আর্থিক সঙ্কটের ছায়া শিলিগুড়ি পুরসভায়
ভাঁড়ে মা ভবানি! বাস্তবেই শিলিগুড়ি পুরসভার পরিস্থিতি এখন এটাই।
বাজেট পাস নিয়ে বিতর্কের জেরে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে এই পুরসভায়। সরকারি বরাদ্দ মিলছে না। তার উপর গত ৯ মাস ধরে পুরসভার বোর্ড মিটিং হচ্ছে না। তার জেরে বিল্ডিং প্ল্যান পাস থেকে পার্কিংয়ের বরাত দেওয়ার মতো বিভিন্ন প্রক্রিয়া আটকে পড়েছে। বন্ধ হয়ে পড়েছে ওই সব ক্ষেত্র থেকে আয়। অথচ পুরসভা চালাতে প্রতি মাসে অস্থায়ী কর্মীদের বেতন, গাড়ির তেল খরচ, বিদুৎ বিলের মতো বিভিন্ন খাতে ব্যয় সামলাতে বিপুল অর্থ (প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা) প্রয়োজন হয়।
গত ২ মাস কোনও ক্রমে অস্থায়ী কর্মীদের বেতন এবং অন্যান্য খরচ চালানো হলেও বর্তমানে পুরসভার নিজস্ব তহবিল কার্যত ফাঁকা হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে যে টাকা রয়েছে তা অন্য খাতে খরচ করা যায় না। এই পরিস্থিতিতে সেপ্টেম্বর মাসে অস্থায়ী কর্মীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল-সহ অন্যান্য খরচ ঠিক মতো মেটানো যাবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন পুর কর্তৃপক্ষ। তার উপর বকেয়া পাওনার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন ঠিকাদাররা। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “সমস্যা মেটাতে আমরা চেষ্টা করছি। কিছু একটা ব্যবস্থা তো করতেই হবে।” পুর কর্তৃপক্ষ জানান, পুর দফতরে চিঠি দিয়ে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা তোলার আর্জি জানানো হয়েছে। বিভিন্ন বরো থেকে যে সমস্ত বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন করা হয় তার উপর জোর দিতে বলা হয়েছে। সম্পত্তি নামজারির শিবির করে অর্থ সংগ্রহের ভাবনা চিন্তা করছেন তাঁরা।
পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, পুরসভার নিজস্ব খাত থেকে যে খরচ হয় তার মধ্যে শুধুমাত্র অস্থায়ী কর্মীদের বেতন দিতে প্রতিমাসে দরকার প্রায় ৮৫ লক্ষ টাকা। তাঁদের সিংহভাগ সাফাই এবং পূর্ত বিভাগের কর্মী। বিদ্যুৎ বিল লাগে ৭৫ লক্ষ টাকা। তার মধ্যে জল সবরাহ দফতরের পাম্প চালাতে বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় ৪০ লক্ষ টাকা। সাফাইয়ের ট্রাক ভাড়া, মেয়র, পারিষদ এবং আধিকারিকদের গাড়ি ভাড়ার খরচ প্রতিমাসে ৪০ লক্ষ টাকার মতো। গাড়ির তেল খরচ লাগে প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা। কর্মীদের পেনশন খাতে ২৫ লক্ষ টাকা জমা দিতে হয় ফি মাসে। তা ছাড়াও রয়েছে পথবাতি, গাড়ির যন্ত্রাংশ কেনার মতো খরচ। তাতে মাসে গড়ে ১০ লক্ষ টাকা দরকার হয়। বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, বিধবাদের ভাতা এবং চাল দিতে খরচ হয় প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। অন্যান্য খরচে আরও প্রায় ১০ লক্ষ টাকা দরকার হয়।
আনুমানিক খরচ আনুমানিক আয়
অস্থায়ী কর্মীদের বেতন-৮৫ লক্ষ
বিদ্যুৎ-৭৫ লক্ষ
পেনশন খাতে ২৫ লক্ষ
ট্রাক, গাড়ি ভাড়া-৪০ লক্ষ
গাড়ির জ্বালানি-১৮ লক্ষ
বিভিন্ন কেনাকাটা-১০ লক্ষ
ভাতা/চাল ২০ লক্ষ
অন্যান্য খাতে-১০ লক্ষ
বরোতে বিল্ডিং প্ল্যান পাস-২০ লক্ষ
সম্পত্তি কর-৩০ লক্ষ
ট্রেড লাইসেন্স-৩০ লক্ষ
নামজারি-৫ লক্ষ
জল কর-২৫ লক্ষ
পার্কিং-১ লক্ষ ৭৫ হাজার
অতিথি নিবাস ভাড়া ও
অন্যান্য খরচ -৫ লক্ষ
স্থায়ী কর্মীদের বেতন নিয়ে সমস্যা নেই। সরকারি তহবিল থেকেই সেই বেতন সামাল দেওয়া হয়। কিন্তু পুরসভার নিজস্ব তহবিলের যা পরিস্থিতি তাতে অস্থায়ী কর্মীদের বেতন-সহ বিদ্যুৎ বিল, গাড়ি ভাড়া, জ্বালানি এসব খরচ কী করে সামলানো সম্ভব হতে তা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে।
পুরসভার নিজস্ব খাতে আয়ের একটা বড় উৎস বাড়ির নকশা অনুমোদন। মাসে তা থেকে ১ কোটি টাকার বেশি আয় আসে। তা ছাড়া ট্রেড লাইসেন্স, সম্পত্তিকর, নামজারি (মিউটেশন ফি), পার্কিং, জল কর, সেচপুল পরিষেবা, সরকারের তরফে পাওয়া প্রমোদ কর, অতিথি নিবাস ভাড়া-এর মতো বিষয়গুলি পুরসভার আয়ের অন্যান্য উৎস। সরকারি তরফে প্রতিমাসে অনুদান আসে। বাজেট পাস না হওয়ায় তা আসছে না। ট্রেড লাইসেন্স এবং সম্পত্তি কর সংগ্রহ প্রতি ক্ষেত্রে মাসে গড়ে ৩০ লক্ষ টাকা আস হয়। পার্কিং থেকে প্রতি তিন মাসে ৫ লক্ষের মতো আয় হয়। বর্তমানে পুরসভার নিজস্ব হতবিলে ৬০-৭০ লক্ষ টাকার মতো রয়েছে।
বোর্ড মিটিং না হওয়ায় বিডিং প্ল্যান পাশ হচ্ছে না। তার জেরে প্রায় ৯ কোটি টাকা পুরসভার লোকসান হয়েছে এই কয়েক মাসে। অগস্ট মাসে কোনও রকমে খরচ সামলানো হয়েছে। আর্থিক প্রতিবন্ধকতা না উঠলে এবং বোর্ড মিটিং না হলে সমস্যা আরও জটিল হবে বলেই কর্মী-আধিকারিকরা মনে করছেন।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.