ভারতীয়দের দেশে ফেরার বার্তা মন্ত্রকের
আক্রমণে অনড় ওবামা, প্রস্তুতি সিরিয়ারও
সিরিয়া নিয়ে আমেরিকা যে সুর নরম করছে না, গত কাল মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরির বিবৃতিতেই টের পাওয়া গিয়েছিল। আজ তাতে সিলমোহর দিলেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বললেন, “আমি মনে করি রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করার অপরাধে সিরিয়ায় সেনা অভিযান চালানো উচিত।” তবে সেই অভিযানে সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার আগে মার্কিন কংগ্রেসের মতামত জেনে নেবেন ওবামা। সিরিয়ায় যুদ্ধের দামামা বাজতে পারে, এই আশঙ্কায় ভারতীয়দের ইতিমধ্যে দেশে ফিরে আসতে বার্তা দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।
ওবামা আজ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘সীমিত’ হামলার পথেই হাঁটবে ওয়াশিংটন। তবে সিরিয়ায় মাটিতে এখনই পা রাখবে না মার্কিন সেনা। কোনও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপও করবে না। প্রশ্ন উঠছে, রাষ্ট্রপুঞ্জ তো বার বার করে সতর্ক করে দিয়েছে, তদন্তকারী দলের রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত কোনও দেশ যেন সিরিয়াকে আক্রমণ না করে। সে ক্ষেত্রে আমেরিকা যদি হামলা করে, তা হলে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হবে। তবে ওবামা-সরকারের যুক্তি, রাশিয়া যদি সিরিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে আমেরিকার উপর হামলা করতে প্রস্তুত হয়, তা হলে তারা কেন হাত গুটিয়ে থাকবে! রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্য রাশিয়া, চিন, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও আমেরিকা। জন কেরির বক্তব্য, “নিরাপত্তা পরিষদের ভিতর থেকেই রাশিয়া বাধা দেবে। সুতরাং রাষ্ট্রপুঞ্জের কথা শুনে চলা অসম্ভব।
হামলা করতে পারে আমেরিকা। ট্যাঙ্কের হাল খতিয়ে দেখছে আসাদের সেনা। ছবি: এএফপি
এত সব বিতর্কের মধ্যেই রাসায়নিক হানা হয়েছে কি না, সে তদন্ত সেরে সিরিয়া ছেড়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের তদন্তকারী দল। রিপোর্ট ঘোষণা করতে এক সপ্তাহ মতো সময় লাগবে, জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, তিনি নিজে নিরাপত্তা পরিষদে রিপোর্ট ঘোষণা করবেন। যদিও মার্কিন নেতারা জানিয়েছেন, সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলা যে হয়েছিল, তার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। দামাস্কাসের এক শীর্ষকর্তাই সে প্রমাণ দিয়েছেন। যদিও সিরিয়ার এক টিভি চ্যানেলের দাবি, “সপ্তাহ খানেক আগে সন্ত্রাসবাদীদের প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতেই আমেরিকা এ সব বলছে।” রাশিয়া বরাবরই সিরিয়ার সমর্থনে। এ দিন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন আমেরিকার দিকে। পুতিন বলেন, “এক কথায় জঘন্য। যদি কোনও প্রমাণ থেকে থাকে, তা হলে ওদের দেখানো উচিত। যদি ওরা না দেখাতে পারে, তার মানে কোনও প্রমাণ নেই।” আসাদকে সমর্থন করে তাঁর বক্তব্য, ২১ অগস্টের হামলার জন্য আসাদ জমানাকে দোষী সাব্যস্ত করার কোনও মানেই হয় না। “সিরিয়া সরকার এমনিতেই চাপে রয়েছে... তার উপর যারা দেশটার উপর হামলা করতে চাইছে, তাদের হাতেই তুরুপের তাস তুলে দেওয়া মূর্খতা।” ব্রিটেন তো কালই পুরনো অবস্থান থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। সিরিয়া-প্রশ্নে পার্লামেন্টের ভোটে ডেভিড ক্যামেরনের সরকার ২৮৫-২৭২ ভোটে হেরে যায়। পরে ক্যামেরন বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা উচিত। কিন্তু হাউস অফ কমন্সের অবস্থানকেও সম্মান করি।” এমন কথাও ওঠে, ক্যামেরন কি এ বার ক্ষমা চেয়ে নেবেন ওবামার কাছে? দু’দেশের সম্পর্কে চিড় ধরতে পারে, এমন আশঙ্কার কথাও শোনা যায়। পরে অবশ্য ফোনে কথা হয় ওবামা-ক্যামেরনের। শোনা গিয়েছে, ক্যামেরন সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন ওবামাকে। মার্কিন প্রেসিডেন্টও ব্রিটেনের মানুষের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছেন।
অর্থাৎ এই মুহূর্তের সমীকরণ বলছে, আমেরিকার পাশে এক মাত্র ফ্রান্স। ব্রিটেন নেই কোনও পাশেই। রাশিয়া ও চিন সিরিয়ার সমর্থনে। আমেরিকা অবশ্য এখনও সিরিয়ার বিরুদ্ধে মৈত্রী-জোটের আশায়। জার্মানি-কানাডা কোনও পক্ষেই নাক গলাতে চায় না। আরব দেশগুলোয় নিজেদের মধ্যেই বিভেদ। বেশিরভাগ লোকই চায় সিরিয়ার প্রসিডেন্ট বাশার-আল আসাদের পতন। তবে ওই পর্যন্তই। কূটনীতিকদের মতে, তাদের নিজেদের অনেক সমস্যা। সে সব মিটিয়ে সিরিয়ার বিষয়ে নজর দেওয়ার ইচ্ছা খুব কম লোকেরই আছে।
জল অনেক দূর গড়াতে পারে আশঙ্কায়, পরিস্থিতি থেকে দূরে থাকতে চায় ভারতও। এ দিন সে কথা জানালেন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। সিরিয়ার দূতাবাস থেকে ভারতীয়দের দেশে ফিরে আসতে বলেছেন তিনি। শুধুমাত্র পাঁচ জন অফিসার আপাতত থেকে যাবেন সে দেশে। তাঁদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হবে, জানানো হয়েছে মন্ত্রকের তরফে।
তবে পরিস্থিতি যে দিকেই গড়াক না কেন, সিরিয়া তৈরি। সে কথা জানালেন আসাদেরই সেনা অফিসার। বললেন, “আশঙ্কা করছি, যে কোনও মুহূর্তে আঘাত হানতে পারে আমেরিকা। প্রত্যাঘাতে আমরাও প্রস্তুত।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.