ফের টুকলির অভিযোগে ইটাহারের ডক্টর মেঘনাদ সাহা কলেজে এক ছাত্রী সহ ১০ জনের পরীক্ষা বাতিল করা হল শুক্রবার। সেই মঙ্গলবার থেকে এই কলেজে টুকলি করাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা রয়েছে। জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি তথা জেলা পরিষদ সদস্য গৌতম পালের স্ত্রী ওই দিন টুকলি করছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। তাঁর খাতা কেড়ে নেন অধ্যক্ষা স্বপ্না মুখোপাধ্যায়। তারপরে গৌতমবাবু ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা বাবুসোনা মোহান্ত এবং তাঁদের অনুগামীরা স্বপ্নাদেবী, বাংলার শিক্ষক সুদেবকুমার রায়, রসায়নের শিক্ষিকা সেঁজুতি দে ও শিক্ষাকর্মী জাফর সাদেককে মারধরের অভিযোগ ওঠে। অধ্যক্ষা সহ তিন শিক্ষক শিক্ষিকা ও ওই শিক্ষাকর্মীর বিরুদ্ধেও ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ করা হয়। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে ইটাহার থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ জামিন অযোগ্য ধারায় দুটি মামলা শুরু করে। এরপর বুধবার কলেজ বন্ধ ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার নিরাপত্তার দাবিতে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষিকারা প্রথমার্ধের পরীক্ষায় পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেননি। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক সনাতন দাসের নেতৃত্বে চার সদস্যের ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা কলেজে গিয়ে তাঁরাই প্রথমার্ধের পরীক্ষা নেওয়ার কাজ শুরু করেন। ওই দিন সনাতনবাবুরা টুকলির অভিযোগে প্রথমার্ধে ঐচ্ছিক বাংলা ও ইংরেজির ছয় পরীক্ষার্থীকে ও দ্বিতীয়ার্ধে সমাজবিদ্যার ১৯ জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করে দেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে অভিযুক্ত পরীক্ষার্থীদের তর্কাতর্কি ও ধাক্কাধাক্কিও শুরু হয়ে যায়। তারপরে এদিনও টুকলির অভিযোগে ১০ জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করা হয়। |
কেন মেঘনাদ সাহা কলেজে টোকাটুকি অব্যাহত, সেই সম্বন্ধে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “তা হলে দেখা যাচ্ছে টোকাটুকি হলেও তা আমরা কঠোর ভাবে মোকাবিলা করছি। যা আমাদের রাজ্যে বহুদিন হয়নি। এটাই সর্বত্র হবে।” মঙ্গলবার ওই কলেজে কী হয়েছিল, তা জানিয়ে এ দিন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতরের তরফে। মন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, “ঘটনার কথা জানিয়ে একটি রিপোর্ট জমা পড়েছে। এ ব্যাপারে যা বলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে বলব।”
ওই কলেজের পরীক্ষার্থীদের একাংশের মধ্যে টুকলি করার প্রবণতা কমছে না দেখে এ বারে ওই কলেজ থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রটিকেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার ওই কলেজে প্রথমার্ধে দ্বিতীয় বর্ষের পাস কোর্সের পড়ুয়াদের ঐচ্ছিক বাংলা ও ইংরেজির পঞ্চম পত্রের পরীক্ষা হয়। বিরাট পুলিশি নিরাপত্তায় কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকারাই ওই পরীক্ষায় পরিদর্শকের দায়িত্ব সামলান। প্রথমার্ধের পরীক্ষা নির্বিঘ্নে শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে বেলা ২টা থেকে প্রথম বর্ষের পাস কোর্সের পড়ুয়াদের সমাজবিদ্যার তৃতীয় পত্রের পরীক্ষা শুরু হয়। সওয়া তিনটে নাগাদ কলেজে হাজির হন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক সনাতন দাসের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। তাঁরা কলেজে ঢুকে অধ্যক্ষার সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা বলার পর সটান পর পর কয়েকটি পরীক্ষার হলে ঢুকে পড়েন। টুকলি করার অভিযোগে এক ছাত্রী সহ ১০ জনের পরীক্ষা বাতিল করেন তাঁরা।
সনাতনবাবু বলেন, “যা পরিস্থিতি তাতে আমরা পরীক্ষাকেন্দ্রটিকে অন্যত্র সরানোর ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অচিন্ত্য বিশ্বাসের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।” কলেজের অধ্যক্ষা স্বপ্নাদেবীর দাবি, “নিগৃহীত হওয়ার আতঙ্কে শিক্ষক শিক্ষিকারা টুকলি ধরতে চাইছেন না।” তাঁর কথায়, “টুকলি আটকাতে গেলেই নিগৃহীত হয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসতে হবে বলে সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকাদের মধ্যে একটি ধারণার সৃষ্টি হয়েছে।” টিচার্স কাউন্সিলের সম্পাদক আলাউদ্দিন শেখ জানান, শিক্ষক শিক্ষিকাদের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠ ভাবে পরীক্ষা শেষ করতে পরীক্ষার বাকি দিনগুলিতে কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের হাজির থাকার দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, জেলা পুলিশের কাছে কলেজ চত্বরে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। সনাতনবাবু জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই কলেজের সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর নজর রেখেছে।
|