটির পাঁজরের তিনটি হাড় ভেঙে যায়। অভিযুক্ত সুরেশ পাসোয়ানকে বিহারের বৈশালী থেকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই যুবক রেসকোর্সেরই সহিস। এতে সন্তুষ্ট না-থেকে সুরজিৎবাবু অতি দ্রুত তদন্ত শেষ করে আদালতে চার্জশিট দিতে তদন্তকারীদের নির্দেশ দেন বলে লালবাজার সূত্রের খবর। তিনি এ দিন এ বিষয়ে তদন্তকারীদের কাছে খোঁজও নেন।
কেন তিনি মামলাটিকে এত গুরুত্ব দিচ্ছেন? কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “এটি একটি জঘন্য অপরাধ। আমরা চাই, ওই মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করে বিচার-প্রক্রিয়া শুরু হোক। যাতে ভবিষ্যতে তা সারা দেশের সামনে মডেল হয়ে ওঠে।”
এখন এই তদন্তের কী অবস্থা?
লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রের খবর, তদন্ত এখন শেষ পর্যায়ে। খুব শীঘ্রই যাতে চার্জশিট জমা দেওয়া যায়, সে কাজ চলছে। এখনও ওই মামলার ফরেন্সিক রিপোর্ট গোয়েন্দারা পাননি। তদন্তকারীদের দাবি, ওই রিপোর্ট পাওয়া গেলেই খুন, ধর্ষণ ও শিশুদের যৌন নির্যাতন থেকে রক্ষা করার আইন অনুযায়ী আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে। তদন্তকারীদের ধারণা, সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই ওই ফরেন্সিক রিপোর্ট চলে আসবে। |