দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে অনুদান পৌঁছাচ্ছে না জলপাইগুড়ি জেলার শিশু শ্রমিক স্কুলগুলিতে। স্কুল চালানোর খরচ না পেয়ে বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে শ্রম দফতরের কাছে। শ্রম দফতর সূত্রের খবর, শুধু জলপাইগুড়ি নয়, গোটা উত্তরবঙ্গেরই শিশু শ্রমিক স্কুলের অনুদান বন্ধ। বরাদ্দের অভাবে জেলায় কত শিশু শ্রমিক রয়েছে তা খতিয়ে দেখার সমীক্ষাও গত ৮ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে বলে শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, যে শিশুরা শ্রমের বিনিময়ে রোজগার করে, তাদের শিক্ষার জন্য বিশেষ স্কুল তৈরি করা হয়েছে। প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত এই বিশেষ স্কুলগুলিতে পড়ানোর পরে সকলকে মূলস্রোতের স্কুলে ভর্তি করানোর নিয়ম রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় শিশু শ্রমিক প্রকল্পে তৈরি এই স্কুলে ৫০ জন করে ছাত্রছাত্রীর পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পরিচালাধীন স্কুলগুলির যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করে কেন্দ্রীয় সরকারই। প্রতিটি স্কুলে ২ জন শিক্ষক, একজন ভোকেশনাল প্রশিক্ষক, একজন করণিক এবং একজন পিওন রাখার কথা। সকলের বেতন মিলিয়ে প্রতিমাসে খরচ হয় ১৭ হাজার টাকা। স্কুলের আরও কিছু খরচ মিলিয়ে বছরে আড়াই লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়।
জেলায় শিশু শ্রমিকদের জন্য ১৯টি বিশেষ স্কুল রয়েছে। গত বছরের জানুয়ারি মাসের পরে জেলার কোনও স্কুলেই বরাদ্দ হয়নি। জেলার প্রতিটি স্কুল মিলিয়ে বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকার কাছাকাছি। শিশু শ্রমিক বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলার সহকারী শ্রমআধিকারিক আর্থার হোড়ো বলেন, “স্কুলের অনুদান বন্ধ হয়ে রয়েছে। দিল্লিতে গিয়ে দরবার করে এসেছি। প্রতিটি স্কুলের আয় ব্যায়ের হিসেব একাধিকবার পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি রাজ্য সরকারকেও জানানো হয়েছে।”
অনুদান না পেয়ে কী অবস্থায় চলছে শিশু শ্রমিকদের স্কুলগুলি? দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে অনুদান বন্ধ থাকায়, বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। কোনও ক্ষেত্রে আবার বেতন না পেয়ে কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে গিয়েছেন স্কুলের শিক্ষক-কর্মীরা। কয়েকটি স্কুলের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি নিজেরাই অর্ধেক বেতন দিয়ে স্কুল চালাচ্ছেন।. সামগ্রিক ভাবে অনুদান বন্ধের ফলে পড়ুয়ারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শহর লাগোয়া সুকান্তপল্লিতে শিশু শ্রমিকদের স্কুল চালানো একটি সংগঠন সিদ্ধির মুখপাত্র সুব্রত মজুমদার বলেন, “পরিকাঠামোর দিক থেকে সাধারণ স্কুলগুলির থেকে অনেকটাই পিছিয়ে। কয়েকটি সংগঠন অনুদান বন্ধ দেখে স্কুল পরিচালনা থেকেও সরে আসতে চাইছে। আমরা ধার করে চালাচ্ছি। কত দিন পারব জানি না।” |