সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলাই প্রমাণিত, দাবি আমেরিকার
সিরিয়ায় যে রাসায়নিক অস্ত্রই ব্যবহার করা হয়েছিল, তার স্পষ্ট এবং অনস্বীকার্য প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি করল আমেরিকা। মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি আজ তাঁর বিবৃতিতে এ কথা জানিয়ে বলেন, আসাদ সরকার নিজের দেশের মানুষের উপরে রাসায়নিক অস্ত্রের যে নির্বিচার হামলা চালিয়েছে, তা এক কথায় অকল্পনীয়। এতে ৪০০ শিশু-সহ মোট ১৮০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলেও আমেরিকার নিজস্ত তদন্তে দাবি।
রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট আসার আগেই মার্কিন প্রশাসনের তরফে এই বিবৃতি আসায় একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেটা হল, সিরিয়ার ব্যাপারে সুর নরম করার রাস্তায় আমেরিকা হাঁটবে না। দামাস্কাসে সেনা অভিযান চালানোর প্রস্তাব ব্রিটেনের পার্লামেন্টে খারিজ হয়ে গেলেও আমেরিকা সম্ভবত পিছিয়ে আসবে না।
শুক্রবার সিরিয়া নিয়ে বিবৃতি দেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি। ছবি: এএফপি।
মার্কিন প্রশাসনের দাবি, ব্রিটেনকে পাশে না পেলেও তারা আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমেই সিরিয়ায় নিয়ন্ত্রিত, সীমিত সেনা তৎপরতার কথা ভাববে। মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব চাক হেগেল বলেছেন, “ব্রিটেনের সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলবেই। যা-ই হোক, তা আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কথা মাথায় রেখেই হবে।” ফ্রান্স এখনও অভিযানের পক্ষেই। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ বলছেন, “দামাস্কাস সরকারের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রিত, দৃঢ় পদক্ষেপ চায় ফ্রান্স। আগামী বুধবারই সেনা ঢুকতে পারে সে দেশে।”
এ দিন ছুটির মরসুমেও জরুরি ভিত্তিতে সাত ঘণ্টা ধরে পার্লামেন্টের অধিবেশন হয় ব্রিটেনে। সিরিয়া-প্রশ্নে ডেভিড ক্যামেরনের সরকার ২৮৫-২৭২ ভোটে হেরে যায়। পরে ক্যামেরন বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা উচিত। কিন্তু হাউস অফ কমন্সের অবস্থানকেও সম্মান করি।”
ব্রিটেনের এই সিদ্ধান্তে আমেরিকার সঙ্গে সে দেশের সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়বে কি না, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষাসচিব ফিলিপ হ্যামন্ড বলেছেন, তাদের পরম বন্ধু আমেরিকা হয়তো এই সিদ্ধান্তে কিছুটা হতাশ হবে। কিন্তু তিনি মনে করেন না, ব্রিটেন সরে যাচ্ছে বলে আমেরিকা সিরিয়া অভিযানের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত দু’দেশের সম্পর্কে কিছু চাপ তৈরি করতে পারে বলেও মত তাঁর।
যদিও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে হেরে যাওয়ার পরে বলেছেন, ব্রিটেনবাসীর ইচ্ছের মর্যাদা দিতেই হত। তাঁর কথায়, “আমেরিকার জনতা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নিশ্চয়ই বিষয়টা বুঝবেন।” এ নিয়ে ওবামার কাছে কি তিনি ক্ষমা চাইবেন? ক্যামেরন বলেন, “পার্লামেন্টে বিতর্কের পরে ওবামার সঙ্গে আর কথা হয়নি। হয়তো দু’এক দিনের মধ্যেই হবে। তবে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন নেই।”
মার্কিন প্রশাসনের অফিসাররা আপাতত যে ইঙ্গিত দিচ্ছেন তাতে এটা পরিষ্কার যে মিত্র দেশগুলির সমর্থন না পেলেও আমেরিকা সিরিয়ায় সীমিত সেনা তৎপরতা থেকে পিছু হটবে না।
যুদ্ধ চাই না। প্রতিবাদ সান ফ্রান্সিসকোয়। ছবি: রয়টার্স।
কিন্তু আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, সিরিয়া অভিযানের প্রশ্নে আমেরিকার ‘ধীরে চলো’-র নীতি থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট। ইরাক-যুদ্ধের স্মৃতি তাড়া করছে ওবামা প্রশাসনকে। বিশেষত প্রথম বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ার সময় ওবামাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “ইরাকের মতো ভুল যেন আমরা আর না করি।” ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে তিনি যে ভাবে সরব ছিলেন, আজ সিরিয়া নিয়ে মার্কিন তৎপরতায় বিরোধীরা সেই কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন ওবামাকে।
এই সপ্তাহেই সিরিয়ার সমর্থক দেশ রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রকের তরফে শোনা গিয়েছে, “দশ বছর আগের কথা মনে পড়ছে। ইরাকিদের কাছে গণ-হত্যা চালানোর মতো শক্তিশালী অস্ত্র রয়েছে এমন ভুল তথ্যের যুক্তি দেখিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের তোয়াক্কা না করে আমেরিকা যে পথে হেঁটেছিল, তার ফলটা কিন্তু সবারই জানা।” যদিও ওবামা প্রশাসন এ সবে কান দিচ্ছে না। মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র মেরি হার্ফ বলেছেন, “ইরাক এবং সিরিয়া কোনও ভাবেই তুলনায় আসে না।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.